শিশু-সুরক্ষার দায়িত্ব যাঁদের উপরে, তাঁরাই চাপ সৃষ্টি করে সন্তানকে তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছিলেন বলে অনুযোগ করছেন মা। যদিও তিনি কোথাও লিখিত অভিযোগ করেননি।
মুর্শিদাবাদে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি থাকা ওই মায়ের অভিযোগের তির মূলত দক্ষিণ দিনাজপুর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) লোকজনের বিরুদ্ধে। তাঁরা বলছেন, মায়ের ‘কাউন্সেলিং’ করাই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু কেন মুর্শিদাবাদের সিডব্লিউসি-কে কিছু না জানিয়ে তাঁরা সটান হাসপাতালে হাজির হলেন, সেই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।
বহরমপুরের মানসিক হাসপাতাল সূত্রের খবর, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক জয়িতা মুখোপাধ্যায়, জেলা সিডব্লিউসি-র দুই সদস্য মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী ও শিউলি সরকার, স্টেট অ্যাডপশন এজেন্সির (সা) নওপাড়া টিওর সমাজকল্যাণ সমিতির জেলা কো-অর্ডিনেটর স্বপন গোস্বামী সোমবার সরকারি গাড়িতে এসে সরাসরি সুপারের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে রয়েছেন বাংলাদেশের নাগরিক আরজুআরা, যাঁর শিশুকন্যা দক্ষিণ দিনাজপুরে ‘সা’-এর আওতায় আছে। তাকেও সঙ্গে আনা হয়েছিল।
আরজুআরা নামে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরে চলে এসেছিলেন। পরে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ তাঁকে ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে দেখে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তির বন্দোবস্ত করে। সেখানেই তিনি একটি কন্যার জন্ম দেন। পরে আদালতের নির্দেশে ২০১৫ সালের ১০ জুন তাঁকে বহরমপুরের মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সুপার প্রশান্ত চৌধুরী জানান, গত বছর জুলাইয়ে মেডিক্যাল বোর্ড তাঁকে সুস্থ ঘোষণা করে। এসিজেএম আদালতে তা জানিয়েও দেওয়া হয়। শিশুটি রয়ে যায় জেলা হাসপাতালেই। সিডব্লিউসি তাকে নওপাড়া টিওর সমাজকল্যাণ সমিতিতে থাকতে পাঠায়।
আরজুআরার অনুযোগ, দক্ষিণ দিনাজপুরের কর্তারা এসে শিশুটিকে ‘দত্তক’ দেওয়ার জন্য তাঁর উপরে চাপ সৃষ্টি করছিলেন। একটি সাদা পাতায় টিপসই দিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করেন তাঁরা। মুর্শিদাবাদ জেলা সিডব্লিউসি-র চেয়ারপার্সন শবনম রামস্বামী বলেন, ‘‘মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে লিখিয়ে নিয়ে সন্তান দত্তক দেওয়া অপরাধের সামিল। ওঁদের উচিত ছিল আমাদের চিঠি দিয়ে গোটা বিষয়টি জানানো। ওঁদের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চাইব, কেন এমনটা ঘটল।’’
দক্ষিণ দিনাজপুর সিডব্লিউসি-র চেয়ারপার্সন চিরঞ্জীব মিত্র বলেন, ‘‘মায়ের সঙ্গে সন্তানের দেখা করাতে চার জন ওখানে যান। মুর্শিদাবাদ সিডব্লিউসি-কে কেন জানানো হয়নি, তা সংবাদমাধ্যমকে বলতে বাধ্য নই। মায়ের সঙ্গে ওঁদের কী কথোপকথন হয়েছে, আমি সেটা খোঁজ নেব।’’
ওয়েস্ট বেঙ্গল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস-এর চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কী ঘটেছে, খোঁজ নিচ্ছি। তবে মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সন্তান দত্তক দেওয়ার চেষ্টা ঠিক নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy