ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
রাতদুপুরে হঠাৎ ঘুমন্ত পাড়া কেঁপে উঠেছিল বিকট বিস্ফোরণের শব্দে! ধড়মড়িয়ে উঠে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন অনেকেই। দেখা যায়, রাস্তায় এক পাশে একটি দোতলা বাড়ির উপরের তলার দেওয়ালগুলি বিস্ফোরণের ধাক্কায় গুঁড়িয়ে গিয়েছে! মনে হচ্ছে যেন, ভূমিকম্প হয়ে গিয়েছে! চারদিকে ভাঙা ইটের স্তূপ, পাথরের চাঁই। ছিটকে গিয়েছে কাঠের দরজা-জানালা। দোতলা থেকে নীচে ছিটকে পড়েছে গ্যাসের সিলিন্ডার।
কৃষ্ণনগরের নগেন্দ্রনগরে বুধবার রাতের এ হেন ঘটনায় শহর তোলপাড়। প্রথম দিকে বিস্ফোরণ নিয়ে অনেকরকম কথা শোনা যাচ্ছিল। ওই বাড়িতে বোমা বা বিস্ফোরক রাখা ছিল কিনা, এমন প্রশ্নও ওঠে। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, গ্যাসের সিলিন্ডার লিক করার ফলেই এই দুর্ঘটনা। গোটা ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বাড়ির মালিক চাণক্য রায় কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক অফিসের কর্মী। দোতলা বাড়ির উপরে থাকেন তিনি ও তাঁর মা বছর তেষট্টির শিখা রায়। এক তলায় অন্য একটি পরিবার ভাড়া থাকে। বুধবার রাতে দোতলায় রান্না ঘরের ঠিক পাশের ঘরেই শুয়ে ছিলেন চাণক্যবাবু ও তাঁর বৃদ্ধা মা। রাত পৌনে দুটো নাগাদ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। রান্না ঘরের দেওয়াল হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। অন্য দেওয়ালগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জিনিসপত্র ছত্রাখান হয়ে যায়। চাণক্যবাবুর দাবি, “বিস্ফোরণের শব্দে আর ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে যায়। দেখি চার দিকে সব ভেঙেচুরে গিয়েছে। কোনওমতে মাকে নিয়ে দোতলা থেকে নেমে আসি। রান্নাঘরে ফ্রিজের উপরে সামান্য আগুন দেখেছিলাম।’’ বিস্ফোরণে বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। তছনছ হয়ে রয়েছে সমস্ত আসবাবপত্র। যদিও রান্নাঘর থেকে শুরু করে বাড়ির কোথাও কোনও আগুন লাগা বা ধোঁয়ার চিহ্ন মেলেনি।
রাতেই খবর পেয়ে পুলিশ আসে। বৃহস্পতিবার সকালে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর) আমনদীপ, ডিএসপি সদর সুব্রত সরকার। ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত কিছু নমুনা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দিন দু’য়েক আগেই গ্যাসের নতুন সিলিন্ডার এসেছিল বাড়িতে। বৃহস্পতিবার তদন্তকারীরা পরীক্ষা করে দেখেন, সেই সিলিন্ডারের সিংহভাগ গ্যাস শেষ হয়ে গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, মাত্র দু’জনের রান্নার জন্য দু’দিনে এতটা গ্যাস খরচ হতে পারে না। তাঁদের অনুমান, সিলিন্ডার হয় ‘লিক’ ছিল, নয়তো কেউ ওভেন ব্যবহার করে গ্যাসের নব বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলেন। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় সেই গ্যাস বের হতে পারে নি। এই আবস্থায় কোনও ভাবে আগুনের ফুলকিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
এখন প্রশ্ন হল, আগুনের ফুলকি এল কোথা থেকে? তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ফ্রিজটা অনেক পুরনো। তার ডালা খোলা ছিল। ভিতরে আনাজ ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিটকে পড়েছিল। তাঁরা নিশ্চিত যে, ফ্রিজের ভিতরেই কিছু ঘটেছিল। সম্ভবত ফ্রিজে শর্টশার্কিট হয়ে আগুনের ফুলকি ছড়িয়েছিল। তার থেকেই গ্যাসে বিস্ফোরণ হয়। চাণক্যবাবুর কথায়, ‘‘আমার মা যা ভুলো মনের তাতে তাঁর পক্ষে গ্যাস সিলিন্ডার বন্ধ করতে ভুলে যাওয়াটা অসম্ভব নয়।’’ জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেছেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, গ্যাস সিলিন্ডার লিক হয়েই এই দুর্ঘটনা।” গত বছরও কৃষ্ণনগরের সদর মোড়ের একটি বাড়িতে এইরকম বিস্ফোরণ হয়। তদন্তের দায়িত্বে ছিল এনআইএ। পরে জানা যায় যে, গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে বিস্ফোরণ হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy