এখানে যাত্রীদের থাকার ঘরেই বসত মদের আসর। নিজস্ব চিত্র
রেলযাত্রীদের রাতে থাকার ঘরেই বসত মদের আসর!
অভিযোগ, নিরাপত্তার বেড়া টপকে বাইরে থেকে দিব্যি খড়্গপুর স্টেশনের রিটার্নিং রুমে ঢুকত বহিরাগতরা। যখন যে ঘর ফাঁকা মিলত, সেখানেই বসত আসর। কখনও কখনও বাতানুকূল ঘর ফাঁকা পেলেও সেখানেই চলত আড্ডা। যাত্রীদের থেকে রিটার্নিং রুমে বহিরাগতদের ‘দাপাদাপির’ অভিযোগ আসছিল। অভিযোগ পেয়েই তৎপর হন রেল কর্তৃপক্ষ। রবিবার রাতে রিটার্নিং রুমে হানা দিয়ে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় রেল আধিকারিকদের! এ দিন মদ্যপান করার অভিযোগে হাতেনাতে পাকড়াও করা হয় তিনজনকে। এই তিন জনই বহিরাগত বলে রেলের এক সূত্রে খবর। ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে এক টিকিট পরীক্ষক-সহ দু’জন রেলকর্মীকেও।
‘এ-ওয়ান’ খড়্গপুর স্টেশনের মূল ভবনের দোতলায় যাত্রীদের রাত্রিবাসের জন্য ন’টি ঘর রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি ঘর বাতানুকূল। এই ঘরগুলিতে থাকার জন্য টাকাও দিতে হয় রেলযাত্রীদের। আর এমন ঘরেই ঢিলেঢালা নিরাপত্তা দেখে ক্ষুব্ধ রেলযাত্রীরা।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের দোতলায় থাকা রেলের রিটার্নিং রুমের একটি ফাঁকা বাতানুকুল ঘরেই রবিবার রাতে বসেছিল মদের আসর। ওই ঘরে বিনা অনুমতিতে কেন লোক রয়েছে তা দেখতেই রেলের কমার্শিয়াল বিভাগের নির্দেশে স্টেশন মাস্টার রেল সুরক্ষা বাহিনী (আরপিএফ) নিয়ে হানা দেন। সেই সময়েই ঘর থেকে এক টিকিট পরীক্ষক-সহ চারজনকে হাতেনাতে পাকড়াও করা হয়। ভাড়া না দিয়েই বিনা অনুমতিতে বাতানুকূল ঘরে প্রবেশের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় সুব্রত বর্মন, সোম নায়ডু ও এমএন হাঁসদাকে। রেলের আইন অনুযায়ী বিনা অনুমতিতে রিটার্নিং রুমে প্রবেশ করায় জামিনযোগ্য ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও রুজু হয়েছে। এ ছাড়াও কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে টিকিট পরীক্ষক সমীর রায় ও রিটার্নিং রুমের কেয়ারটেকার নাগস্বামীকে সাসপেন্ড করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে।
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, এ ভাবে বিনা অনুমতিতে রেলের রিটার্নিং রুমে বহিরাগতরা ঢুকে পড়লে সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা কোথায়? এক রেলকর্মীর কথায়, “এক দিন তো নয়, দীর্ঘদিন ধরে এ ভাবেই ওরা রিটানিং রুম ব্যবহার করত। কিছু মানুষের এমন কাজের জন্যই আমাদের মতো সাধারণ রেলকর্মীদের ওপরেও যাত্রীরা আস্থা হারাচ্ছেন।” রেল সুরক্ষা বাহিনীর (খড়্গপুর পোস্ট) ওসি রবিশঙ্কর সিংহের কথায়, “আমরা স্টেশনে নজরদারি চালাই। স্টেশন মাস্টার অভিযোগ করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা হানা দিয়েছিলাম। তখন এই ঘটনা সামনে এসেছে। আমরা তিন জন বহিরাগতকে গ্রেফতার করেছি। আর দুই রেলকর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গে স্টেশন মাস্টার ডিকে পণ্ডাও বলছেন, “বিষয়টি জানা ছিল না। কমার্শিয়াল কন্ট্রোল থেকে আমাকে দেখতে বলা হয়েছিল। আমি আরপিএফ নিয়ে হানা দিলে দেখা যায়, এক টিকিট পরীক্ষক-সহ চার জন মিলে মদের আসর বসিয়েছে। সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” খড়্গপুরে রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার কুলদীপ তিওয়ারিও বলেন, “আমরা মাঝে মধ্যেই ওই রিটার্নিং রুমে অতর্কিতে হানা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। সেই অনুযায়ী হানা দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে এই ঘটনা সামনে এসেছে। দু’জন রেলকর্মীকে সঙ্গে সঙ্গে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ওদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy