Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

আলু নিয়ে বিপাকে কান্দির চাষিরাও

হিমঘরে ঠাঁই নেই, তাই মাঠেই পড়ে আছে আলু। এমন অবস্থা কান্দি মহকুমার বড়ঞা ব্লকের আলু চাষিদেরও। আলু এখন ওই ব্লকের চাষিদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার থেকে এলাকার সব ক’টি হিমঘরের গেট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সব কিছু জানার পরেও প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ।

মাটির তলাতেই রয়ে গিয়েছে বহু ফসল। কৌশিক সাহার তোলা ছবি।

মাটির তলাতেই রয়ে গিয়েছে বহু ফসল। কৌশিক সাহার তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কান্দি শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৫ ০২:০২
Share: Save:

হিমঘরে ঠাঁই নেই, তাই মাঠেই পড়ে আছে আলু।

এমন অবস্থা কান্দি মহকুমার বড়ঞা ব্লকের আলু চাষিদেরও। আলু এখন ওই ব্লকের চাষিদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার থেকে এলাকার সব ক’টি হিমঘরের গেট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সব কিছু জানার পরেও প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এ বার জেলায় আলু চাষ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে কান্দি মহকুমার বড়ঞা ব্লকের আলু চাষ হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে। এ বছর আলু চাষের খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনই আলুর ফলনও হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। অন্যান্য বছর আলু চাষ করতে বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকা খরচ করে ২৫ থেকে ৩০ কুইন্টাল ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু এ বার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। তেমনই ফলনও হয়েছে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ কুইন্টাল।

দুর্ভাগ্য, সেই ফলনই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে চাষিদের। খেতের আলু অনেকাংশেই রয়ে গিয়েছে খেতে। কারণ দাম না পাওয়ায় চাষিরা বাজারে বিক্রি করার সাহস পাচ্ছেন না। আবার হিমঘরে যে রেখে দেবেন তারও কোনও উপায় নেই। ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে বেশিরভাগ হিমঘর। মহকুমার সব হিমঘরেই উপচে পড়ছে আলু।

বড়ঞা ব্লকের সাহোড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সাহোড়া, কালিদাসপুর, ডাঙাল, শুকুরিয়া, জগনাথপুর, মেজেরা, রাইহাট, রানানগরের মতো এলাকায় গিয়ে এখনও দেখা গিয়েছে কয়েকশো বিঘা জমিতে আলু এখনও মাটির নীচে পড়ে আছে। চাষিরা সমস্বরে বলছেন, “আলু তুলে রাখব কোথায়? বাজারে গিয়ে বিক্রি করারও উপায় নেই। এক কুইন্টাল আলুর দাম ১৮০টাকা থেকে ২০০টাকা।”

জগন্নাথপুরের বাসিন্দা উত্তম বাগদি তাঁর আলুর খেতে কাজ করতে করতেই বলেন, “প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ করে তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করে ছিলাম। বিঘা প্রতি ৫০ কুইন্টাল করে ফলন হয়েছে। দু’বিঘা আলু বাজারে বিক্রি করে মাত্র ২০ হাজার টাকা হয়েছে।” এখনও এক বিঘা জমিতে তাঁর আলু আছে। তিনি ভেবেছিলেন, ওই আলু হিমঘরে রেখে দাম বাড়লে বিক্রি করবেন। কিন্তু হিমঘরগুলি সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একই অবস্থা ডাঙালের বাবন মণ্ডলের। বাবনবাবু এ বার আট বিঘা জমিতে আলু চাষ করলেও প্রথম দিকে ছয় বিঘা জমির আলু বিক্রি করে দিয়েছেন। বাকি দু’বিঘা জমির আলু হিমঘরে রাখার জন্য রাখলেও শেষে হিমঘর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিন দিন ধরে খেতে আলু তুলে বস্তাবন্দি করে আলু খেতেই পড়ে রয়েছে। বাবনবাবু বলেন, “বাড়িতে যে আলু রাখব তার জন্য অনেক জায়গার প্রয়োজন। এত জায়গা বাড়িতে নেই। আর বাড়িতে রেখে হবেটা কী? সে আলু তো নষ্ট হয়ে যাবে।” তিনি জানান, সরকার যদি সহায়ক মূল্যে আলু কেনে তাহলে হয়তো লাভ তেমন হবে না। কিন্তু খরচের টাকাটা অন্তত উঠে আসবে। একই অবস্থা সুরত ঘোষ, মিলন মণ্ডললদের। ওই চাষিদের দাবি, এলাকার হিমঘরগুলিতে আলুর রাখার জায়গা নেই। এ দিকে খেতে এখনও প্রায় দু’শো বিঘার বেশি আলু পড়ে আছে।

কান্দি মহকুমায় বড়ঞা, কান্দি, খড়গ্রাম, ভরতপুর ১ ও ২ নং ব্লক মোট পাঁচটি ব্লকের মধ্যে শুধু কান্দি ও বড়ঞা ব্লকেই হিমঘর আছে। তার মধ্যে কান্দিতে আছে দু’টি হিমঘর ও বড়ঞাতে আছে তিনটি হিমঘর। কান্দির দু’টি হিমঘরে প্রায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার বস্তা আলু মজুত করা যায়। আর বড়ঞা ব্লকের তিনটি হিমঘরে মোট ৫ লক্ষ ৪০ হাজার বস্তা আলু রাখার ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও বড়ঞা ব্লক লাগোয়া বীরভূমের রামনগর এলাকায় একটি হিমঘর আছে। যেখানে সাড়ে তিন লক্ষ বস্তা আলু রাখা যায়। ওই হিমঘরেও বড়ঞা ব্লকের চাষিদের আলুই বেশি থাকে বলেও দাবি হিমঘর কর্তৃপক্ষের। বড়ঞা ব্লকের এক হিমঘরের মালিক আবু তালিব শেখ বলেন, হিমঘর ভর্তি হয়ে যাওয়ায় হিমঘরের গেট বন্ধ করতে হয়েছে। আমার হিমঘরে ১ লক্ষ ৮০ হাজার বস্তা আলু রাখা যায়। সেটা হয়ে গিয়েছে। শতকরা ৭০ভাগ আলু রেখেছে চাষিরা।”

আবু তালিব জানান, হিমঘরগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন অনেক চাষি আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। প্রায় দু’শো বিঘার বেশি জমিতে এখনও আলু আছে। চাষিরা যে সমস্যায় আছেন সে কথা স্বীকার করে বড়ঞার বিডিও বাদশা ঘোষাল বলেন, “চাষিরা তাঁদের সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোনও নির্দেশ আমাদের কাছে আসেনি।” মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে মোট আটটি হিমঘর আছে। মুর্শিদাবাদ জেলার কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক আবির সিংহরায় বলেন, “অধিকাংশ হিমঘরগুলিতে আলু মজুত করার কাজ প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু কোনও হিমঘরে আলু মজুত করার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে, এমন খবর পাওয়া যায়নি। সহায়ক মূল্যে আলু কেনার জন্য এখনও কোনও সরকারি নির্দেশ এখনও আসেনি।”

অন্য বিষয়গুলি:

potato kandi farmers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE