নিতান্তই নাবালিকা। মেয়েবেলার হুটোপুটির দিন ফোরানোর আগেই কেউ সাতপাকে কেউ বা কলমা’র অনুশাসনে সংসারে জুতে গিয়েছে। সেই সব শীর্ণ মেয়েবেলা আরও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে প্রসবকালে। সরকারি পরিসংখ্যান দেখলে চমকে উঠতে হয়— ২০১৮, প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা, ১৭৫। স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট বলছে— বাড়িতে প্রসব এবং বাল্য বিবাহজনিত কারেই প্রসূতি মৃত্যুর এই উদ্বেগজনক হার। বাকিটা নির্বিকার গয়ংগচ্ছ জীবনচরিত।
দেড় বছর আগে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব সদলবলে ঘুরে গেছিলেন মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন হাসপাতাল। পরিস্থিতি সামাল দিতে খানিক উদ্বেগ প্রকাশ করে আশ্বাস দিয়েছিলেন, ‘এটা রুখতেই হবে!’
নির্দেশ পেয়ে, বাড়িতে প্রসবের হার বন্ধ করতে জেলায় বেশ কয়েকটি পিছিয়ে পড়া এলাকায় ডেলিভারি পয়েন্ট চালু করার ফতোয়া জারি হয়েছিল। দেড় বছর পেরিয়ে গিয়েছে, একটি ইটও পড়েনি।
স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা আক্ষেপ করছেন, ‘‘দিন আসে দিন যায়, পরিস্থিতি বদলায় না। শুধু প্রকল্প ঘোষণাই হয়!’’
আক্ষেপটা ফেলে দেওয়ার মতো নয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথাতেই উদ্বেগটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে, ‘‘বাড়িতে প্রসবয়ের অভ্যেস বদলাতে হবে যে করেই হোক।’’
খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, সুতির বহুতালির বৈষ্ণবডাঙা এবং পড়শি এলাকা উমরাপুরে বাড়িতে প্রসবের হার জেলায় সবচেয়ে বেশি। এই ব্যবস্থাটা বদলাতে না পারলে মায়েদের প্রসবকালীন মৃত্যুর হারও যে কমানো যাবে না, মেনে নিচ্ছেন তিনি।
সম্প্রতি সুতিতে স্বাস্থ্য দফতরের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে তাই সুতির স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কড়া সতর্ক বার্তা শুনিয়ে এসেছেন স্বাস্থ্য কর্তারা।
মাত্র মাস চারেক আগে কাজে যোগ দিয়েছেন সুতি ১ ব্লকের বিডিও রবীন্দ্রনাথ বারুই। উদ্বিগ্ন তিনিও। বলছেন, “আমি হতবাক। বহুতালি পঞ্চায়েতের ঝাড়খন্ড লাগোয়া একটি গ্রাম বৈষ্ণবডাঙা। সেখানে ৭০ শতাংশ প্রসূতির প্রসব হচ্ছে বাড়িতে। নিশ্চুপে মারাও যাচ্ছে অনেকে।’’
সুতি ১ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত মালাকার বলছেন, “বহুতালি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের এই হার থেকে বোঝা যাচ্ছে ওই এলাকায় হোম ডেলিভারির ব্যাপকতা কি ভয়ানক।
প্রত্যন্ত ওই এলাকায় বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণেই প্রসূতিদের দূরের সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে অনাগ্রহ।”
দিন কয়েক আগে বহুতালি স্বাস্থ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এক মাসে সেখানে প্রসব হয়েছে প্রায় ৯০টি শিশুর। মাস কয়েক আগে, রঘুনাথগঞ্জের বাড়ালা স্বাস্থ্য কেন্দ্র খোলায় সেখানে জন্ম হয়েছে ৮৯টি শিশুর। যা থেকে স্পষ্ট, ডেলিভারি পয়েন্ট না থাকায় হোম ডেলিভারিতেই বুক বেঁধে ছিলেন স্থানীয়রা।
জেলাশাসক পি উলাগানাথনের উদ্বেগ, সারা দেশের মধ্যে মুর্শিদাবাদে বাল্য বিবাহ সবচেয়ে বেশি। নাবালিকা বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলার মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে সুতির দু’টি ব্লক, ফরাক্কা, শমসেরগঞ্জ ও রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লক।
প্রসবকালীন অবস্থায় যে মায়েরা মারা গেছেন তাদের বেশির ভাগেরই বিয়ে হয়েছে কম বয়সে। সেই ভয়াবহ ছবিটা কাটবে কি করে? তারই উত্তর হাতড়াচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy