নিজের বিয়ে নিজেউ রুখল ছাত্রী। প্রতীকী চিত্র।
যাবতীয় বাধা ঠেলে, অভাব সয়ে স্বপ্ন দেখেছিল কিশোরী। সেই স্বপ্ন সফল করার পথে শুরু হয়েছিল তার উড়ান। কিন্তু মাধ্যমিকে ৭৫ শতাংশ, একাদশের কলা বিভাগে ৭৯ শতাংশ পাওয়া মেধাবী মেয়ের স্বপ্নকে খুন করতে চেয়ে জোর করে তাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন অভিভাবকেরা।
তবে কিশোরীকে দমানো যায়নি। বুক ভরা সাহস, জেদ আর চোখ ভরা স্বপ্ন সম্বল করে কৃষ্ণগঞ্জের স্বর্ণখালী পাইকপাড়া বিবেকানন্দ উচ্চবিদ্যালয়ের ১৬ বছরের ছাত্রী কোয়েল বিশ্বাস বৃহস্পতিবার পালিয়ে বাড়ি থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ধানতলার দত্তপুলিয়ায় চাইল্ড লাইনের অফিসে চলে এসেছিল। সেখানে কর্মকর্তাদের সামনে চোয়াল শক্ত করে সে বলে, "আমি আর বাড়ি ফিরতে চাই না। পড়াশোনা করে নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই।"
স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের সভাপতি কোয়েলের কথায়, ‘‘বিয়ে করতে চাইনি বলে ১৫ দিন ঘরে আটকে রেখেছিল আমাকে। এ দিন সকালে সকলের নজর এড়িয়ে পালিয়ে আসি। কন্যাশ্রীর তিন হাজার টাকা এটিএম থেকে তুলি। তার পর একটা অটো ভাড়া করে সোজা ধানতলার চাইল্ডলাইন অফিসে চলে আসি।’’
তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকান্ত সরকার বলেন, "কোয়েল অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। ও স্কুলের অন্য ছাত্রীদের কাছে উদাহরণও বটে। শিক্ষক হিসেবে আমরাও ওর পাশে রয়েছি।" নদিয়া জেলা চাইল্ড লাইনের অধিকর্তা ( শ্রীমা মহিলা সমিতি) জ্যোতির্ময় সরস্বতীর কথায়, "এই প্রথম কোনও নাবালিকা বাড়ি থেকে পালিয়ে সোজা আমাদের কাছে এসেছে। ওর পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয়, সেই ব্যবস্থাই করা হবে।" তবে কোয়েলের পিসি সুরধনী দাস দাবি করেন, ‘‘ও আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ আনছে। ওকে বিয়ে দেওয়ার কোনও চেষ্টাই করা হয়নি।’’
কোয়েলের বাবা ভিন রাজ্যে ফুটপাতে তেলেভাজা বিক্রি করে বাড়িতে টাকা পাঠান। তাঁর তিন মেয়ে। তাই ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বড় মেয়ে কোয়েলকে পাত্রস্থ করতে চেয়েছিল পরিবার। প্রতিবাদ, আপত্তি করায় জুটেছিল মার।
কোয়েল বলে, "একাদশের পর বাড়ি থেকে আর আমাকে পড়াশোনা করাতে চায়নি। এক বার জোর করে আমেদাবাদে বাবার কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পড়া বন্পধ হয়ে যাচ্ছিল। জোর করে বাড়িফিরে আসি।’’
তাঁর কথায়, ‘‘সম্প্রতি আমার বিয়ের জন্য পাত্রের খোঁজ চলছিল। বেশ কয়েক জায়গায় আমার ছবিও পাঠানো হয়েছে। আমি আপত্তি জানাতেই বাবা হাত-পা বেঁধে এক দিন প্রচণ্ড মারধর করে। ১৫ দিন আমাকে ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। যোগাযোগের জন্য ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy