Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ভুয়ো পুলিশের ফাঁদে চালক, লুঠ রডের ট্রাক

পুলিশ সেজে লোহার রড বোঝাই আস্ত একটি লরি লুট করে পালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। চালককে রাস্তায় ফেলে রেখে বুধবার রাতে উধাও হয়ে যাওয়া সেই লরির খোঁজ মিলল বৃহস্পতিবার, মালদহের ইংরেজবাজারে। এ দিন রাতে জাতীয় সড়কের ধারে ‘হারানো’ লরির খোঁজ মিললেও প্রায় ১৬ টন লোহার রডের খোঁজ মেলেনি। ধরা পড়েনি দুষ্কৃতীরাও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:১২
Share: Save:

পুলিশ সেজে লোহার রড বোঝাই আস্ত একটি লরি লুট করে পালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। চালককে রাস্তায় ফেলে রেখে বুধবার রাতে উধাও হয়ে যাওয়া সেই লরির খোঁজ মিলল বৃহস্পতিবার, মালদহের ইংরেজবাজারে। এ দিন রাতে জাতীয় সড়কের ধারে ‘হারানো’ লরির খোঁজ মিললেও প্রায় ১৬ টন লোহার রডের খোঁজ মেলেনি। ধরা পড়েনি দুষ্কৃতীরাও।

জেলা পুলিশ জানায়, ওই দিন রাতে রানিগঞ্জ থেকে মাল বোঝাই করে অসমের ধুপগুড়িতে যাচ্ছিলেন শিবভজন ভকত। মাঝ পথেই তিনি ‘ভুয়ো’ পুলিশের খপ্পরে পড়েন বলে অভিযোগ। বুধবার রাতে সুতির সাজুর মোড় থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। হাঁটু-হাতে গভীর চোট নিয়ে রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। টহলদারি পুলিশ ভ্যান তাঁকে উদ্ধারের পরে ভুয়ো পুলিশের ঘটনাটি জানা যায়।

কী হয়েছিল ওই দিন?

শিবভজনের বক্তব্য, গাড়িটি তাঁর নিজের। দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত, মাল নিয়ে অহরহ ছোটাছুটি তাঁর। ওই দিন লোহার রড বোঝাইয়ের পরে একাই তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন অসমের ধূপগুড়ি। পুলিশকে তিনি জানান, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে সুতির মহেশাইলের কাছাকাছি আসতেই আচমকা একটি বোলেরো গাড়ি তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে তাঁর কাছে কাগজপত্র দেখতে চায়। গাড়ির কাগজের পাশাপাশি, মালের চালানও দেখান শিবভজন। তবে ‘সাদা পোশাকের’ ওই পুলিশ কর্মীরা সে সবরে তোয়াক্কা না করে তাঁকে ট্রাক থেকে নামিয়ে ওই বোলেরো গাড়িতে তুলে নেন। শিবভজন প্রশ্ন তুলতে গেলে তাঁকে জানানো হয়, তাদের লোক ট্রাক নিয়ে পিছনে পিছনে ঠিক থানায় পৌঁছে যাবে।

দীর্ঘ দিন ধরে জাতীয় সড়কে গাড়ি চালানোর ফলে পুলিশের বিবিধ ‘জুলুমবাজির’ সঙ্গে পরিচয় রয়েছে শিবভজনের। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ নানান আব্দার করে, তবে ওদের কাজকর্ম দেখে প্রথম থেকেই একটা সন্দেহ হচ্ছিল।’’ থানায় অবশ্য নিয়ে যাওয়া হয়নি তাঁকে। শিবভজন জানান, খানিক দূর যাওয়র পরেই স্বমূর্তি ধরেছিল ওই দুষ্কৃতীরা। তাঁর হাত পিছমোড়া করে বেঁধে যথেচ্ছ মারধর করা হয় তাঁকে। তার পরে ফরাক্কায় একটি ফিডার ক্যানেলের পাড়ে নিয়ে গিয়ে তাঁকে জলে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। শেষতক, নিজেরাই আলোচনা করে ঠিক করেপ্রাণে না মেরে তাকে ফেলে রাখলেই যথেষ্ট। ঘণ্টা পাঁচেক পরে সুতিক সাজুর মোড় এলাকায় তাঁকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে গাড়ি ছুটিয়ে পালিয়ে য়ায় তারা।

ওই ঘটনার প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা পরে এ দিন, রাতে ইংরেজবাজার এলাকায় রাস্তার পাসে একটি খালি ট্রাককে দাঁড়িয়ে তাকতে দেকে সন্দেহ হয় পুলিশের। নম্বর মিলিয়ে দেখায় যায় ট্রাকটি শিবভজনের কোয়া যাওয়া সেই ট্রাক। তবে ১৫ টন রডের একটিও নেই সেই ট্রাকে।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ব্যাপারে মুর্শিদাবাদ-সহ পড়শি জেলাগুলিকে ইতিমধ্যেই সতর্ক করা হয়েছে। রাস্তায় ট্রাক থামিয়ে তল্লাশিও শুরু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে ওই চালকের বক্তব্য শুনে কয়েকটি প্রশ্নও জেগেছে পুলিশের।

মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই চালকের মুখের কথা বিশ্বাস করেই তদন্তে নামতে হয়েছে। ফলে স্বাবাবিক ভাবেই ন্ত করতে হয়েছে। ফলে কিছু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।’’ কী সেই প্রশ্ন? ওই পুলিশ কর্তা জানান, প্রথমত দূর পাল্লার ট্রাকে চালকেরা সঙ্গে এক জন সহকারী রাখেন, এ ক্ষেত্রে কেউ ছিল না কেন? দ্বিতীয়ত, ওই পথে পুলিশের টহলদারি ভ্যান বেশ কিছুক্ষণ ধরেই টহল দিচ্ছিল, তাঁদের নজরে কোনও বোলেরো গাড়ি চোকে পড়েনি।

অন্য বিষয়গুলি:

cheated by police rod truck
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE