লালবাগের জুলেখা খাতুনকে চেনে না কান্দি মহকুমার মিলি ঘোষ, হরিবরপাড়ার ফজিলা খাতুন, মল্লিকা খাতুন কিম্বা নিশ্চিন্তপুরের রাখী বেজ। তা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে একটা জায়গায় দারুণ মিল! বছর খানেক আগে নবগ্রাম সিঙ্গার হাইস্কুলের ছাত্রী জুলেখা মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নবগ্রামের বিডিও-র কাছে গিয়ে নিজের বিয়ে ভেস্তে দেওয়ার আবেদন জানান। ব্লক প্রশাসনের কর্তারা বিয়ে রুখে দেন।
সেই রাগে জুলেখার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেন পরিবারের লোকেরা। স্কুলের জীবনবিজ্ঞানের পরীক্ষাগারে থেকে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় জুলেখা। পাশ করে। এখন হোমে থেকে বহরমপুর কাশীশ্বরী উচ্চ-বালিকা বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে।
জুলেখার মতোই পরিবারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, নিজেদের বিয়ে রুখে এ বছর মুর্শিদাবাদ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে ছয় লড়াকু মেয়ে। মিলি, ফজিলা, মল্লিকা, শামিমা, রাখী আর প্রিয়া। এর মধ্যে হরিহরপাড়ার বাসিন্দা তিন কন্যা। রুকুনপুর হাইস্কুলের ফজিলা খাতুন, চোঁয়া বিবিপাল বিদ্যানিকেতনের মল্লিকা আর মালোপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের শামিমা। তাদের পড়াশোনা করার অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মানতে হয় পরিবারকে।
হরিহরপাড়া ব্লকের ৮১ জন নাবালিকার পাশে দাঁড়িয়ে বিয়ে ভেস্তে দিয়েছিলেন সমাজকর্মী জাকিরুন বেগম। তিনি বলেন, ‘‘সবচেয়ে মজার কথা, এ দিন ওই তিন ছাত্রীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের অভিভাবকরাই। পরীক্ষার শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন কেন্দ্রে। যাঁরা কয়েক মাসে আগেও মেয়ের বিয়ে দিতে মরিয়া ছিলেন, পাত্র এবং বিয়ের তারিখ পাকা করে ফেলেছিলেন তাঁরাই আমূল বদলে গিয়েছেন। এখানেই আমাদের আন্দোলনের সাফল্য।’’
শামিমার বাবা সামসুদ্দিন শেখ, ফজিলার মা রোশেনারা বিবি এবং মল্লিকার মা পারভিনা বিবি—তিন জনেই খুশি মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ায়। চোঁয়া পঞ্চায়েতের কিশোরী যোদ্ধা কো-অর্ডিনেটর আশাপূর্ণা বিশ্বাসের কথায়, ওরা তিন জন পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসার সময়ে ওদের বাবা-মায়ের চোখ-মুখ দ্বলদ্বল করছিল। হরিহরপাড়া ব্লকের বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যাল জানান, পুঁতিগত শিক্ষার পাশাপাশি ওই কিশোরী যোদ্ধারা সামাজিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠতে পেরেছে বলেই প্রতিবাদের সাহস পেয়েছে।
গত ৫ মার্চ বড়ঞার বিডিও-র কাছে গিয়ে নিজের বিয়ে রোখার আবেদন জানিয়েছিল পাঁচথুপীর পাঁচথুপি শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মিলি ঘোষ। ব্লক প্রশাসনিক কর্তাদের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত ওই কিশোরী এ দিন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পেরেছে। বড়ঞা থানার সাটিতারা উচ্চবিদ্যালয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে এসে মিলি বলেন, ‘‘পরীক্ষা ভাল হয়েছে। গত এক মাস ধরে বাড়িতে বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছিল। খুব মানসিক অশান্তিতে ছিলাম। ওই অশান্তি না থাকলে প্রস্তুতি আরও ভাল হতো।’’
বিয়ে রুখে দিয়েছিল নিশ্চিন্তপুর হাইস্কুলের প্রিয়া খাতুন এবং রুকুনপুর হাইস্কুলের রাখী বেজও। তারাও এ দিন মাধ্যমিকে বসেছে। আত্ম-প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম ধাপ ছুঁয়ে ফেলেছে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy