ঘন ঘন গেট পড়ে। যানজটে জেরবার বহরমপুর। গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
• শহরে বাস প্রচুর। সেই তুলনায় বাসস্ট্যান্ডের আয়তন কম। চুঁয়াপুর ও স্বর্ণময়ী রেলগেটে উড়ালপুল না আজও হল না। স্বর্ণময়ীর সব্জি বাজার বাড়তে বাড়তে রাস্তায় উঠে এসেছে। অগুনতি টোটোর দাপটে রাস্তায় এখন পা রাখা দায় হয়ে পড়েছে। এই দশা থেকে পরিত্রাণ কি আদৌ মিলবে?
ভবানীপ্রসাদ চক্রবর্তী, ১১ নম্বর ওয়ার্ড
বাসের অনুপাতে সত্যিই বাসস্ট্যান্ডের জায়গা ছোট। পুলিশ, প্রশাসন, বাস মালিক, পুরসভা নিয়ে বাসস্ট্যান্ড সমন্বয় কমিটি গড়া হয়েছে। যানজট কমাতে সমন্বয় কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ৪০-৫০টি বাস সেখানে থাকবে। বাস রুটে নিয়ে যাওয়ার ১০ মিনিট আগে স্টেডিয়ামের কাছ থেকে বাস টার্মিনাসে নিয়ে যাওয়া হবে। যানজট মোকাবিলায় ট্রাফিক ওয়ার্ডেনরা যথাযথ ভূমিকা পালন না করলে ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হবে। স্বর্ণময়ী বাজার পঞ্চায়েত এলাকায়। যানজট কমাতে পুরসভা বাজার লিজ চেয়েও পায়নি। রেলের পক্ষ থেকে টেন্ডার ও টাকা বরাদ্দ করা সত্ত্বেও রাজ্য নো অবজেকশন সার্টিফিকেট না দেওয়ায় উড়ালপুল হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশে উড়ালপুলের কাজ শুরু হতে চলেছে। পুরসভা ১২০০ টোটোর লাইসেন্স দিয়েছে। কিন্তু শহরে চলে প্রায় ১৪ হাজার টোটো। যানজট এড়াতে বাইরের টোটো শহরে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
• ব্যারাক স্কোয়ার ও লালদিঘি বহরমপুর শহরের গর্ব। কিন্তু ১৬ নম্বর ওয়ার্ড ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড যেন এই শহরের ক্যান্সার। টোল ট্যাক্স আদায় করা হলেও এখানের বিষ্ণুপুর ও বাবুলবোনা রোড় হামেশাই চলার অযোগ্য হয়ে উঠে। মশা মারার তেল ছড়ানো হয় না। গলি পরিষ্কার হয় না। আজও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের অনেক রাস্তা কাঁচা। যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য বিদ্যুতের ব্যাপক অপচয় হয়। এই সব বিষয়ে পুরসভা কী ভাবছে?
শিবাজি সরকার, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড
বাবুলবোনা রোডের মালিকানা নিয়ে মামলা চলছে। হাইকোর্টের রায়ে টোল ট্যাক্স আদায় করা হলেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেই টাকা খরচ করা হয় না। তবুও পরিস্থিতির দিকে চেয়ে প্রতি বার ৪ -৬ কোটি টাকা খরচ করে ৪ বার ওই রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু ৯ টন বহনের উপোযোগী ক্ষমতার রাস্তায় ৮০-৯০ টন মালের গাড়ি চলায় রাস্তা দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে। আবার সেই মানের রাস্তা রাস্তা গড়ার মতো আর্থিক ক্ষমতাও পুরসভার নেই। ২৫টি ওয়ার্ডে মশার লার্ভা মারার তেল ছড়ানোর জন্য ৬টি মেশিন থাকায় সব এলাকায় অল্প সময়ের ব্যবধানে পৌঁছনো যায় না। বিদ্যুত অপচয় রোধ করতে এলইডি লাইট লাগানো হবে।
• রেললাইনের পাশেই বাড়ি। বাড়ির পাশেই ১৬ নম্বরের রায়কানন। রেলের একটি কার্লভাট আছে বটে, তবে সেখান দিয়ে জল ভালভাবে বেরোয় না। দূষিত জল জমে থাকে ওই এলাকায়। ওই নিকাশি নালার উপর পিলার তুলে দোকানঘর গড়ে ওঠায় জলে ডুবে থাকতে হয়। এর আগে আপনাকে এ বিষয়ে বলেছি। দু’চারটে শ্রমিক পাঠিয়ে ঠেকা দেওয়া হয় মাত্র। তাতে স্থায়ী সমাধান হয় না। তবে আমাদের কি ডুবেই থাকতে হবে?
সন্তোষকুমার সরকার, ৯ নম্বর ওয়ার্ড
ওই এলাকার রেললাইনের ধারে শয়ে শয়ে বস্তি গড়ে উঠেছে। তারপর ওই নিকাশি ব্যবস্থাটাও ইংরেজ আমলের। রেললাইনের ওপারের এলাকা জেলা পরিষদের। ফলে ওই নিকাশি সমস্যা নিয়ে এর আগে জেলা পরিষদ এ রেলের সঙ্গে কথা বলেছি। ফের কথা বলব। নিকাশি দখল করে গড়ে ওঠা দোকান উচ্ছেদে পুলিশি সহায়তা পাওয়া যায় না। কিছুদিন আগে গঙ্গার ধারের জবরদখল উচ্ছেদের সময় আমরা আক্রান্ত হলেও পুলিশ দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল। ফলে জবরদখল উচ্ছেদে মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
• এখন সারা বছরই যেন চৈত্র সেল। সারা রাস্তা জুড়ে দোকান। তার উপর রয়েছে পদে পদে টোটোর গুঁতো। আমাদের মতো বয়স্কদের রাস্তা চলা দায় হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্রসদনের সামনে রেজাউল করিম, মণীষ ঘটক প্রমুখদের প্রতিকৃতি দিয়ে অলঙ্কৃত ‘সাংস্কৃতিক অঙ্গন’ গড়ায় সাধুবাদ পেয়েছে পুরসভা। কিন্তু এখন রাত ৮টার পর সেই সাংস্কৃতিক অঙ্গন অন্য ধরনের সংস্কৃতির চর্চা চলে। তার খবর কি পুরসভার কাছে রয়েছে?
প্রীতেশ লাহিড়ি, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড
যানজট থেকে মুক্তি পেতে ট্রাফিক ওয়ার্ডেন রয়েছে। পুলিশের দ্বারা পরিচালিত ওই ওয়ার্ডেনদের মাসিক ভাতা বাবদ ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা পুলিশকে দেওয়া হয়। তারপরও যানজট না কমায় কোন ওয়ার্ডেনকে কোথায় নিয়োগ করা হয় তার ‘ডিউটি চার্ট’ পুলিশের কাছে চেয়েছি। তাঁরা যানজট কমাতে সঠিক ভাবে কাজ না করলে ভাতা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সংস্কৃতি চর্চার বদলে ক্যারাম খেলার মতো কিছু অভিযোগ কানে এসেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।
• শহিদ সূর্য সেন রোডে কিছু গৃহস্থ যেখানে-সেখানে, যখন তখন আবর্জনা ফেলেন। ফলে গলি নোংরা হয়। পরিবেশ দূষিত হয়।
নীলাঞ্জনা চৌধুরী, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড
আবর্জনা না ফেলার জন্য প্রথমে নোটিস দেওয়া হবে। তাতে যদি কাজ না হয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরসভার সাফাই কর্মীরা সকালে আবর্জনা নিয়ে চলে যাওয়ার পর ফের আবর্জনা জমলে তা যেন গৃহস্থরা নিজেদের বাড়িতে রাখেন। পরদিন সাফাই কর্মীকে সেই আবর্জনা দেবেন। এটাই আমাদের আবেদন। না হলে পরিবেশ পরিষ্কার থাকবে না।
• মোটরবাইকের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। বিশেষত ব্যারাক স্কোয়ার মাঠে ও তার চারপাশের ক্যান্টনমেন্ট রোডে প্রাতঃভ্রমণ ও সান্ধ্যভ্রমণের সময় আমাদের মতো বৃদ্ধদের মোটরবাইকের দাপটে সিঁটিয়ে থাকতে হয়। ওই সময় যদি ওই এলাকায় মোটরবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করা হয় বা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তবে উপকৃত হই।
বিমান মুখোপাধ্যায়, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড
মোটরবাইকে চলাচল ও গতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।
• মধুপুর জামতলা পুকুরের কাছে একটি বাজার, পুকুর সংস্কারও বিষ্ণুপুর বিলের উপর দিয়ে একদিকে ইন্দ্রপ্রস্থ ও অন্য দিকে, সেরিকালচারের পাশ দিয়ে প্রস্তাবিত রাস্তা আজও হল না কেন? রাস্তার পাশে শৌচালয় না থাকায় বিপাকে পড়েন পথচারীরা।
সনাতন মণ্ডল, ৯ নম্বর ওয়ার্ড
জামতলার কাজের পুকুরটি পুরসভার নয়। ফলে পুরসভার পক্ষ থেকে সংস্কার করা সম্ভব নয়। তবে বাজার, রাস্তা ও শৌচালয় নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। আর্থিক সামর্থ্য এলেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এগুলি করা হবে।
• এলাকার নিকাশি নালাগুলি ভেঙে গিয়েছে। এ ছাড়া নালাগুলি খুবই শুরু। জল জমে থাকে। ওই নালাগুলি সংস্কার করা খুব ভাল হয়।
সন্ধ্যা ধর দত্ত, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড
নালাগুলি সংস্কার করা হবে। কিন্তু সেই সঙ্গে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক-পলিথিন ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে নাগরিকদের নিজেদের উদ্যোগে। মাংস, মাছ ও মিষ্টির দোকানে গিয়ে পলিথিনের ক্যারিব্যাগ চাওয়ার অভ্যাস পুরোপুরি বিসর্জন দিতে হবে। না হলে নিকাশি নালায় জল জমে বিপদ বাড়াবে।
• পুরসভা থেকে কোনও এলাকায় দু’বার, কোনও এলাকায় তিনবার জল সরবরাহ করা হয়। এই বৈষম্য কেন? বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের পূর্ব ঘোষিত প্রকল্প আজও কার্যকর হয়নি।
বিমলকুমার রায়, ৯ নম্বর ওয়ার্ড়
ভূগর্ভের জল ও ভাগীরথীর জল— এই দু’টি পৃথক উৎস থেকে পৃথক ভাবে শহরে জল সরবরাহ করা হয়। ওই দু’টি পদ্ধতিকে মিলিয়ে দিয়ে একটি পদ্ধতিতে জল সরবরাহ করার কাজ চলছে। যে এলকায় এটা সম্পন্ন হয়েছে সেই এলাকার বাড়িতে দু’বার জল সরবরাহ হচ্ছে। বাকি এলাকায় কাজ সম্পন্ন হলে সব এলাকাতেই সমান ভাবে জল সরবরাহ করা হবে।
• খাগড়ার বড়মুরিরধারের বড় মসজিদ থেকে ছোট সাঁকো পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় হাজার দুয়েক মানুষের পানীয় জলের জন্য রয়েছে মাত্র একটি ট্যাপকল। সেটি খারাপ হয়ে গেলে ৮-১০ দিনের আগে মেরামত করা হয় না। নিকাশিনালার অবস্থাও শোচনীয়।
শাহ আলম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড
পুরসভার পক্ষ থেকে এলাকা সরেজমিন খতিয়ে দেখে ট্যাপ ও নিকাশি নালার সুব্যবস্থা করা হবে।
• পিয়াসির গলি দিয়ে ইন্ত্রপ্রস্থে কম সময়ে যাওয়া যায়। ফলে রাস্তাটি জনবহুল। গলির পাশে গভীর নালা। রেলিং বা দেওয়াল না থাকায় ওই নালায় হামেশাই পথচারীরা সাইকেল, স্কুটি, বাইক নিয়ে পড়ে গিয়ে আহত হন। দ্রুত রেলিং বা দেওয়াল চাই।
মালা বাগচী, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড
পিয়াসির গলিতে খানিকটা এলাকায় রেলিং রয়েছে। খতিয়ে দেখে প্রয়োজন থাকলে বাকি অংশটাতেও রেলিং দেওয়া হবে।
• বছর তিনেক হল বাড়ি করেছি। বাড়ির সামনে ৮ ফুট কাঁচা রাস্তা আজও ঢালাই হয়নি। পিচ বা পাথর পড়েনি। নিকাশিরও কোনও ব্যবস্থা নেই। ভোটের পর কাউন্সিলের দেখা নেই। ওয়ার্ড কমিটির অস্তিত্ব আছে বলে আমার জানা নেই।
সমিত মণ্ডল, ২২ নম্বর ওয়ার্ড
ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করব।
• ভোট এলেই শোনা যায়, গঙ্গার ধারের বস্তির জন্য বহুতল আবাসন করে নদীপাড়ের সৌন্দর্যায়ন কর হবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা আজও বাস্তবায়িত হল না কেন?
পার্থ কর, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড
গঙ্গাপাড়ের জমির কোনও এলাকার মালিক ভূমি দফতর, কোনও এলাকার মালিক বন দফতর, কোনও এলাকার মালিক সেচ দফতর। বস্তির মানুষদের সরকারি দফতর থেকে জমির পাট্টা পেতে হবে। পাট্টা পেলেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ প্রকল্প থেকে প্রায় বিনা খরচে বহুতল আবাসন গড়ে বস্তির মানুষদের ফ্ল্যাটের মালিকানা দেওয়া হবে। তার জন্য আগে প্রয়োজন জমির পাট্টা। সেই পাট্টার ব্যাপারে অনেক বার ভূমি দফতর ও জেলাশাসকের কাছে পুরসভার পক্ষ খেকে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও সদর্থক পদক্ষেপ সরকারি দফতর থেকে নেওয়া হয়নি।
• ঢাকনাহীন গাড়িতে শহরের আবর্জনা বহন করা হয়। উপচে পড়া আবর্জনা রাজপথে ছিটকে পড়ে। পরিবেশ দূষিত হয়। কখনও পথচারীর গায়েও আবর্জনা পড়ে।
নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, ১০ নম্বর ওয়ার্ড
আবর্জনা ফেলার জন্য স্বচ্ছ ভারত মিশন থেকে কেন্দ্র সরকার সম্প্রতি দু’টি অত্যাধুনিক গাড়ি দিয়েছে। তাতে ঢাকনা রয়েছে। ওই গাড়িতে আবর্জনা ফেললে স্বয়ংক্রিয় ভাবে আবর্জনার আয়তন দশ ভাগের এক ভাগ হয়ে যাবে। তখন রাস্তায় আবর্জনা ছিটিয়ে পড়ার সম্ভবনা থাকবে না। ওই আবর্জনা থেকে জৈবসার ও ইট তৈরি হবে। তাতে আয় বাড়বে পুরসভার।
• বাড়ির কর কী ভাবে ধার্য করে পুরসভা? এলাকার গুরুত্বের উপর ভিত্তি করে, না কি অন্য কোনও পদ্ধতিতে?
নমিতা সাহা, ৩ নম্বর ওয়ার্ড
বাডির কর পুরসভা নির্ধারণ করে না। কর ঠিক করে রাজ্য সরকারের ‘পশ্চিমবঙ্গ কর মূল্যায়ন পর্ষদ’। বাড়ি ও ফ্ল্যাটের গুরুত্ব, অর্থাৎ টাইলস, মোজাইক, মেঝে— এ জাতীয় নানা বিষয় দেখে কর নির্ধারিত হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy