Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

যোগ্যতামান অষ্টম শ্রেণি, সিভিককর্মী হতে আর্জি এম এ, বি এডদের

চেয়েছিলেন শিক্ষক হতে। এখন সিভিক ভল্যান্টিয়ারের চাকরি পাওয়ার জন্য মরিয়া। দু’দিন ধরে তিনি লাইনে দাঁড়াচ্ছেন শারীরিক সক্ষমতার সার্টিফিকেট নেবেন বলে।

অপেক্ষা: ছেলে কোলে নিয়ে ফর্ম পাওয়ার লাইনে। বহরমপুরে।  —নিজস্ব  চিত্র।

অপেক্ষা: ছেলে কোলে নিয়ে ফর্ম পাওয়ার লাইনে। বহরমপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ০১:১৪
Share: Save:

নদিয়া জেলা সদর হাসপাতালের সুপারের ঘরের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মধুমিতা মণ্ডল। বাবা দিনমজুর। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা অনার্স নিয়ে পড়ছেন। চেয়েছিলেন শিক্ষক হতে। এখন সিভিক ভল্যান্টিয়ারের চাকরি পাওয়ার জন্য মরিয়া। দু’দিন ধরে তিনি লাইনে দাঁড়াচ্ছেন শারীরিক সক্ষমতার সার্টিফিকেট নেবেন বলে।

বড়ঞার প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিহাসে এমএ। সরকারি চাকরি জোটেনি। হাতুড়ে চিকিৎসা করেন। তিনি বলেন, ‘‘যা আয় হয়, সংসার চলে না। সিভিক ভল্যান্টিয়ারের চাকরিটা পেলে বেঁচে যাই।’’ কান্দির দুর্লভপুরের মুস্তাফা শেখ, গোকর্ণের ভুবন দাস মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা ও টেট উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাননি। তাঁরাও আবেদন করেছেন।

সিভিক ভল্যান্টিয়ার নিয়োগের যোগ্যতামান মোটে অষ্টম শ্রেণি। কিন্তু এমএ, বিএ, বিএডের ছড়াছড়ি যাচ্ছে। আইটিআই পাশ করা ছেলেমেয়েরাও রয়েছেন। করিমপুরের রামকৃষ্ণ কলোনির শক্তিকুমার বিশ্বাস বাংলায় এমএ পাশ করে বিএড করে বসে আছেন। তাঁর কথায়, ‘‘চাকরির যা বাজার, তাতে এখন ছোট-বড় কিছুই ভাবতে পারছি না।” মধুমিতার পাশ থেকেই এক যুবক বলেন, “আমার বাবা অসুস্থ। ২০১২ সালে বিএ পাশ করে বসে আছি। শিক্ষকের চাকরি পেতে গেলে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে। সে টাকা পাব কোথায়?”

রাজ্যে প্রায় ১৪ হাজার সিভিক ভল্যান্টিয়ার নিয়োগ করার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। মুর্শিদাবাদে কত জন নিয়োগ হবে, তার নির্দেশ এখনও আসেনি। তবে নদিয়ায় তিনশোর কিছু বেশি নেওয়া হতে পারে বলে খবর। সেখানে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন থানা থেকে প্রায় ২৫ হাজারের ফর্ম তোলা হয়েছে। তেহট্ট থানায় ন’টি শূন্যপদ, ফর্ম তোলা হয়েছে হাজার ছয়েক। করিমপুর থানায় শূন্যপদ মাত্র ১২টি। ফর্ম তোলা হয়েছে প্রায় সাড়s চার হাজার। ফলে রাতের ঘুম ছুটেছে পুলিশের। কারণ জমা পড়া ফর্মগুলি স্ক্যান করে থানাগুলো থেকে পাঠানো হবে জেলায়। রিক্রুটমেন্ট কমিটির পক্ষে ইন্টারভিউ ও শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা সহজ হবে না।

কান্দির বড়ঞা থানার শাবলপুরের নয়নকিরণ ঘোষের আইটিআই (ল্যান্ড সার্ভেয়ার) ডিগ্রি রয়েছে। তার আগে তিনি বাংলায় এমএ পাশ করেছেন। রয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ডিগ্রি। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এত কিছু করা সত্ত্বেও চাকরি এখনও জোটেনি। তাই সিভিক ভল্যান্টিয়ারের চাকরির জন্য আবেদন জমা করেছি।’’ হরিহরপাড়ার সঞ্জয় হালদার, কামিরুল শেখ এমএ পাশ করেও বসে রয়েছেন। তাঁরাও রয়েছেন চাকরিপ্রার্থীর তালিকায়।

গত বার সিভিক ভল্যান্টিয়ারের চাকরির জন্য শাসকদলের নেতাদের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ বারও যে সেই অভিযোগ উঠবে না, তা-ও হলফ করে বলতে পারছে না কেউ। তবে তৃণমূলেরই একাংশ মনে করছেন, এ বার যেহেতু জেলাস্তরে ইন্টারভিউ হবে তাই টাকা নেওয়া গত বারের মতো সহজ হবে না বলেই মনে হচ্ছে। তাই এত আগে থেকে কেউ টাকা নেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছে না। এত ডিগ্রি নিয়ে চুক্তির চাকরি চেয়েও যদি দুর্নীতির শিকার হতে হয়, এত ছেলেমেয়ে যাবে কোথায়?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE