ভবানী ভবন থেকে বেরিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সুমন বল্লভ।
রানাঘাটের মিশনারি স্কুলে লুটপাট ও ধর্ষণের ঘটনার তদন্তের ভার মুখ্যমন্ত্রী সিবিআইকে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন বুধবার। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রানাঘাটের ওই কনভেন্ট ও লাগোয়া এলাকায় সিআইডির সক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। এ দিন সকাল দশটা থেকেই প্রচণ্ড তৎপর হয়ে ওঠে সিআইডি। রাত পর্যন্ত তারা রানাঘাটের ওই স্কুল এবং তার সংলগ্ন এলাকা রীতিমতো চষে ফেলে।
একই সঙ্গে এ দিন বিকেলে রাজ্য পুলিশের সদর দফতর ভবানী ভবনে আচমকাই গিয়ে হাজির হন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে তিনি চলে যান চারতলার সিআইডি সাইবার সেলে। সিআইডি-র প্রধান এডিজি-সিআইডি রাজীব কুমার তখন ভবানী ভবনে ছিলেন না। ছিলেন ডিআইজি (সিআইডি) দময়ন্তী সেন এবং অন্যান্য অফিসাররা। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ দেখেন, যার মধ্যে রানাঘাটের ঘটনাটির বিষয়ে ফুটেজও ছিল। তিনি সিআইডি অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি একবার রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডির ঘরেও যান। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই সময়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি পুরভোট সংক্রান্ত বৈঠক করছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন শুনে তাঁরা দেখা করতে যান। প্রায় ৩৫ মিনিট মুখ্যমন্ত্রী কাটান ভবানী ভবনে।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, ঘটনার চার দিন পরে মুখ্যমন্ত্রী সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর, পঞ্চম দিনে কেন রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের এমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে?
এ দিন রানাঘাটে সকাল ১০টা নাগাদ সিআইডি-র তিন আধিকারিক ওই কনভেন্টে ঢোকেন। তাঁরা অফিসঘর ও সিস্টারদের আবাসন ঘুরে দেখেন, ছবি তোলেন। সেই সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে সেগুলোরও স্কেচও করানো হয়। বেলা দু’টো নাগাদ ঝাড়খণ্ডের নম্বরপ্লেট লাগানো একটি গাড়ি এসে থামে স্কুলের কাছে। মুহূর্তেই রটে যায়, সিবিআইয়ের গাড়ি এসেছে। সেই গাড়ি দেখেই ছোটাছুটি শুরু করে দেন স্থানীয় লোকজন ও সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। পরে অবশ্য সকলেই জানতে পারে সিআইডি-র একটি বিশেষ দল ওই গাড়িতে এসেছে। ওই অফিসাররা এর আগে এ রকম কয়েকটি ঘটনায় সফল হয়েছে বলেও সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে।
বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ ওই স্কুলে ঢোকেন এডিজি (সিআইডি) রাজীব কুমার। তিনি অন্যান্য আধিকারিকদের পরামর্শ দেন। কথা বলেন স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও।
সিআইডি এবং স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন এলাকার বেশ কয়েকটি প্লেসমেন্ট এজেন্সির দফতরে যান সিআইডি কর্তারা। গত এক মাসের নথিভুক্তির তালিকা খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। এ দিন স্কুল-লাগোয়া বেশ কয়েকটি এজেন্সির অফিসে গিয়ে কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। সিআইডির আধিকারিকরা কথা বলেছেন ওই এজেন্সির মালিকদের সঙ্গেও। এ রকমই এক মালিক বলেন, “আমরা কখন দোকান, খুলি, বন্ধ করি, ঘটনার দিন অর্থাৎ শুক্রবার রাতে কখন দোকান বন্ধ করেছিলাম, এ সবই জিজ্ঞাসা করেছেন ওই অফিসারেরা। আমরা সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। বলেছি, প্রয়োজনে সব রকম সহযোগিতা করব।”
গোয়েন্দা কর্তাদের অনুমান, রীতিমতো পরিকল্পনা করেই স্কুলে ডাকাতি করা হয়েছে। ডাকাতির আগে ওই এলাকায় এসে ঘুরেও গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। সেই সময়ে স্থানীয় প্লেসমেন্ট এজেন্সিগুলিতেও তাঁরা যেতে পারে। এ ছাড়া ওই এলাকার লজগুলিতে ঘটনার সময়ে থাকা বাসিন্দাদের তথ্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেরা করা হয়েছে স্কুল লাগোয়া এলাকার বেশ কয়েক জন বাসিন্দাকেও। সিআইডি-র এক কর্তার কথায়, “কিছু তথ্যে অসংগতি থেকে যাচ্ছে। তাই দুষ্কৃতী দলটিকে চিহ্নিত করতে অসুবিধা হচ্ছে।”
সিবিআইয়ের হাতে তদন্ত যাওয়ার সিদ্ধান্ত রাজ্য নেওয়ার পরেও সিআইডি কেন সক্রিয়?
রাজ্য সরকারের ব্যাখ্যা, সিবিআই তদন্ত শুরু হতে এখনও সময় লাগবে। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে তবেই সিবিআই তদন্তভার গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু সিবিআই তদন্তভার নেওয়ার আগে তথ্য সংগ্রহে কোনও খামতি রাখতে চাইছেন না সিআইডি অফিসাররা।
আর সে কারণেই গাংনাপুর থানায় নিয়মিত যাচ্ছেন সিআইডি অফিসারেরা। বৃহস্পতিবার প্রায় সারা দিনটাই গাংনাপুর আর রানাঘাট থানা এলাকায় কাটান এডিজি (সিআইডি) রাজীব কুমার। দু’টি দলে ভাগ হয়ে বেশ কয়েকটি অভিযান চালায় সিআইডি। এ দিনই স্কুলে কর্মরত প্রায় সমস্ত কর্মীর সঙ্গে কথা বলা হয়। স্কুলের কর্মীদের ইতিহাসও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিআইডি একাংশের মতে, স্কুলের সঙ্গে জড়িত কেউ ছাড়া এত বড় কাণ্ড ঘটানো প্রায় অসম্ভব। স্কুলে নিয়মিত আসা লোকেদের তালিকাও এ দিন নিয়েছে সিআইডি। তার ভিত্তিতেও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। সিআইডিতে কর্মরত নদিয়ার পুরোনো অফিসারদেরও তদন্তে নেওয়া হয়েছে।
এমন তৎপরতা দেখে তাজ্জব এলাকাবাসী। তাঁদের এক জনের বক্তব্য, “দেখে মনে হচ্ছে, সিআইডি এইমাত্র যেন তদন্ত শুরু করল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy