স্কুলে আর পাঁচ জন পড়ুয়ার সঙ্গেই ক্লাস করতে হয় মূক ও বধির বিশাখা দাসকে। ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কী বলছেন, তা তার বোধগম্য হয় না। যা পড়াশোনা, তা করতে হয় বাড়িতেই।
আর এ ভাবে পড়েই এ বার মাধ্যমিক দিচ্ছে করিমপুর ২ ব্লকের গোয়াস উচ্চ বিদ্যালয়ের বিশাখা। শুধু সে নয়। ওই স্কুলে পড়ে আরও সাতটি মূক ও বধির পড়ুয়া। তাদের সকলেরই একই সমস্যা। বিশাখার বাবা সনাতন দাস বলেন, “ওরা যাতে বুঝতে পারে সে ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।”
নশিপুর হাইমাদ্রাসার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মুবাশশির আলম ট্রাইসাইকেল স্কুলে যাতায়াত করে। একতলায় র্যাম্প আছে। কিন্তু তাদের ক্লাস হত দোতলায়। বন্ধুবান্ধব এবং শিক্ষকদের সাহায্যে তাকে ক্লাসঘরে পৌঁছতে হয়। শৌচালয়ে গিয়েও সে সমস্যায় পড়ে। নদিয়ার মদনপুর কে বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ওসনাই শেখ একশো শতাংশ দৃষ্টিহীন। তার আক্ষেপ, “স্কুল অনেকটাই সাহায্য করে। তবে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ার ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যা হয়।”
নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে এ রকম প্রায় কুড়ি হাজার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়া আছে। সকলেরই অসুবিধা শারীরিক, তা নয়। অনেকের বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা আছে। এদের কেউ অটিস্টিক, কারও বুদ্ধ্যঙ্ক কম, কারও চঞ্চলতা এমন পর্যায়ে যে কোনও বিষয়ে মনঃসংযোগ করতে পারে না। সর্বশিক্ষা আইন অনুযায়ী, সাধারণ স্কুলে আর পাঁচটা বাচ্চার সঙ্গে এদের সকলেরই পড়ার অধিকার আছে। কিন্তু তার উপযোগী ব্যবস্থা আছে কী? আছে যথাযথ পরিকাঠামো?
মুর্শিদাবাদ জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী বিশ্বাস দে জানান, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে জেলার কোনও স্কুলে ওই পরিকাঠামো নেই। তবে দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ চাইলে সর্বশিক্ষা মিশন দফতর থেকে বিশেষ শিক্ষক বা ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর’ নিয়োগ করা হয়। পাঁচ দিনের কর্মশালাও হয়। প্রতিটি স্কুল থেকে এক জন শিক্ষক হাজির থাকেন। যাতে পড়ুয়াদের মন বুঝে সেই মতো আচরণ করতে শেখেন শিক্ষকেরা।
স্পেশ্যাল এডুকেটরদের কাজ কী? সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এঁদের প্রধান কাজ স্কুলে-স্কুলে গিয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের পড়ানো এবং কী ভাবে পড়াতে হবে তা নিয়ে শিক্ষকদের সচেতন করা। ওই পড়ুয়াদের ‘রিসোর্স রুম’-এ নিয়ে গিয়ে ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপির ব্যবস্থা করাও এঁদের কাজ। সেই সঙ্গে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের শংসাপত্র দেওয়ার জন্য শিবিরও তাঁরাই করেন।
কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তাঁরা সংখ্যায় নগণ্য। গোয়াস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ভবানী প্রামাণিক বলেন, “স্পেশ্যাল এডুকেটর মাঝে-মধ্যে স্কুলে আসেন। স্কুল পিছু এক জন থাকলে ভাল হয়।” হাতিনগর হিকমপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের খেদ, সরকার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের যে সুযোগ-সুবিধে দেওয়ার কথা বলেছে, তা খাতায় রয়ে গিয়েছে। বাস্তবে তার কোনও অস্তিত্বই নেই। (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy