অভিযোগটা ছিল নেহাতই একতরফা। বাড়ির বৌয়ের সঙ্গে নাকি সম্পর্ক প্রতিবেশী যুবকের। তার জেরে কার্যত সালিশি সভা বসল বাড়িতে। ওই মহিলাকে শ্বশুরবাড়ি ছাড়ার পরোয়ানা দিলেন শাসক দলের পঞ্চায়েত সদস্য। সেই ‘বিচারসভা’য় প্রতিবেশীদের কটূক্তিতে নাজেহাল হতে হল তাঁকে। সালিশির সিদ্ধান্ত মানতে না চাওয়ায় শ্বশুরবাড়িতে জোটে মারধর। পর দিন শ্বশুরবাড়িতে মিলল ওই মহিলার দেহ। শুক্রবার রাতে শান্তিপুরের চন্দ্রপুরের ঘটনা।
আলপনা বৈদ্য (২৬) নামের ওই মহিলার বাবা সদানন্দ বারুই থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ মহিলার স্বামী তুলসী বৈদ্য ও জা সুপর্ণা বৈদ্যকে গ্রেফতার করেছে। অন্য অভিযুক্তেরা পলাতক। সালিশি সভায় হাজির পঞ্চায়েত সদস্য বিভাস মণ্ডল অবশ্য মনেই করেন না, মহিলাকে শ্বশুরবাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি অন্যায় করেছেন। দলেই প্রশ্ন উঠেছে, রাজনৈতিক নেতারা কি নীতি পুলিশের ভূমিকা নিতে পারেন।
বছর দশ আগে আলপনার সঙ্গে বিয়ে হয় পেশায় রাজমিস্ত্রি তুলসীর। বছর তিনকে আগে তিনি হায়দরাবাদে কাজে চলে যান। অভিযোগ, তার পরে আলপনাদেবীর সঙ্গে প্রতিবেশী এক যুবকের সম্পর্ক তৈরি হয়। এই নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে অশান্তি শুরু হয়।
তারই জেরে ২৫ জুলাই রাতে শ্বশুরবাড়িতে ঢুকে প্রতিবেশী কয়েক জন ব্যক্তি তাঁকে মারধর করে। সদানন্দবাবুর অভিযোগ, পঞ্চায়েত সদস্য বিভাসবাবু নিজে উপস্থিত থেকে উত্তেজিত পড়শিদের প্ররোচনা দেন। খবর পেয়ে আলপনা বাবা-মা ছুটে এলে তাঁদের মারধর করা হয়।
অালপনার বাপের বাড়ি একই গ্রামে। সদানন্দবাবু বলেন, “মেয়েকে মারধরের খবর পেয়ে আমরা ছুটে যাই। প্রতিবেশীরা বলে ‘বেশ করেছি, মেরেছি’। পঞ্চায়েত সদস্য বিভাস মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলে। আমরা রাজি না হওয়ায় ওরা অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। প্রতিবাদ করলে মারধর করে।” তিনি বলেন, “শুক্রবার রাতে খবর পেয়ে বাড়ি ফিরে আসে জামাই। সেও মেয়েকে মারধর করে। তারপর সকলে শ্বাসরোধ করে মেয়েকে খুন করেছে।”
শনিবার সকালে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পাঠায়। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় আলপনার শ্বশুর বাড়ির লোকরা। আড়বন্দি-১ পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের বিভাস মণ্ডল বলেন, “মেয়েটির চরিত্র খারাপ বলে এলাকার মানুষের অভিযোগ। সেই কারণে স্থানীয় মহিলারা ওই মহিলাকে মারধর করেছে বলে আমি জানতে পারছি।” তাঁর সাফাই, “আমি শুধু মেয়ের বাবাকে ডেকে পাঠিয়ে বলেছিলাম, তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। জামাই এলে না হয় আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।”
বিভাসবাবুর জানান, তিনি যেতে চাননি। বাসিন্দারাই তাঁকে ডেকে নিয়ে যান। পুলিশ জানায়, তদন্ত চলছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘‘এমন ঘটনা জানা নেই। দলের লোকেরা এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy