তরুবালা বিশ্বাসের বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা সুজন বিশ্বাস। বলছিলেন— ‘যে খারাপ কাজ করেছে তাকে তো ফল তো ভোগ করতেই হবে। বাচ্চাগুলোর জন্য খারাপ লাগছে!”
মঙ্গলবার দুপুরে শান্তিপুরের বাগানেপাড়ায় দিনভর অঝোর বৃষ্টির মধ্যে প্লাস্টারহীন বাড়িটাও স্তব্ধ। এক দিনের মধ্যেই বিলকুল বদলে গিয়েছে গোটা বাড়ির ছবিটা। ৭৫ বছরের তরুবালা বিশ্বাসকে খুনের দায়ে গ্রেফতার হয়েছে তাঁর ছেলে সত্যেন। তার পরেই বিষে অসুস্থ হয়ে পড়েন তার স্ত্রী গীতা ও তিন ছেলেমেয়ে। পরে মৃত্যু হয় দুই ছেলেমেয়ের। গীতা ও তাঁর ছ’বছরের ছেলে শুভ এখনও শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি। সত্যেনকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়ির মধ্যেই একটি ঘরে থাকতেন তরুবালা। তবে ছোট ছেলের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ ছিল না। নিজেই ভিক্ষা করে পেট চালাতেন। বাড়ির পাকা ঘরের পাশে একটি বেড়ার ঘর। সেখানে কোনও এক সময়ে তাঁত ছিল। সোমবার বিকেলে সেই ঘরের দরজার সামনেই গীতা এবং তাঁর তিন ছেলেমেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন এলাকার বাসিন্দারা। পাড়ার বাসিন্দা প্রতিমা বিশ্বাস বলেন, “দেখি, বাচ্চাগুলো দরজার সামনে বমি করছে আর ওদের মা ঘোলাটে চোখে পড়ে আছে। আমরা তাদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।”
গত ১ ডিসেম্বর থেকে তরুবালার যখন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না, সেই সময়ে শান্তিপুর থানায় মিসিং ডায়েরি করেন গীতা। তখনও চুপ করেই ছিল সত্যেন। পাড়ার বাসিন্দাদের অনেকের দাবি, তরুবালা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরেও সত্যেনকে দেখে কিছু বোঝা যায়নি। একেবারে স্বাভাবিক আচরণ করে গিয়েছে সে। চুপচাপ স্বভাবের সত্যেন যে এমন কাজ করে ফেলবে, তা-ও তাঁরা ভাবতে পারেননি।
সত্যেনের মাসতুতো ভাই শ্যামল সরকার বলেন, “মাসির সঙ্গে জমি-জায়গা নিয়ে ঝামেলা ছিল সত্যেনের। তবে এ রকম কিছু করে বসবে, তা ভাবিনি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সত্যেনের বিয়ের পর থেকেই ঝামেলা শুরু হয়েছিল। ওর স্ত্রী গীতাও মাসির সঙ্গে ঝামেলা করত খুব। আসলে সে-ই উস্কানি দিত।”
পুলিশের দাবি, জেরায় সত্যেন বলেছে যে সে একাই খুন করেছে। তবে এলাকার মানুষ গীতার উপরেও ক্ষুব্ধ। তাঁদের বেশির ভাগই বলছেন, গীতাই যাবতীয় গণ্ডগোলে উস্কানি দিত স্বামীকে। স্থানীয় বাসিন্দা প্রতাপ বিশ্বাস, সুজন বিশ্বাসদের আক্ষেপ, “বাচ্চাগুলোকেও এ ভাবে বিষ দিতে পারল? এ ভাবে যে নিজের বাচ্চাদের মারতে পারে সে তো অন্যদেরও ক্ষতি করতে পারে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy