বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের গ্রেফতারে সরগরম তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র। — ফাইল চিত্র।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় মঙ্গলবার পলাশিপাড়ার বিধায়ক তথা প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বিধায়কের গ্রেফতার নিয়ে নানা মত মানিকের নির্বাচনী কেন্দ্রে। তাঁকে নিয়ে ক্ষোভের একটা সুর স্পষ্ট এলাকাবাসীর একাংশের মধ্যে। মানিক গ্রেফতার হতেই তৃণমূলকে আক্রমণ শানাচ্ছেন স্থানীয় সিপিএম এবং বিজেপি নেতৃত্ব। জেলার তৃণমূল নেতারা অবশ্য মানিককে নিয়ে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছেন।
নাকাশিপাড়ার কালীগঞ্জ ব্লকের রাজারামপুর পঞ্চায়েতের ঘোড়ায়ক্ষেত্র গ্রামে পৈতৃক বাড়ি মানিকের। হালকা গোলাপি রঙের পাঁচিলঘেরা তাঁর দোতলা বাড়ি এখন তালাবন্ধ। মানিকের গ্রেফতারিতে সরগরম পলাশিপাড়া এবং নাকাশিপাড়া— দুই এলাকাই। সেই মানিক গ্রেফতার হতেই ক্ষোভের সুর শোনা গিয়েছে কালীগঞ্জের বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে। ওসমান বিশ্বাস নামে ওই এলাকার এক যুবক যেমন বলেই দিলেন, ‘‘এটা তো হওয়ারই ছিল। কেন এত দিন দেরি হল সেটাই প্রশ্ন। উচ্চ আদালত না থাকলে কিছুই যে হত না সেটা সকলে বুঝতে পেরেছেন।’’
স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের বেশির ভাগই অবশ্য এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে এর মধ্যেই কেউ কেউ উগরে দিচ্ছেন একরাশ ক্ষোভ। কালীগঞ্জের বাসিন্দা প্রবীণ আবেদ আলির দাবি, ১৯৯৮ সাল থেকেই তৃণমূল করে আসছেন। ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, ‘‘মানিক ভট্টাচার্যের মতো লোকের জন্য লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না। দলের নেতাকে নিয়ে এত বিদ্রুপ কখনও সহ্য করতে হয়নি। বিরোধীদের দোষ দেব কেন? আমরা তো নিজের চোখের সামনেই দেখেছি ১০-১২ লাখ টাকা দিয়ে কী ভাবে অযোগ্যরা প্রাথমিকে চাকরি পেয়েছে। এখানকার উচ্চনেতৃত্বকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। আবার প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারিনি দলীয় শৃঙ্খলা আর নেতৃত্বের ভয়ে।’’
নাকাশিপাড়ায় বইখাতার দোকান রয়েছে সেখানকার যুবক সুমন সাহার। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৪ সালে প্রাথমিক টেট পাশ করেও নিয়োগ না পেয়ে আজ ছোট ব্যবসা করছি। এটা যদি আর কিছু দিন আগে হত, তবে এত পড়াশোনা করে বেকার থাকতে হত না। একটা প্রজন্ম শেষ হয়ে গেল। পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচানোর জন্য এর থেকে ভাল পদক্ষেপ আর কিছু হতে পারে না।’’
মানিক গ্রেফতার হতেই আক্রমণ শানিয়েছে সিপিএম। নাকাশিপাড়ার বাম শিক্ষক নেতা রেজ্জাক আহমেদ বলেন, ‘‘তৃণমূল দুর্নীতিসর্বস্ব দল সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সেই দুর্নীতির ভরকেন্দ্র খোদ আমাদের বিধানসভা এটা ভেবেই লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।’’
আবার নাকাশিপাড়ার বিজেপি নেতা তথা পেশায় শিক্ষক অনুপ মণ্ডল বলেন, ‘‘সারা রাজ্য থেকে প্রাথমিকে চাকরির নামে কার্যত লুটতরাজ চলেছে। তৃণমূল নেতার বাইরেও তিনি এক জন শিক্ষক সেই পরিচয় ভুলে নির্লজ্জভাবে আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছেন। এটা নৈতিক অধঃপতন ছাড়া আর কিছুই নয়।’’
যদিও মানিককে নিয়ে ‘সাবধানী’ জেলার তৃণমূল নেতারা। নাকাশিপাড়ার বিধায়ক তথা তৃণমূল জেলা সভাপতি কল্লোল খাঁ বলেন, ‘‘কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ উঠলে আইন আইনের পথে চলবে। মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্ত চলছে। আমাদের দল কোনও অনৈতিক কাজকেই সমর্থন করে না।’’
এক সময় ঘোড়ায়ক্ষেত্র গ্রামে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে কলকাতা রওনা দিয়েছিলেন মানিক। কিন্ত গ্রামের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি কখনও। এর মধ্যেই ২০২১ সালে তাপস সাহার ছেড়ে যাওয়া আসন পলাশিপাড়ার বিধায়কও নির্বাচিত হন তিনি। দিন কয়েক আগে পুজোর সময় গ্রামে গিয়েছিলেন মানিক। নাকাশিপাড়ার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সুকেশ ঘোষ বললেন, ‘‘এই তো সে দিন দশমীর দিন বিজয়া সম্মিলনীতে দেখলাম আমাদের বিধায়ককে। আমাদের দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে গেলেন। তবে প্রতি বারের থেকে এ বার যেন একটু বেশি চুপচাপ লেগেছিল মানিক’দাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy