ভস্মীভূত: কুচিয়ামোড়ায়।
আগুনের শিখা রেয়াত করে না বসন্তকেও। বরং, গাঁ-গঞ্জ-মফস্সল জানে, ফি বছর এই সময়েই সে ফিরে ফিরে আসে। কখনও পুড়ে খাক হয়ে যায় বিঘের পর বিঘে ফসল। কখনও পুরনো ক্ষত শুকোতে না শুকোতে ফের দগ্ধ হয় পাড়ার পর পাড়া। সীমান্তের জলঙ্গি কিংবা করিমপুরের বহু গ্রামে আজও পোড়া দাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ন্যাড়া তালগাছ কিংবা মৃতপ্রায় কৃষ্ণচূড়া। পুরনো টালির পাশে পোড়া স্মৃতি নিয়ে শুয়ে থাকে মেঘরঙা টালি, আধপোড়া বাঁশ।
কয়েক দিনে নদিয়া-মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু বাড়ি পুড়েছে। মারা গিয়েছে এক শিশু। জখমের তালিকা বেশ দীর্ঘ। সেই আগুনের রেশ মিটতে না মিটতে মঙ্গলবার ডোমকলের শীতলনগর, বুধবার মেহেদিপাড়া, বৃহস্পতিবারে কুচিয়ামোড়া, জলঙ্গির পরাশপুরে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বুধবার রাতে বেলডাঙার আনন্দনগরেও পুড়েছে বাড়ি। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তেহট্ট মহকুমা জুড়ে ১১টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সকালে কুচিয়ামোড়ায় আগুন লেগে পুড়েছে সাতটি বাড়ি। সেই সময় স্থানীয় লোকজন আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেছিলেন। সেই সময় আগুনের কারণেই গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটে জখম হন তিন জন।
দমকল ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যুতের তার থেকেই আগুন ছড়িয়ে কুচিয়ামোড়ায় আগুন লেগেছে। পরাশপুরের ক্ষেত্রে রান্নার আগুন ছড়িয়েই বিপত্তি বলে প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা। পদ্মা ঘেঁষা ওই গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘ফাগুনের এই হাওয়াই যত নষ্টের গোড়া।’’ এ হাওয়া যে কী বিপদের তা হাড়ে হাড়ে জানেন ডোমকলের হিতানপুর, তুলসীপুর, জলঙ্গির হুকোহারা কিংবা নদিয়ার ব্রজনাথপুর, গান্ধিনার মানুষ। হুকোহারার ইজলুল হক বলছেন, ‘‘সে আগুনের দৃশ্য যাঁরা নিজে চোখে দেখেননি, তাঁদের বিশ্বাস করা কঠিন। প্রথমে একটা বাড়িতে আগুন লাগল। লোকজন সে আগুন নেভাতে নেভাতে এক দমকা হাওয়ায় জ্বলে উঠল গোটা পাড়া। কে কার বাড়ির আগুন নেভাবে, আর কে পালিয়ে বাঁচবে, তার ঠিক নেই। সে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা। দূর থেকে দেখা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না।’’
শীতলনগরের জান মহম্মদ মণ্ডল জানান, এই সময়ে ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা থাকে। এর আগে কত বার যে বাড়িতে আগুন লেগে তাদের বই পুড়ে গিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আগুনের থাবা থেকে বাঁচতে এর আগে প্রশাসন ও দমকলের পক্ষ থেকে নানা প্রচার করেছিল। মাঠের নাড়া না পোড়ানো, সকাল সকাল রান্না সেরে উনুনে জল ঢালা কিংবা দাহ্যবস্তুর ব্যাপারে এই সময়ে সচেতন থাকার মতো নানা নিদানও তারা দিয়েছিল।
কিন্তু বাস্তবে যে সেটা হয় না কিংবা করাটাও সম্ভব হয়ে ওঠে না তা-ও জানে দুই পক্ষই। ফলে এই সময়ে আগুনও লাগে। পাড়ায় পাড়ায় সামাল সামাল রব ওঠে। সেই সঙ্গে আছে ঘরপোড়া মানুষের বিস্তর অভিযোগও। তাঁদের কথায়, ‘‘দুর্ঘটনা তো আর বলেকয়ে আসে না। কিন্তু হাজার বার দমকলে ফোন করেও গাড়ি যখন আসে তখন পাড়া পুড়ে ছাই হয়ে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy