মেলায় গ্যাস বেলুনের সিলিন্ডার ফেটে অপমৃত্যুর ঘটনায় বেআব্রু হয়েছে মেলা চত্বরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হলদিয়ার এই দুর্ঘটনার পরে দুই মেদিনীপুরের বহু মেলার নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসনও।
শহর-শহরতলিতে শীতে বহু মেলা হয়। প্রায় সব মেলাতেই জাঁক থাকে। নাগরদোলা-সহ ছোটদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা যেমন থাকে, তেমন রকমারি স্টলও থাকে। কিছু ক্ষেত্রে মাঠের বাইরেও নানা দোকান বসে। সরকারি উদ্যোগেও নানা মেলা হয়। যেমন, সবলা মেলা, কৃষি মেলা প্রভৃতি। বেসরকারি মেলায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উদ্যোক্তারা শুধু গুটিকয়েক ফায়ার এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডার রেখেই দায় সারেন। আর সরকারি মেলার হাল কেমন, তার হাতে-গরম উদাহরণ হলদিয়ার রবিবারের দুর্ঘটনা।
হলদিয়ার দুর্গাচকের সবলা-বই মেলা চত্বরে মেডিক্যাল ক্যাম্প থাকলেও দুর্ঘটনার সময় সেখানে ছিলেন না কেউই! শুধু তাই নয় বিস্ফোরণে গুরুতর আহত গণেশ দত্তকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সেরও দেখা মেলেনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেরই বক্তব্য, দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলে মরতে হত না গণেশবাবুকে।
গণেশবাবুর মৃত্যুর পর টনক নড়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনেরও। গ্যাস বেলুন বিক্রেতাদের মেলায় ঢোকা আটকাতে ব্যবস্থা নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, “গ্যাস বেলুন বিক্রেতারা আর যাতে মেলায় ঢুকতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শীতের মরসুমে বিভিন্ন জায়গায় মেলা, উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রশাসন সে সব জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার খুঁটিনাটি দেখতে নজরদারি চালাবে।
মেদিনীপুর-খড়্গপুর শহর এবং শহরতলিতে যে সব মেলা হয় তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে না বলে অভিযোগ। রবিবার থেকেই মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর হলের মাঠে শুরু হয়েছে ক্ষুদ্র শিল্প মেলা। চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত। শুরুর দিন থেকেই মেলায় ভিড় হতে শুরু করেছে। কিন্তু, এখানেও কোনও মেডিক্যাল টিম নেই। মেলার অন্যতম উদ্যোক্তা বিজয় আগরওয়াল অবশ্য বলেন, “নিরাপত্তার দিকে বাড়তি নজর রেখেছি। মেলা চত্বরে ফায়ার এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডার রাখা হয়েছে।” তবে হলদিয়ার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে তাঁরাও মেলায় গ্যাস বেলুন বিক্রেতাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না।
উদ্যোক্তাদের দাবি, সামনেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। মেলা চত্বরে কেউ কোনও সমস্যার মধ্যে পড়ছেন কি না, তা দেখার জন্য কমিটির লোকজন নজরদারিও চালান। তবে মেলা কমিটির আশ্বাস আগামী বছর তাঁরা মেলা চত্বরে মেডিক্যাল টিম রাখার ব্যবস্থা করবেন।
মেদিনীপুর সদর ব্লকের নয়াগ্রামে বেসরকারি উদ্যোগে চলছিল বিবেক মেলা। সোমবারই ছিল মেলার শেষ দিন। এখানেও মেডিক্যাল টিম ছিল না। ছিল না অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও। অন্যতম উদ্যোক্তা গোলক মাইতির দাবি, তাঁদের অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। ডাক্তারের চেম্বারও রয়েছে। ফলে, অসুস্থকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করায় সমস্যা হত না। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “সরকারি মেলায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য দফতরের স্টল, মেডিক্যাল টিম থাকে। বেসরকারি মেলার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা যদি মেডিক্যাল টিমের আবেদন করেন, তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy