Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

বাংলার হাতে সাজছে গিধনির ‘পৃথিবী’

মাটির পুতুলে মাটি নেই! গালার পুতুলেও এক ছটাক গালা নেই। কাঠের পুতুলে নেই কাঠ। ডোকরা শিল্পকর্মেও ছিটেফোঁটা কাঁসা-পেতলের মিশেল নেই। স্রেফ থার্মোকল, দড়ি আর কাগজের মণ্ড দিয়েই বাংলার চিরাচরিত কয়েক হাজার হস্ত ও কারুশিল্পের নির্দশন তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গিধনি স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্যরা।

চলছে মণ্ডপসজ্জার কাজ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

চলছে মণ্ডপসজ্জার কাজ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত
গিধনি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫৮
Share: Save:

মাটির পুতুলে মাটি নেই! গালার পুতুলেও এক ছটাক গালা নেই। কাঠের পুতুলে নেই কাঠ। ডোকরা শিল্পকর্মেও ছিটেফোঁটা কাঁসা-পেতলের মিশেল নেই। স্রেফ থার্মোকল, দড়ি আর কাগজের মণ্ড দিয়েই বাংলার চিরাচরিত কয়েক হাজার হস্ত ও কারুশিল্পের নির্দশন তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গিধনি স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্যরা। ৭২ তম বর্ষের সর্বজনীন পুজোয় এমনই সব শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হচ্ছে আস্ত একটা ‘পৃথিবী’।

ঝাড়গ্রামের শিল্পী মানব বাগচির ভাবনায় পুজোর থিম ‘এগিয়ে বাংলা’। গিধনি স্পোর্টিং দুর্গা ময়দানে পৃথিবীর আদলে তৈরি হচ্ছে বাঁশ, কাঠ, চট আর মাটির প্রলেপ দিয়ে পৃথিবীর আদলে গোলাকার মণ্ডপ। মণ্ডপের মাথায় থাকছে থার্মোকল দিয়ে তৈরি পদ্মাসনে বসে থাকা দশভূজা দুর্গার মূর্তি। নিরস্ত্র দেবীর দু’পাশে থাকছে শান্তির ডানা মেলে থাকা দু’টি পায়রা। মণ্ডপের ভিতরে ও বাইরের অঙ্গসজ্জার জন্য তৈরি করা হচ্ছে প্রায় দু’হাজার শিল্পকর্ম ও বিভিন্ন ধরনের মডেল। শিল্পী মানব বাগচির পরিকল্পনায় সেগুলি তৈরি করছেন স্কুল পড়ুয়া অভিজিত লালা, কলেজ পড়ুয়া মানস ঘোষ, নীলোত্‌পল মাহাতো, রাহুল দাস, আইটিআইয়ের পড়ুয়া সুদীপ নামাতার মতো স্থানীয় জনা পঞ্চাশ তরুণ। বাংলার নক্সা বড়ি, প্রাচীন ছৌ নাচের মুখোশ, কালিঘাটের সাবেক পট, পিংলার পটচিত্রও তৈরি হচ্ছে কাপড়, চট, কাগজ, থার্মোকল আর মাটির প্রলেপ দিয়ে।

ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি ব্লকের গিধনির এই পুরনো পুজোটি প্রতি বছর চমক দিয়ে থাকে। পুজো কমিটির সম্পাদক দীপ সান্যালের কথায়, “প্রতি বছর আমাদের পুজো কোনও না কোনও পুরস্কার পায়। ক্লাবের প্রতিটি সদস্যের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই সেটা সম্ভব হয়।” এ বার পুজোর বাজেট প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। আশেপাশের গ্রাম থেকে চাঁদা ওঠে। ক্লাব সদস্যরাও আর্থিক সংস্থান অনুযায়ী সাহায্য করেন। এ ছাড়া জঙ্গলমহলের নামী পুজো হওয়ার সুবাদে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সংস্থার স্পনসরশিপও মিলছে।

শিল্পী মানববাবু জানালেন, বাংলার বিশ্বজনীনতাকেই এক ছাদের তলায় হাজির করা হয়েছে। হস্তশিল্প, কারুশিল্প, কুটিরশিল্প ও লোকশিল্পের সমৃদ্ধ সম্ভারের পাশাপাশি, বাংলার নৈসর্গ ও দর্শনীয় জায়গাগুলিও দেখা যাবে। মণ্ডপের অন্দরে গয়না বড়ির কল্কা ও বাংলার বিভিন্ন হস্তশিল্প দিয়ে সাজানো হচ্ছে। মণ্ডপের ভিতরে থাকবে শিল্পী চন্দন রায়ের তৈরি বাংলার কাঁচের চুড়ি দিয়ে তৈরি প্রতিমা। মণ্ডপের সিলিং থেকে ঝুলবে কুলো, মাটির ধুনুচি, কড়ি ও কলকে দিয়ে তৈরি ঝাড়লন্ঠন। মণ্ডপের বাইরে বৃত্তাকারে থাকবে বাংলার বিবিধ নিদর্শন। পাহাড়ের ট্রয় ট্রেন থেকে জঙ্গলমহলের হাতি, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল বাঘ থেকে হাওড়া ব্রিজ। রাজ্য সরকারের ‘সবুজসাথী’, ‘কন্যাশ্রী’র মতো বিভিন্ন প্রকল্পের মডেলও থাকছে। পুজোর ‘থিম সং’টিও রীতিমতো আকর্ষণীয়। গানটি গেয়েছেন কলকাতার উদীয়মান গায়ক তাতান। কথা ও সুরও তাঁর।

অন্য বিষয়গুলি:

Clay status Puja pandals Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE