Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

দূষিত চূর্ণীতে মরছে মাছ, বিরল শুশুকও

বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দুরত্বে চূর্ণী নদীতে রোজ সকালে স্নান করতে যান দেবব্রত গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার থেকে তিনি নদীতে যাওয়া ছেড়ে বাড়িতেই নলকূপের জলে স্নান করছেন। 

কালো জলে ভরেছে নদী। ছবি: প্রণব দেবনাথ

কালো জলে ভরেছে নদী। ছবি: প্রণব দেবনাথ

সৌমিত্র সিকদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:৩০
Share: Save:

বাংলাদেশ থেকে মিশে যাওয়া রাসায়নিকে বিষিয়ে যাচ্ছে চূর্ণী। তার মাসুলও দিতে হচ্ছে। মাছ মরতে থাকায় ক্রমশ বিরলদর্শন হচ্ছে নদীর মাছখেকো শুশুকও।

বৃহস্পতিবারও একই রকম কালো হয়ে ছিল চূর্ণীর জল। গত কয়েক দিন ধরেই তার এই চেহারা।

বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দুরত্বে চূর্ণী নদীতে রোজ সকালে স্নান করতে যান দেবব্রত গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার থেকে তিনি নদীতে যাওয়া ছেড়ে বাড়িতেই নলকূপের জলে স্নান করছেন।

রানাঘাট ২ ব্লকের রঘুনাথপুর হিজুলি ১ পঞ্চায়েতের বরেন্দ্রনগরের বাসিন্দা দেবব্রত বলছেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখি, জল কালো হয়ে গিয়েছে। শুনি, আগের রাত থেকেই ওই অবস্থা। ওই জলে স্নান করলে চর্মরোগ হবে। তাই স্নান না করে বাড়ি ফিরে যাই।’’

দেবব্রতর দাবি, জানুয়ারির গোড়ার দিকেই তাঁরা একটি শুশুক দেখতে পেয়েছিলেন চূর্ণীতে। দেখে ভারী খুশিও হয়েছিলেন। কেননা এখন আর এই নদীতে আগের মতো শুশুক দেখা যায় না। নদীপারের বাসিন্দা অনিমা হালদার বলেন, “আগে আমরা নদীর পারে দাঁড়িয়ে ওদের খেলা দেখতাম। মাস ছয়েক আগে এক জন ‘শুশুক’ বলে চেঁচিয়ে উঠেছিল। কিন্তু নদীর ধারে ছুটে গিয়েও দেখতে পাইনি।” দেবব্রতের আশঙ্কা, ‘‘বাংলাদেশের দর্শনা থেকে যে ভাবে মাঝে-মাঝেই দূষিত জল ছাড়া হচ্ছে, আগামী দিনে হয়তো আর তাদের দেখতেই পাওয়া যাবে না!” বাংলাদেশে পদ্মা থেকে বেরিয়ে এ দেশে ঢুকে কৃষ্ণগঞ্জ থানার মাজদিয়ায় দু’ভাগে ভেঙে গিয়েছে। তার একটি চূর্ণী নাম নিয়ে হাঁসখালি হয়ে রানাঘাট থানার পায়রাডাঙা শিবপুর ঘাটের কাছে ভাগীরথীতে মিশেছে। প্রতি বছরই বাংলাদেশের দর্শনায় কেরু কোম্পানির চিনি কারখানার বিষাক্ত কালো জলে চূর্ণী দূষিত হচ্ছে। বছরে তিন-চার বার এই জল ছাড়া হয়। তার ফল ভোগেন চূর্ণীর দু’ধারে ১২০টি গ্রামে ছড়িয়ে থাকা তিরিশ ত্রিশ হাজার মৎস্যজীবী থেকে সাধারণ মানুষ।

নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার জানাচ্ছেন, চূর্ণীপারের মানুষের কাছে তিনি শুনেছেন যে ১৯৯৮ সালে আট-ন’বার এবং ২০০৫ সালে চার-পাঁচ বার চূর্ণীতে শুশুক দেখা গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘নদী মোহনায় শুশুক বেশি দেখতে পাওয়া যায়। সম্ভবত দু’টো কারণে এদের অবলুপ্তি ঘটছে। প্রথম কারণ নদীর দূষণ। দ্বিতীয় কারণ, মাঝিরা জালে ধরে এদের মেরে ফেলে। কারণ অনেকের বিশ্বাস, এদের তেল থেকে বাত কমে।”

চাকদহ বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতি তথা পরিবেশকর্মী বিবর্তন ভট্টাচার্যের দাবি, বছর দুয়েক আগে ইতালির গ্রিন পার্টির সাংসদ জন কার্লোস পায়রাডাঙার শিবপুর ঘাটে এসে শুশুক দেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘শুশুক মাছ খেতে আসে। নদীর জল দূষিত হয়ে যাওয়ায় মাছের সংখ্যা কমে গিয়েছে। শুশুকও আসছে না। এক সময়ে ৪০-৫০টা পর্যন্ত শুশুক দেখা যেত। এখন সংখ্যাটা অনেক কমে গিয়েছে।” রাসায়নিক দূষণ কী ভাবে প্রকৃতি ধ্বংস করতে পারে, কালো স্রোতে তারই সাক্ষ্য বইছে চূর্ণী।

অন্য বিষয়গুলি:

River Pollution Pollution Churni River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE