ঘোড়ায়-মানুষে! জ্বালাপোড়া গরম থেকে বাঁচতে রাস্তাতেই স্নান কিশোরের। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বরে শুভাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
ভরদুপুরের বৃষ্টি দেখে আশায় বুক বাঁধার যে কোনও কারণ নেই, হাওয়া অফিস সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে। দিল্লির মৌসম ভবন বলে দিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা এখনও দূর অস্ত্।
সোমবার দুপুর থেকেই কলকাতার একাংশ এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। তার ফলে তাপমাত্রাও এক ধাক্কায় নেমে যায় অনেকটা। সকালের নাকাল করা গরম এড়িয়ে কোনও কোনও এলাকায় ঘনিয়ে আসে বর্ষার আমেজ। মিথ্যে আশা রাখতে বারণ করছেন আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, বর্ষার ওই আমেজটুকুই সার। পশ্চিমবঙ্গ তো পরের কথা, কেরলেই মৌসুমি বায়ু ঢোকার কোনও লক্ষণ নজরে পড়ছে না। এ দিনের ঝড়বৃষ্টির পিছনে স্থানীয় ভাবে তৈরি বজ্রগর্ভ মেঘের হাত দেখছেন তাঁরা।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, এ দিন দুপুর থেকেই বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ায় স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়েছিল। তার ফলে ওই সব জেলায় কালবৈশাখীর ঝড় ধেয়ে আসে। সঙ্গে বৃষ্টি। একই ভাবে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং কলকাতার একাংশে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে।
স্বাভাবিক নিয়মে কেরলে বর্ষা ঢোকার কথা ১ জুন অর্থাৎ কাল, বুধবার। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়ায় কেরলে বর্ষা ঢুকতে ঢুকতে ৭ জুন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। সে-ক্ষেত্রে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢুকতে ঢুকতে জুনের মাঝামাঝি হয়ে যেতে পারে।
তবে কেরলে ৭ জুনের মধ্যে বর্ষা আদৌ ঢুকবে কি না, তা নিয়ে আবহবিদদের একাংশের সন্দেহ রয়েছে। তাঁরা বলছেন, আরবসাগরে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর (যার হাত ধরে ভারতীয় মূল ভূখণ্ডে বর্ষা ঢোকে) কোনও নড়াচড়াই দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু পূর্বাভাস মেলাতে হলে চলতি সপ্তাহের শেষেই কেরল উপকূল জুড়ে বিস্তীর্ণ বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। সেটাই কেরলে বর্ষা সমাগমের পূর্ব লক্ষণ। কিন্তু পরিস্থিতি যা, তাতে চলতি সপ্তাহের শেষেই কেরল উপকূলে জোরালো বৃষ্টি শুরু হবে কি না, সেই ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হতে পারছেন না কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের অনেকেই।
আবহাওয়া বিভাগের একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে জন্ম নিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু। পূর্ব উপকূল এড়িয়ে বাংলাদেশে আছড়ে পড়ে সে। কিন্তু যাওয়ার পথে পুরো বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়ার স্থিতাবস্থা নষ্ট করে দিয়েছে। কেরলে বর্ষা ঢুকতে হলে আরবসাগর এবং বঙ্গোপসাগরের মধ্যে তাপমাত্রা, বায়ুচাপ-সহ আবহাওয়ার কয়েকটি প্রবণতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। বঙ্গোপসাগরের পরিস্থিতি ঘেঁটে যাওয়ায় সেই ভারসাম্য বিগড়ে গিয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের এক বিজ্ঞানী বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কেটে যাওয়ার ফলে সেই ভারসাম্য ধীরে ধীরে ফিরে আসার কথা। ‘‘জ্বরটা ছেড়ে গিয়েছে। এখন সময়ের মধ্যে দুর্বলতা কাটে কি না, সেটাই দেখার,’’ মন্তব্য ওই বিজ্ঞানীর।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের একাংশ বলছেন, চলতি মাসে বর্ষণের ঘাটতি অবশ্য মিটিয়ে দিচ্ছে লাগাতার ঝড়বৃষ্টি। তার পিছনেও অবশ্য হাত আছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু-র। তার প্রভাবেই গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের পরিমণ্ডলে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকে পড়েছিল। তাপমাত্রা বাড়তেই সেই জলীয় বাষ্প গরম হয়ে বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরে উঠছে এবং ঘনীভূত হয়ে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করছে। এবং তা থেকেই হচ্ছে বিক্ষিপ্ত ঝড়বৃষ্টি।
মৌসম ভবন সূত্রের খবর, বর্ষার দেরির দুঃসংবাদের মধ্যে আশার কথা এটুকুই যে, লাগাতার ঝড়বৃষ্টিতে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষণের ঘাটতি মিটছে ধীরে ধীরে। ১৯ মে থেকে ২৫ মে, এই পর্যায়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে স্বাভাবিকের থেকে ৫৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তার ফলে ১ মার্চ থেকে ২৫ মে, এই গোটা পর্যায়ে বৃষ্টির ঘাটতি ২২ শতাংশ। আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানী বলছেন, ২৫ মে-র পরেও বিভিন্ন সময়ে জেলাগুলিতে বৃষ্টি হয়েছে। সেই সব হিসেব ধরলে মার্চ থেকে মে, এই দু’মাসের মোট ঘাটতি ২০ শতাংশের নীচে নেমে যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy