ফিরে-দেখা: ছাত্রীদের দেখানো হচ্ছে তথ্যচিত্র। নিজস্ব চিত্র
ধূসর হতে বসা স্মৃতিকথা উজ্জ্বল হল তথ্যচিত্রের পর্দায়। পড়ুয়ারা চোখের সামনে ভেসে উঠল অতীতের খুঁটিনাটি। ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই তথ্যচিত্র বানিয়েছে মেদিনীপুরের রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয় বা গোপকলেজের। আজ, মঙ্গলবার কলেজের ৬০ বছর পূর্তি উদ্যাপন। তার আগে সোমবারই তথ্যচিত্রটি দেখানো হয়। কলেজের অধ্যক্ষা জয়শ্রী লাহা বলছিলেন, “তথ্যচিত্রটি দেখলে কলেজ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা হবে সকলের। সময়ের সঙ্গে কী ভাবে বদলেছে আমাদের কলেজ, তাও বোঝা যাবে।’’
গোপ কলেজের ৬০ বছর পূর্তি উদ্যাপনে কী কী করা যায়, মাস খানেক আগে সেই পরিকল্পনা করার সময়ই তথ্যচিত্র তৈরির কথা আলোচনা হয়। সকলে একমত হওয়ার পরে শুরু হয় কাজ। ৩৫ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে কলেজের গৌরবময় প্রতিটি অধ্যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ভারতের পঞ্চবার্ষিকী উন্নয়ন পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের সব জেলায় কলেজ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মেয়েদের জন্য আলাদা কলেজের ভাবনাও তখনকারই। সেই মতো ১৯৫৭ সালের ২২ অগস্ট ঐতিহাসিক গোপ প্রাসাদে এই মহিলা কলেজের পথ চলা শুরু। কলেজ পত্তনের পিছনে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের প্রেরণা এবং শ্রীমতী অঞ্জলি খান ও তাঁর স্বামী অমরেন্দ্রলাল খানের অবদান অনস্বীকার্য। কলেজের জন্য গোপ প্রাসাদ ও সংলগ্ন ৪৮ একর জমি দান করেছিলেন অঞ্জলি ও অমরেন্দ্রলাল।
এই কলেজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গৌরবের ইতিহাসও। ১৮০০ সালের ৩০ জুন কর্ণগড়ের রানি শিরোমণি মেদিনীপুরের জমিদারি নাড়াজোলের আনন্দলাল খানকে দানপত্র করেন। ক্রমে আনন্দলাল নাড়াজোল ও কর্ণগড় দুই জমিদারের মালিক হয়ে ওঠেন। আনন্দলালের পৌত্র মহেন্দ্রলাল খান রাজা উপাধি পান ১৮৮৭-তে। মহেন্দ্রলালের মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র নরেন্দ্রলাল খান নাড়াজোলের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। ১৮৯৫ সালে লর্ড এলগিন তাঁকে রাজা উপাধি দেন। বাংলার স্বদেশি আন্দোলনের ইতিহাসে নরেন্দ্রলাল খান স্মরণীয় নাম। স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য নরেন্দ্রলাল প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিলেন। ভারতের জাতীয় পতাকার রূপকার হেমচন্দ্র দাস কানুনগো তাঁরই অর্থসাহায্যে প্যারিসে বোমা তৈরির কৌশল শিখতে যান। সেটা ১৯০৬ সাল। ১৯০৯-এ রাজদ্রোহিতার অভিযোগে ইংরেজ সরকার নরেন্দ্রলালের রাজা উপাধি কেড়ে পর্যন্ত নেয়।
১৯২০ সালে নরেন্দ্রলালের মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র দেবেন্দ্রলাল খান জমিদার হন। তিনিও বাবার মতো দেশপ্রেমে দীক্ষিত ছিলেন। নাড়াজোল রাজাদের গোপ প্রাসাদ তখন ছিল মেদিনীপুরের বিপ্লবীদের গোপন ডেরা। আনুমানিক ১৮৯৫ সালে তৈরি এই গোপ প্রাসাদে মাটির নীচে গুপ্ত কুঠুরি ছিল। সেখানেই বিপ্লবীদের গোপন সভা হত। দেবেন্দ্রলালের আমলে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী, জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল, সুভাষচন্দ্র বসুর মতো ব্যক্তিত্ব গোপ প্রাসাদে এসেছেন। দেবেন্দ্রলালের পুত্র আর পুত্রবধূ হলেন অমরেন্দ্রলাল আর অঞ্জলি। শুরুতে কলেজে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ৩০ জন। এরমধ্যে ৫ জন ছিলেন আবাসিক। এখন সেই কলেজেই পড়ুয়ার সংখ্যা ৪,৫০০- রও বেশি। এর মধ্যে ৪৫০ জন আবাসিক। কলেজের অধ্যাপিকা রিনা পাল, রূপা দাশগুপ্তরা বলছিলেন, “কলেজের একাল-সেকালের গোটা ছবিটাই ধরা পড়েছে তথ্যচিত্রে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy