খড়্গপুর শহরের একাধিক নেতাকে এখনও মেদিনীপুর উপ-নির্বাচনের প্রচারে দেখা না যাওয়ায় শোরগোল। —প্রতীকী ছবি।
পাশের শহর মেদিনীপুরে বিধানসভা উপ-নির্বাচন। তৃণমূলের প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। সেখানেও ছায়া ফেলছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বিভাজনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে পাশের রেলশহরেও। দলের প্রার্থীকে জেতাতে রেলশহর থেকে পর্যবেক্ষক হিসাবে ছুটে যাচ্ছেন পুরপ্রধান। দায়িত্ব পেয়েছেন এক পুর-প্রতিনিধিও। অথচ প্রচারে এখনও ব্রাত্য তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি, প্রাক্তন পুরপ্রধান থেকে এমকেডিএ-এর ভাইস চেয়ারম্যান-সহ রেলশহরের একাধিক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা!
খড়্গপুর শহরের একাধিক নেতাকে এখনও মেদিনীপুর উপ-নির্বাচনের প্রচারে দেখা না যাওয়ায় শোরগোল শুরু হয়েছে তৃণমূলের অভ্যন্তরে। যদিও ওই নেতাদের অনেকেই খড়্গপুরে পুরপ্রধান, বিধায়ক থেকে দলের জেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক পদ সামলেছেন। এমনকি এখনও অনেকে জেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক নানা পদে রয়েছেন। অথচ উপনির্বাচনে দলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন খড়্গপুরের পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ। মেদিনীপুর শহরের ৭ ও ১৯নম্বর ওয়ার্ডের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে খড়্গপুরের পুরপ্রধান তথা মহিলা তৃণমূলের শহর সভানেত্রীকে। সেই দায়িত্ব পালনে নিয়মিত মেদিনীপুর শহরে প্রচারে শামিল থাকছেন কল্যাণী। এমনকি মহিলা তৃণমূলের খড়্গপুর শহর সভানেত্রী হিসাবেও মেদিনীপুরে মহিলাদের সব প্রচারে কল্যাণীকে থাকার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও খড়্গপুর শহরের ২৭নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি রোহন দাসকেও মেদিনীপুর শহরের ১১ ও ১২নম্বর ওয়ার্ডের পর্যবেক্ষক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওড়িয়া জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় প্রচারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রোহণকে। তিনিও নিয়মিত মেদিনীপুরে গিয়ে তৃণমূলের প্রার্থীর হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। খড়্গপুরের পুরপ্রধান ঘোষ বলেন, “আমাকে ও রোহনকে মেদিনীপুর উপ নির্বাচনের দু’টি করে ওয়ার্ডের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। খড়্গপুর থেকে এখনও পর্যন্ত আমরাই দায়িত্ব পেয়েছি। দলের প্রার্থী সুজয় হাজরাকে জেতাতে নিয়মিত মেদিনীপুরে গিয়ে প্রচার চালাচ্ছি। আমরা নিশ্চিত সুজয় হাজরা জিতছেন।”
রেলশহর খড়্গপুরে পুরসভার চেয়ার দখলের লড়াই ঘিরে তৃণমূলের অভ্যন্তরে বিভাজন রয়েছে। তবে দলের গোষ্ঠী রাজনীতির সমীকরণে পুরপ্রধান হিসাবে কল্যাণীর পাশে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরাকে। এমন ঘটনায় শহরে কল্যাণী ‘বিরোধী’ বলে পরিচিত তৃণমূল নেতাদের অনেকেই নানা সময়ে সুজয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভে সরব হয়েছেন। এর পিছনে রয়েছে তৃণমূলের জেলা পর্যায়ের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। জেলায় সুজয়ের সঙ্গে সাংসদ জুন মালিয়ার শীতল সম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়। প্রচারেও দেখা যাচ্ছে সেই জুন-সুজয় শিবিরের বিভাজন।
গত ২০১৯সালের উপ-নির্বাচনে রেলশহরের বিধানসভা প্রথমবার তৃণমূলের দখলে এসেছিল প্রদীপ সরকারের হাত ধরে। প্রদীপ এখন মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান। অথচ এখন সেই প্রদীপ বলছেন, “দলের প্রার্থীকে জেতাতে প্রচারের দায়িত্ব পেলে নিশ্চয় দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে পালন করব।” প্রচারের কোনও দায়িত্বে নেই তৃণমূলের প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল। আবার দলের জেলা সহ-সভাপতির পদে থাকা দেবাশিস চৌধুরীও এখনও মেদিনীপুরে প্রচারের কোনও দায়িত্বে নেই। যদিও একসময়ে রেলশহরে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন তদানীন্তন যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী। তিনি বলছেন, “মেদিনীপুর শহরেই অনেক বড়-বড় নেতারা রয়েছেন। সেই কারণেই হয়তো আমাকে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।”
দেখা যাচ্ছে রেলশহরে এখন প্রদীপ, দেবাশিসের ‘বিরোধী’ বলে পরিচিত হয়েও তৃণমূলের হিন্দি প্রকোষ্ঠের জেলা সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডেকেও কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি এই উপনির্বাচনের প্রচারে। যদিও রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলছেন, “কালীপুজো নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। ছট পুজোর পরে মেদিনীপুরে প্রচারে থাকব।” আর পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ বলেন, “শুনেছি খড়্গপুর থেকে রবিদাকেও দায়িত্ব দেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy