সেজে উঠবে এই বন্দরই। ছবি: সোহম গুহ।
পূর্ব মদিনীপুরের পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দরকে আধুনিক করে তুলতে পরিকাঠামোগত উন্নয়নে উদ্যোগী হল পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য নিগম। জানা গিয়েছে, ধীরে ধীরে এই বন্দরকে ঘিরে পরিবেশ বান্ধব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। মৎস্য নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টার অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দর সংলগ্ন রসুলপুর নদীর মোহনায় নিগমের পক্ষ থেকে একটি পরিবেশ বান্ধব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা চালানো হচ্ছে।”
বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মৎস্যবন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য পেটুয়াঘাট মৎস্য বন্দরে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। হাজির ছিলেন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টার অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ দেবব্রত দাস, সহ মৎস্য অধিকর্তা( সামুদ্রিক) রামকৃষ্ণ সর্দার প্রমুখ। বৈঠকে মৎস্যজীবীদের সমুদ্র থেকে তুলে আনা মাছ বন্দরে মজুদ ও সংরক্ষণের জন্য একটি অত্যাধুনিক হিমঘর তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন হিমঘর তৈরির জন্য আগামী অগস্ট মাসে ‘ই-টেন্ডার’ করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছা়ড়াও বন্দরের বরফ কল ও পেট্রোল পাম্পের উৎপাদন ক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের পেটুয়াঘাটে রসুলপুর নদীর মোহনায় ২০১০ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজ্যের তৎকালীন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন ‘দেশপ্রাণ’ নামে মৎস্যবন্দরটির উদ্বোধন করেন। কিন্তু বন্দর তৈরি হলেও আধুনিক মৎস্য বন্দর উপযোগী তেমন পরিকাঠামো না থাকায় বন্দরে মৎস্যজীবীদের নানা সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়। দেশের অন্যতম মৎস্য বন্দর হিসেবে স্বীকৃত হলেও কোনও আইস প্ল্যান্ট বা ফুয়েল পাম্প ছিল না। ফলে গভীর সমুদ্র থেকে আসা মাছ বোঝাই ট্রলারের মৎস্যজীবীদের মাছ সংরক্ষণের জন্য বাইরে থেকে যেমন বরফ কিনতে হত। ট্রলারের জ্বালানি ডিজেলও বাইরে থেকে কিনতে হত। এছাড়াও মাছের নিলামকেন্দ্রটি আয়তনে ছোট হওয়ার ফলে মৎস্যজীবীদের মাছ নিলামের ক্ষেত্রেও নানা অসুবিধা হত। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় মৎস্যজীবীরা এই বন্দরে ট্রলার নিয়ে ভিড়তে চাইতেন না। মৎস্যজীবীদের সেই সমস্যা নিরসনের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় পর্যায়ে বন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করে। মৎস্য নিগম দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিদিন ১০০ মেট্রিকটন বরফ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি আইস প্ল্যান্ট তৈরি করে। এছাড়াও উন্মুক্ত নিলাম কেন্দ্র তৈরি করা ছাড়াও প্রতিদিন ৪০ কিলোলিটার ডিজেল বন্টন করার ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ফুয়েল পাম্পও বসানো হয়। রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ গতবছরের ৫ সেপ্টেম্বর পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দরের আধুনিক পরিকাঠামো উন্নয়নের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের উদ্বোধন করেন।
পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দরের বন্দর আধিকারিক প্রদ্যোৎ পাহাড়ি জানান, ‘পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দরে প্রথম পর্যায়ে তিনটি জেটি তৈরি করা হয় যাতে সেখান থেকে একসঙ্গে ৩২৫টি ট্রলার সমুদ্রে যাতায়াত করতে পারে। এছাড়াও মাছের নিলাম ঘর, মাছ সংরক্ষণ কেন্দ্র ছাড়াও মৎস্যজীবীদের বাসস্থানের জন্য ফিশ প্যাকেজিং সেন্টার, প্রশাসনিক ভবন তৈরি করা হয়।” জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ দেবব্রত দাস জানান, “আগামী ২৪ জুলাই থেকে পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দরে মাছ নিলামের কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বন্দরের বতর্মান তিনটি জেটির সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy