—নিজস্ব চিত্র
উঠোনে বসে আঁচল দিয়ে চোখ মুছে হাসিবুল শেখের মা ওয়াজেদা বিবি বলে চলেছেন তাঁর ছেলের ছেলেবেলার কাহিনি। সেই চার মাসের সন্তান, হঠাৎ কোন রোগে ধরল আর ছেলের এক পা হয়ে গেল অক্ষম। আর আজ সেই ছেলের বাড়িতে সরকারি বাবুদের পা পড়েছে, তাও আবার শৌচালয় বানানোর জন্য। এমনও কি হয়?
কিন্তু সেটাই হয়েছে। ইসলামপুরে শ্রীরামপুর গ্রামের হাসিবুল শেখ ভিক্ষাবৃত্তি করে জমানো টাকায় বানিয়ে ফেলেছেন নিজেস্ব শৌচালয়। আর সেই কারণেই প্রশাসন কর্তারা ছুটে যান হাসিবুল শেখের বাড়িতে। তাঁকে দেওয়া হয়েছে সংবর্ধনাও।
পঞ্চায়েত থেকে গ্রামবাসীদের বহু আগে থেকেই তাগাদা দেওয়া হয় শৌচাগার তৈরির জন্য। পঞ্চায়েত কর্মীরা সর্বদাই গ্রামেগঞ্জে সচেতন করে বেরিয়েছেন। এমনকি মাঠে শৌচ করতে গিয়ে ধরা পড়ে নিজেদেরকেই সে সব জায়গা পরিষ্কার করে দিতে হয়েছে এমন ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু ভাঙা ঘরে অত টাকা দিয়ে শৌচালয়? শঙ্কায় দিন কাটত হাসিবুল ও তাঁর পরিবারের। ঘরেও চার মেয়ে দুই ছেলে। মেয়েরা বড় হচ্ছে। তাদেরকে যেতে হবে মাঠে? প্রশ্নটা সবসময় মাথায় ঘুরত হাসিবুলের। অবশেষে সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিলেন তিনি।
হাসিবুল শেখের কথায়, ‘‘নিজের এলাকা ছেড়ে বাইরে গিয়ে ভিক্ষার জন্য কোথাও দশ দিন, কোথাও পনেরো দিন পড়ে থেকে যা টাকা হত তা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে হাজার দশেক টাকা দিয়ে শৌচালয় বানানো সহজ কাজ ছিলনা। কিন্তু কী করব? এ দিকে বাড়িতে মেয়েরা বড় হচ্ছে। কয়েক মাস আগে গিয়ে একটু বেশি দিন থেকে টাকা জোগাড় করে নিয়ে এসে আগে শৌচালয় তৈরির কাজ শুরু করলাম।’’ অবশেষে সেই কাজ সফল হয়েছে। কিন্তু তিনি ভাবেননি যে এ জন্য তাকে সংবর্ধিতও করা হবে।
হাসিবুল জানান, গত ১২ নভেম্বর সোমবার তার বাড়িতে এসেছিলেন রানিনগর ১ বিডিও মহম্মদ ইকবাল হাসান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আমিনুল হাসান ও আরও কয়েক জন। প্রশাসনের তরফ থেকে তাকে বেশ কিছু উপহার দেওয়া হয়। রানিনগর ১ বিডিও মহম্মদ ইকবাল হাসান বলেন, ‘‘শ্রীরামপুরের মতো অজ পাড়াগাঁয়ে যে এমন দৃষ্টান্ত হতে পারে ভাবিনি। জেলাশাসকের পরিকল্পনা অনুযায়ী জেলাকে নির্মল বানাতে যে প্রকল্প চলছে তাতে মানুষকে সচেতন করার ফলে উন্নত হচ্ছে গ্রামগুলি। ‘নির্মল বাংলা’ গঠনে হাসিবুলের ঘটনাটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy