ফাইল চিত্র
ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া। বর্ষায় খিচুড়িপ্রিয় আম-বাঙালির কাছে তাই অপরিহার্য ডিমভাজা। শুধু কি তাই? চটজলদি রান্নাতেও ডিমের ঝোল ভাতের জুড়ি মেলা ভার। বাংলার হেঁসেলের মুশকিল আসান সেই ডিমের জোগানেই টান! স্বাভাবিক ভাবেই গৃহকর্ত্রীদের মাথায় হাত।
গত দু’সপ্তাহে গোটা নদিয়া জুড়ে বেড়ে গিয়েছে ডিমের দাম। পোলট্রির একটি ডিম কিনতে পাঁচ টাকার বদলে পকেট থেকে বার করতে হচ্ছে ছ’টাকা। জোড়া কোথাও বিক্রি হচ্ছে সাড়ে এগারো টাকায় তো কোথাও ১২ টাকায়। পকেটে টান পড়লে মাছ, মাংসের বদলে যাঁরা ডিমের দিকে হাত বাড়ান, এখন তাঁদেরও দু’বার ভাবতে হচ্ছে। এমনই একজনকে বৃহস্পতিবার পাওয়া গেল ওলাদেবীর বাজারে। অশোক সাহা নামে ওই ক্রেতা বলেন, ‘‘১০টি ডিম কিনতে গিয়েই যদি ৬০ টাকা বেরিয়ে যায়, তাহলে তো চিন্তার ব্যাপার। এর থেকে মুরগির মাংস খাওয়াই ভাল।
মাত্র কয়েকদিনে ডিমের দাম যে এক লাফে এক টাকা বেড়ে গিয়েছে, তা বিশ্বাসই করলেন না আনুলিয়ার বাসিন্দা মায়া বিশ্বাস। এদিন স্থানীয় বাজারে ডিম কিনতে গিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে তাঁর তর্কাতর্কিই বেধে যায়। শেষপর্যন্ত ডিমই কেনেনি তিনি। মায়া বলেন, ‘‘আমাদের ঠকানো হচ্ছে। ইচ্ছে করে বেশি দাম বলা হচ্ছে!’’
তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, পরিস্থিতির সামনে তাঁরা অসহায়। নবদ্বীপের খুচরো ডিম ব্যবসায়ী আশিস দাম বলেন, “জুনে ১০০টি ডিমের পাইকারি দর ছিল ৩৮২ টাকা। এখন সেই দামই ৪৯৫ থেকে ৪৯৮ টাকা হয়েছে। অন্যান্য খরচ দিয়ে কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ টাকা থেকে ছ’টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’’
রানাঘাট, কৃষ্ণনগরের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, জেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হওয়া ডিমের বড় অংশ আসে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে। সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক মুরগির ফার্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
রানাঘাটের দীর্ঘদিনের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী পিন্টু সরকার বলেন, “অন্ধপ্রদেশে টানা বৃষ্টির পর বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে একের পর এক ফার্ম। ডিমের জোগান হু হু করে কমছে। ফলে দামও চড়ছে।’’ কৃষ্ণনগরের পাইকারি ব্যবসায়ী নাদু মাঝি বলেন, ‘‘শুনতে পাচ্ছি, অন্ধ্রপ্রদেশে একগাড়ি ডিমের জন্য ছয় থেকে সাতটি ফার্ম ঘুরতে হচ্ছে। যতদিন না অবস্থা স্বাভাবিক হবে ততদিন এমনই চলবে।” বিপাকে পড়েছেন রাস্তার ধারের খাবারের দোকানের মালিকেরাও। একসঙ্গে সংখ্যায় অনেক বেশি কেনায় তাঁরা একটি ডিম ছ’টাকার বদলে সাড়ে পাঁচ টাকায় পাচ্ছেন। তবে তাতেও লোকসান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ডিমের দাম আরও চড়তে পারে বলে এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। কারণ, ২০ জুলাই থেকে বিভিন্ন রাজ্যের ট্রাক মালিকরা ধর্মঘটে নামছেন। সে ক্ষেত্রে জোগান আরও কমবে বলেই ধারণা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy