আতঙ্কে নেমে এসেছেন নার্স ও রোগীর আত্মীয়রা।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ভয়াবহ আগুন লেগে মৃত্যু হল অন্তত দু’জনের। মৃতেরা হলেন মামনি সরকার এবং পূর্ণিমা ঘোষ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মামণি হাসপাতালেই আয়ার কাজ করতেন এবং পূর্ণিমা এক রোগীর আত্মীয় । আগুন লাগার আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান তাঁরা। আহত হয়েছেন রোগীর আত্মীয়দের অনেকে। এই ঘটনায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে ওই শিশুটির মৃত্যুর কোনও সম্পর্কই নেই। তার মৃত্যু হয়েছে নিউমোনিয়ায়।
শনিবার সকালে আগুন লাগে হাসপাতালের দোতলায় মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের পাশের একটি ঘরে। সেই ঘরেই তখন চিকিত্সক ও নার্সরা ছিলেন। এসি থেকে আগুন বেরোতে শুরু করতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের ওয়ার্ডগুলিতে। হুড়োহুড়ি পড়ে যায় রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে। আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে এ দিক ওদিক ছুটতে থাকেন তাঁরা। নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হয় রোগীদের। এরই মধ্যে পদপিষ্ট হয়ে নামতে গিয়ে মৃত্যু হয় ওই দুই আয়ার। আহত হন আরও অনেকে। যে ঘরে এসিতে আগুন লাগে তার ঠিক পাশেই ছিল এসএনসিইউ। সেখান থেকে শিশুদের বের করে আনা হয় এক এক করে। আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে, জানলার কাচ ভেঙে রোগীদের বের করে আনার চেষ্টা করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও রোগীদের আত্মীয়দের সাহায্যে নিরাপদে বের করে আনা হয় রোগীদের। দমকল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ চালায়। কালো ধোঁয়ায় ভরে যায় চার দিক। ধোঁয়ার বেশ কয়েকটি শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে শট সার্কিট থেকে এই আগুন লেগেছে। হাসপাতালের সিকিওরিটি ইন-চার্জ অসিত কুমার মণ্ডল জানিয়েছেন, সব রোগীকে নিরাপদে বের করে আনা হয়েছে। তাঁদের দুই সঙ্গীর মৃত্যুর পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন আয়ারা। তাঁদের অভিযোগ, আপত্কালীন গেটের চাবি চাওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ তা দেননি। যদি আপত্কালীন গেটের তালাবন্ধ ছিল। যদি ওই গেট খোলা হত তা হলে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটত না।
দেখুন আগুন লাগার পরের সেই ভিডিও
আগুন আতঙ্কে শিশুদের বের করে এনে, শুয়ে রাখা হয়েছে বাইরে
দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, “কালো ধোঁয়ার কোনও পরিবেশ নেই। দমকলের ২টি ইঞ্জিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হবে। তাতেই পরিষ্কার হবে এটা কোনও দুর্ঘটনাজনিত, নাকি অন্য কোনও কারণ আছে। পুরো ঘটনার উপর নজর রাখা হচ্ছে। মালদহ থেকে একটি বিশেষ মেডিক্যাল টিম পাঠানো হচ্ছে।”
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল যাচ্ছে। যাচ্ছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাও। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখতে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেরাজ্য সরকার।
নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক রোগীকে।
আরও পড়ুন:
গোপনে ধূমপানেই বিপর্যয়, বলছে তদন্ত
ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy