নিজস্ব চিত্র।
রক্তের মর্ম বোঝেন ওঁরা!
বর্তমানে বিয়ে করে নতুন জীবন শুরুর আগে ‘প্রি-ওয়েডিং’ হিসাবে যুগলের ছবি এবং ভিডিয়ো তোলার ধারা প্রচলিত আছে। তবে এই প্রথম বার বিয়ের আগে রক্তদান করে ‘ট্রেন্ড’ তৈরি করার প্রচেষ্টা দেখা গেল। বিয়ের আগে রক্তদান করলেন এক স্বাস্থ্যকর্মী যুগল। পেশায় মুর্শিদাবাদের বরোয়াঁ গ্রামীণ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার তথা চিকিত্সক আব্দুল আজিজ এবং বহরমপুর কোভিড হাসপাতালের নার্স শবনম আহমদের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিয়ে হওয়ার কথা। এর আগে ২১ নভেম্বর তাঁদের বাগ্দান হয়। বিয়ের আগে মানুষের উপকারে আসার চিন্তাভাবনা থেকেই রবিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে তাঁরা রক্তদান করেন।
বিয়ের আগে রক্তদান করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা প্রথমে আজিজের মাথায় আসে। তার পর তিনি তাঁর ভাবনার কথা শবনমকে জানান। এই বিষয়ে তিনিও রাজি হয়ে যান। এর পরই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে রক্তদান করেন তাঁরা। তবে কোথা থেকে তাঁদের মাথায় এই ভাবনা? তাঁর উত্তর মিলল আজিজের কাছে থেকেই। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দু’জনেই স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করার সুবাদে চিকিত্সাক্ষেত্রে রক্তের প্রয়োজনীয়তা বুঝি। তার মধ্যে করোনা আবহে অনেক রক্তদান শিবির বাতিল হয়েছে। রক্তের অভাবে আমরা দু’জনেই অনেক মানুষকে ছোটাছুটি করতে দেখেছি। সেখান থেকেই আমরা রক্তদানের কথা ভাবি।’’
করোনাকালে সংক্রমণের আশঙ্কায় শহর ও শহরতলিতে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির আয়োজনের সংখ্যা। তার প্রভাব সরাসরি এসে পড়েছে হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে। সেখানে রোজ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রক্তের চাহিদা। সেই কারণেই এই উদ্যোগ আজিজ এবং শবনমের।
তবে তাঁদের দু’জনেরই দাবি, তাঁদের এই রক্তে হয়তো বেশি মানুষ উপকৃত হবেন না। কিন্তু তাঁদের দেখে যদি আরও অনেকে এগিয়ে এসে রক্তদান করেন, তা হলে রক্তের সমস্যা অনেকটা মিটতে পারে। যদি প্রত্যেকটি মানুষ নিজেদের জীবনে শুভ মুহূর্তের আগে এক ইউনিট করেও রক্তদান করেন, তা হলে একটি নতুন ধারার সূচনা হবে এবং এর ফলে অনেক মানুষ এক সঙ্গে উপকৃত হবেন। তাই রক্তদানের জন্য বিয়ের আগের সময়কেই তাঁরা বেছে নিয়েছেন বলেও যুগল জানিয়েছেন।
২৬ বছর বয়সি আজিজ অনেক দিন ধরেই রক্তদান করলেও ২৪ বছর বয়সি শবনমের এই প্রথম রক্তদান। আগে অনেকবার রক্তদানের কথা মাথায় এলেও বিভিন্ন কারণে তা হয়ে ওঠেনি। তবে এই বার নাছোড়বান্দা ছিলেন তিনি। তবে বিয়ের আগে রক্তদানের বিষয়ে পরিবারের সম্মতি না-ও মিলতে পারে, এই ভেবে বাড়িতে না জানিয়েই রক্তদানের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বলেন, ‘‘আগে রক্ত দেওয়া না হয়ে উঠলেও এই বার আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। তাই বিয়ের আগে আগে রক্তদান করার বিষয়ে বাড়ি থেকে আপত্তি জানাতে পেরে ভেবে আমি বাড়ির কাউকে না জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিই। তবে পরে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে খুশিই হয়েছেন।’’
প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেও দক্ষিণ কলকাতার এমআর বাঙুর হাসপাতালে রক্তের আকাল মেটাতে লাইন দিয়ে রক্ত দেন স্বাস্থ্যকর্মী থেকে চিকিৎসক, নার্স থেকে নিরাপত্তারক্ষীরা। এমআর বাঙুর হাসপাতালের রক্ত নিয়ে টানাটানি পড়লে সমস্যার কথা বুঝতে পেরে হাসপাতালের নার্সিং সুপার লক্ষ্মী নন্দী, নিজেরাই রক্ত দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অনুমতি চান হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার শিশির নস্করের কাছে। সিদ্ধান্ত হয়, কর্মরত নার্সেরা রক্ত দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেবেন। ৫০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু হয় নার্সদের রক্ত দেওয়ার প্রক্রিয়া। তা দেখে একে একে সেখানে হাজির হন হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং নিরাপত্তারক্ষীরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy