Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দিন গিয়েছে, গ্রিটিংস কার্ডে লেখা নেই ২০১৯

দোকানের মালিক রীতেশ মালু বলছিলেন, “আগের মতো তো আর কার্ডের চল নেই। আসলে এর পিছনে সোশ্যাল মিডিয়া একটা বড় কারণ। মুনাফা না থাকায় এই কার্ড ব্যবসা বন্ধ করেছি।’’

বছর পাঁচেক আগেও দোকানে বিক্রি হত কার্ড। এখন সেখানে গিফ্‌টের পসরা। খড়্গপুরে। নিজস্ব চিত্র

বছর পাঁচেক আগেও দোকানে বিক্রি হত কার্ড। এখন সেখানে গিফ্‌টের পসরা। খড়্গপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ২৩:৫৬
Share: Save:

কর্মস্থলে সহকর্মীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাবেন বলে কার্ড কিনতে বেরিয়েছিলেন ম্যানেজমেন্ট পাশ যুবক গোবিন্দ সিংহ। তবে একের পর এক দোকানে হন্যে হয়ে ঘুরেও কার্ড পাননি গোবিন্দ। শেষমেশ খড়্গপুরের গোলবাজারের বহু পুরনো এক দোকানে কার্ড পান তিনি।

তবে কার্ডে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ লেখা থাকলেও ২০১৯ লেখা ছিল না। কারণ জানতে চাইলে দোকানদার পরেশ সোমানি বলেন, “আসলে যাতে পরের বছরও জমে থাকা কার্ড বিক্রি করা যায় তাই এখন আর সাল লেখা থাকে না।’’ আর গোবিন্দ বলছেন, “বন্ধুদের সকলের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। কিন্তু বসকে তো কার্ড ছাড়া শুভেচ্ছা জানানো ঠিক নয়। অনেক খুঁজে এখানে কার্ড পেলাম। পছন্দ না হলেও উপায় নেই। ভাবতে অবাক লাগে এই গোলবাজারে বছর সাতেক আগেও কত কার্ডের দোকান ছিল।’’

দীর্ঘদিন গোলবাজারের যে দোকানে গেলেই কার্ড মিলত, সেই দোকানে মঙ্গলবার গিয়ে কার্ড মেলেনি। দোকানের মালিক রীতেশ মালু বলছিলেন, “আগের মতো তো আর কার্ডের চল নেই। আসলে এর পিছনে সোশ্যাল মিডিয়া একটা বড় কারণ। মুনাফা না থাকায় এই কার্ড ব্যবসা বন্ধ করেছি।’’ অনেকে কার্ডের ব্যবসা বন্ধ করে অন্য ব্যবসার দিকেও ঝুঁকছেন। বছর দু’য়েক আগে কার্ডের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন গোলবাজারের ব্যবসায়ী প্রকাশ টাঁক। তিনি বলেন, “বছর দশেক আগে ইংরেজি নববর্ষে ৫০হাজার টাকার কার্ড বিক্রি করতাম। কিন্তু বছর দু’য়েক আগে যখন ব্যবসা বন্ধ করলাম তখন ২ হাজার টাকার কার্ড বিক্রি হত। তাই কার্ড ব্যবসা বন্ধ করে এখন বিভিন্ন গিফ্‌টের ব্যবসায় মন দিয়েছি।’’

অনেকে কার্ড ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ায় পরেশের দোকানে অবশ্য বিক্রিবাটা খুব খারাপ নয়। তিনি বলেন, “কার্ডের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বিক্রি অনেক কমেছে। কিন্তু আমি এই ব্যবসা চালাচ্ছি। মুনাফা হয়তো অনেক কমেছে। কিন্তু মানুষের প্রয়োজন তো মিটছে।’’

কার্ডের বিক্রি কমে যাওয়ায় এখন কার্ডের সঙ্গে ক্যালেন্ডার, ডায়েরিও রাখা শুরু করেছেন মেদিনীপুরের এক দোকানদার অশোক ঘোষ। তিনি বলছেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে কার্ডের ব্যবসা ঠিকই করি। তবে কার্ডের থেকে ক্যালেন্ডার, ডায়েরি বেশি রাখছি। কার্ড আর বেশি কিনি না। এখন কার্ডের চল যথেষ্ট কমেছে।’’ অনেকে আর দোকানের সামনে কার্ড সাজিয়েও রাখেন না। খোঁজ করলে দোকানের মধ্যে থেকে বের করে দেখান। অশোকের কথায়, ‘‘নতুন প্রজন্মের কাছে এখন অনেক সহজ হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক। তাই কার্ডের আর সেই ক্রেজ কিন্তু নেই।’’ তিনি মানছেন, ‘‘বিক্রি নেই, তাই আলাদা করে সাজানো, দিনের শেষে আবার খুলে ঠিক করে রাখা- এত কিছু করার উৎসাহ হারিয়েছেন অনেক বিক্রেতা।’’

এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী, বছর সাতাশের সুমিত পালের কথায়, ‘‘যখন স্কুলে পড়তাম নতুন বছর এলে কার্ডের দোকানে গিয়ে বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য কার্ড কিনতাম। এখন আর তার প্রয়োজন হয় না। মেসেজে শুভেচ্ছা জানিয়ে দিই।’’ কলেজ পড়ুয়া গার্গী চৌধুরীর কথায়, ‘‘এখন আর কার্ড কেনার মানে হয় না। মোবাইলেই কত সুন্দর সুন্দর মেসেজ পাঠানো যায়।’’

তবে এখনও কিছু লোক আছেন, যাঁরা কার্ড কিনতে পছন্দও করেন। ইন্দার বাসিন্দা ডাক্তারি পড়ুয়া বছর কুড়ির সুপ্রিয় সাহু বলেন, “প্রিয়জনের জন্য কার্ড কিনতে এসেছি। সবচেয়ে বড় কার্ডটা কিনেছি। ডাকে পাঠাব। সত্যিই কার্ডের বাজারে মন্দা। কিন্তু কার্ডের গুরুত্ব আলাদাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Greetings Card 2019 New Year Greetings Card
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE