E-Paper

বড় সংস্থার কেকের চাপে কোণঠাসা বেকারি 

সময়টা ছয়ের দশকের গোড়ার দিক। দিলীপ গোমস তখন কতই বা বড়। তাঁর মনে আছে, বাবা নিউ মার্কেট থেকে কিনে আনতেন কেক তৈরির যাবতীয় উপকরণ।

আসছে বড়দিন, বেকারিতে তৈরি হচ্ছে কেক।

আসছে বড়দিন, বেকারিতে তৈরি হচ্ছে কেক। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১৩
Share
Save

কিসমিসের বোঁটা ছাড়ানোর ডাক পড়লেই তিনি বুঝতে পারতেন, বড়দিন এসে গিয়েছে।

সময়টা ছয়ের দশকের গোড়ার দিক। দিলীপ গোমস তখন কতই বা বড়। তাঁর মনে আছে, বাবা নিউ মার্কেট থেকে কিনে আনতেন কেক তৈরির যাবতীয় উপকরণ। ক্রিসমাসের বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই বাড়িতে মা শুরু করে দিতেন কেক তৈরির প্রস্তুতি। কাজু আর আমন্ডের খোসা ছাড়িয়ে, টুকরো করে রোদে শুকানো হত। বড়দিনের দু’এক দিন আগে তাঁর বাবা ভিনসেন্ট গোমস নিজের হাতে সব উপকরণ মিশিয়ে ‘ব্যাটার’ তৈরি করতেন।

নগেন্দ্রনগরের বাসিন্দা, প্রবীণ দিলীপের কথায়, “কেকে স্বাদ আনার যাবতীয় কারসাজি কিন্তু ওই মেশানোটাতেই। তখন তো এত যন্ত্রপাতি আসেনি। অভিজ্ঞ মানুষজনের হাতে তৈরি সেই কেকের স্বাদই ছিল আলাদা। তখন বেকারি শুধু বেক করে দিত।”

কৃষ্ণনগরে তখন হাতে গোনা বেকারি। সাধারণ মানুষের মধ্যে কেক খাওয়ার তত চল ছিলনা। খ্রিস্টান পরিবারগুলিই কেবল বড়দিন উপলক্ষে কেক বানাত। বেকারি মালিকেরা আগে থেকে সময় দিয়ে দিতেন। সেই মত ‘ব্যাটার’ পৌঁছে দিতে হত। ওভেন থেকে সদ্য বেরিয়ে আসা ঘরে তৈরি সেই কেকের গন্ধ বড়দিন এগিয়ে এলে এখনও দিলীপের নাকে আসে।

বড়দিনে ঘরে-ঘরে কেক খাওয়ার বিপুল প্রচলন ঠিক কবে থেকে তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে কমবেশি গত দু’তিন দশকে ক্রিসমাস কেক অ-খ্রিস্টানদের মধ্যেও তুমুল জনপ্রিয় হয়েছে। বড়দিনের কেক ঘিরে এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। প্রধানত স্থানীয় বেকারি এবং নামী সংস্থা, এই দুই ধরনের কেকের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে পুরো ব্যবসা। তবে যত দিন যাচ্ছে, ততই লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছে বেকারি। নামী সংস্থার ছোট-বড় নানা মাপের নানা দামের কেক ছেয়ে ফেলছে বাজার। ছোট হয়ে আসছে বেকারির পরিসর। বেকারি কেক এখন শহর থেকে দূরে গ্রামীণ ক্রেতাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

অথচ কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, কল্যাণী— গোটা নদিয়া জুড়ে এক সময়ে কয়েকশো বেকারি ছিল। নয়ের দশকে সংস্থার কেক যখন মফস্‌সলের বাজারে ঢুকতে শুরু করল, বেকারির ব্যবসায় মন্দার সেই শুরু। এখন বেকারির সংখ্যা কমতে কমতে তিরিশে গিয়ে ঠেকেছে বলে জানাচ্ছেন নদিয়া জেলা বেকারি ফেডারেশনের সম্পাদক সুভাষচন্দ্র সাহা। নিজে সাড়ে চার দশকের বেশি ধরে বড়দিনের কেক তৈরি করে আসছেন তিনি। তাঁর কথায়, “এখন আমাদের ভরসা গ্রামের নিম্নবিত্ত মানুষ, যাঁদের পঁচাত্তর বা একশো টাকা দিয়ে চকচকে মোড়কের ২৫০ গ্রাম কেক কেনার ক্ষমতা নেই। তাঁরা আমাদের উপর ভরসা রাখেন। এখনও ৩০ টাকায় চারশো গ্রাম ওজনের কেক শুধু বেকারিই দিতে পারে। সেটা টাটকা এবং তাতে কোনও লোক-ঠকানো চমক নেই।”

কেক তৈরির উপকরণের দাম অবশ্য আর সব কিছুর মতোই বেড়েছে। ময়দা, চিনি, মাখন, ডিম এবং শুকনো ফলের অস্বাভাবিক দাম। বেড়েছে জ্বালানি, মজুরি এবং প্যাকেটজাত করার খরচও। তবু এ বছরও মিলছে ৫০ টাকায় পাঁচশো গ্রাম বা ৭০ টাকায় সাতশো গ্রাম ওজনের টাটকা বেকারি কেক। বেকারি মালিকদের আক্ষেপ, বড় সংস্থাগুলির বিজ্ঞাপনের চটকে একটু শহর ঘেঁষা গ্রামের খরিদ্দারও এখন ওই দিকে ঝুঁকছেন।

তবে আশার কথা, ফের নতুন করে বেকারির কেকের চাহিদা বাড়ছে। নতুন করে বেকারি খুলছে। ব্যবসায়ীদের অনুমান, বড় সংস্থার কেকের দাম বেড়ে যাওয়ায় বহু মানুষই তা কিনতে পারছেন না। তাই বড়দিনে কেক খাওয়ার অভ্যাস ধরে রাখতে তাঁদের বেকারিই সই!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Krishnanagar

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।