বালির ঘাটের দখল নিয়ে দু’গোষ্ঠীর বোমাবাজিতে মৃত্যু হল এক যুবকের। রবিবার ভরতপুর থানা এলাকার হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম সংলগ্ন ময়ূরাক্ষী নদীর চরে ঘটনা। মৃতের নাম আসরফ শেখ (৩২)। আসরফ হরিশচন্দ্রপুরের বাসিন্দা। তাঁর দাদা লায়ন শেখ পুলিশের কাছে পাঁচ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযুক্তরা পলাতক। পুলিশ তাঁদের খোঁজে এলাকায় তল্লাশি শুরু করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বালির ঘাটের দখল নিয়ে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা অভিযুক্ত লালু শেখের পরিবারের সঙ্গে আসরফের পরিবারের দীর্ঘ দিনের বিবাদ রয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “দুই পরিবারের মধ্যে পুরনো বিবাদ ও বালির ঘাটের দখল নিয়ে দু’গোষ্ঠীর বোমাবাজিতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’
মৃতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে খবর, পেশায় আলু ব্যবসায়ী আসরফ সম্প্রতি নিজের বাড়ি পাকা করার কাজ শুরু করেছে। সে জন্য বাড়ির পাশে ময়ূরাক্ষী নদী থেকে বালি আনার জন্য বড়ঞা থানা এলাকার বাসিন্দা জামাইবাবু নূরমান শেখের কাছ থেকে দিন ক’য়েকের জন্য সে একটি ট্রাক্টর নিয়ে আসে। নদীর চরের যে এলাকা থেকে সে বালি তুলছিল বলে স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, সেখানে দাপট রয়েছে অভিযুক্ত লালুর। অভিযোগ, সেই এলাকা থেকে বালি তোলার জন্যে সে রাস্তাও তৈরি করেছে। আসরফ সেখান থেকে বালি তুলছে, তা জেনে লালু তাঁকে বালি তুলতে নিষেধ করে বলে স্থানীয়েরা জানিয়েছেন। সেই বালি তোলাকে ঘিরেই দু’পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়।
লালুর নিষেধকে উড়িয়ে রবিবার সকালে আসরফ কিছু সঙ্গীকে নিয়ে ট্রাক্টরে চেপে চর থেকে বালি আনতে গেলে দু’পক্ষের তুমুল বচসা হয়। এরপরই বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলেই আসরফ শেখের মৃত্যু হয়। গোটা ঘটনাটি ঘটে হরিশচন্দ্রপুর গ্রাম থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ময়ুরাক্ষী নদীর চরে। নদী থেকে এ ভাবে কী বালি তোলা যায়? স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, বালি তোলার কোনও ঘাট নেই। গ্রামের যার যখন বালির প্রয়োজন হয়, সে তখন নদী থেকে বালি তুলে নিজের কাজ করে। গত সাত বছর ধরে স্থানীয় কয়েক জন গায়ের জোরে ঘাটের সীমানা ঠিক করে বালি বিক্রি শুরু করেছেন। তা নিয়ে মাঝে মধ্যে গ্রামে গোলমালও হয়। এমনকী বোমাবাজির ঘটনাও বিরল নয়। তাঁদের কথায়, ‘‘স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা সবই জানেন। কিন্তু, কেউই কোনও ব্যবস্থা নেয় না। ফলে অপরাধীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে।’’ তাঁরা চান, প্রশাসন এ বার অন্তত পদক্ষেপ করুক।
আসরফের স্ত্রী আমিনা খাতুন বলেন, “আমার স্বামী জামাইবাবুর কাছ থেকে ট্রাক্টর এনে নদী থেকে বালি আনাতে গিয়েছিল। বালির ঘাটে কে বা কারা ওকে বোমা মেরে খুন করেছে।’’ আমিনার কথায়, ‘‘ওর সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের যোগ ছিল না। আলুর ব্যবসা করত।’’ তবে গ্রামের তৃণমূলের নেতা তথা ওই যুবকের খুড়তুতো দাদা মমিন শেখ বলেন, “ভাই তৃণমূল করত। আর ওকে যারা খুন করেছে সেই লালু শেখ ও তার দলবল কংগ্রেস করে। বালি আনতে গিয়ে ঘাটেই গোলমাল হয়েছে। ওকে এমন ভাবে মরতে হবে ভাবিনি।’’
তৃণমূলের ভরতপুর ১ ব্লকের সভাপতি সৈয়দ রফিকুল হোসেনের অবশ্য অভিযোগ, ‘‘কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা পরিকল্পিত ভাবে দলের সমর্থক আসরফকে বোমা মেরে খুন করেছে।’’ তিনি চান, পুলিশ দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক। তৃণমূলের দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেসের কান্দি মহকুমা সভাপতি দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অভিযুক্ত হিসাবে যার নাম উঠেছে সেই লালু কংগ্রেসের এক জন সমর্থক মাত্র। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে কংগ্রেস জড়িত নয়।’’ বালির ঘাট দখল নিয়ে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে দেবাশিসের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy