Advertisement
E-Paper

‘এসেছিলাম’, দরজায় লিখে দিয়ে যান পাওনাদার! ট্যাংরার দে পরিবার কি আর্থিক বিপর্যয়ের বলি?

বুধবার তিন জনের দেহ উদ্ধারের পর ট্যাংরার দে বাড়ির সামনে গিয়েছিলেন পাওনাদার মনোজ গুপ্ত। মঙ্গলবারই ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। কারও সাড়া পাননি বলে দরজায় দু’লাইন লিখে এসেছিলেন।

ট্যাংরার দে বাড়ির সামনে পাওনাদার মনোজ গুপ্ত। বুধবার দুপুরে।

ট্যাংরার দে বাড়ির সামনে পাওনাদার মনোজ গুপ্ত। বুধবার দুপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:০৪
Share
Save

লক্ষ লক্ষ টাকা পাওনা ছিল তাঁর। একাধিক বার টাকা চেয়ে তাগাদা দিয়েছিলেন। ট্যাংরার সেই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এমনটাই জানালেন পাওনাদার মনোজ গুপ্ত। তিনি প্রণয় দে এবং প্রসূন দে-র সঙ্গে ব্যবসা করতেন। তাঁদের চামড়ার কারবার ছিল। মনোজ জানান, তিনি মঙ্গলবার বিকেলেই টাকা চাইতে গিয়েছিলেন ওই বাড়িতে। কিন্তু গিয়ে কাউকে পাননি। সকলের ফোন বন্ধ ছিল। দরজার বাইরে থেকে অনেক ডাকাডাকি করেও কোনও সাড়া মেলেনি। এর পর দরজায় দু’লাইন লিখে দিয়ে যান মনোজ। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমি এসেছিলাম। আপনাদের কাউকে পেলাম না। আমার লেখা যদি দেখতে পান, যোগাযোগ করবেন।’’

মনোজ বলেন, ‘‘বড় ভাইয়ের নাম প্রণয়, ছোট ভাইয়ের নাম প্রসূন। আমি ওঁদের সঙ্গে ব্যবসা করতাম। ওঁদের চামড়ার জোগান দিতাম। ওঁদের কাছ থেকে আমি অনেক টাকা পেতাম। আমার চেক বাউন্স হয়ে গিয়েছিল।’’ ২০২০ সাল থেকে দে পরিবারের সঙ্গে ব্যবসার সূত্রে যোগাযোগ মনোজের। তিনি জানান, ২০২৩ সাল পর্যন্ত চামড়ার জোগান দিয়েছেন প্রণয় আর প্রসূনকে। তার পর আর লেনদেন হয়নি। কিন্তু চামড়া বাবদ অনেক টাকা তাঁর পাওনা ছিল। ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে ৭০ শতাংশ পাওনা মিটিয়েও দিয়েছিলেন দুই ভাই। শেষ কিস্তির টাকা দেওয়া বাকি ছিল। তার আগেই প্রকাশ্যে এল এই ঘটনা। মনোজ বলেন, ‘‘ওঁদের ব্যবসার ভিতরের কথা তো আমি জানি না। তবে আমার থেকে জিনিস না-নিলেও অন্য জায়গা থেকে ওরা জিনিস নিচ্ছিলেন, আমি সেই খবর পেতাম। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়নি। আমার সঙ্গেও কখনও খারাপ ব্যবহার করেননি কেউ।’’

মনোজ জানান, তাঁকে জানুয়ারি মাসে চেক থেকে টাকা তুলতে বলা হয়েছিল। পরে জানানো হয়, জানুয়ারি নয়, ফেব্রুয়ারিকে টাকা পাবেন। কিন্তু কিছু দিন আগেও চেক বাউন্স হয়ে যাওয়ায় দে পরিবারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন মনোজ। দুই ভাইকে ফোনে না-পেয়ে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে যান। তাঁদের এক আত্মীয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন পাওনাদার। তিনিও জানান, দুই ভাই বা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে মঙ্গলবার থেকে যোগাযোগ করা যায়নি। সকলের ফোন বন্ধ।

আর্থিক চাপেই কি এত বড় বিপর্যয় নেমে এল ট্যাংরার দে পরিবারে? হাসপাতাল থেকে আহত দুই ভাইয়ের যে বয়ান পুলিশ নিয়েছে, তাতেও আর্থিক সমস্যার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, পায়েসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খান ছ’জনই। পরে শিশুপুত্রকে নিয়ে দুই ভাই গাড়ি করে বেরিয়ে পড়েন। আত্মহত্যার উদ্দেশ্যেই তাঁরা বাইপাসের ধারে মেট্রোর পিলারে ধাক্কা মারেন বলে দাবি। পুলিশ জানিয়েছে, এই দাবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ট্যাংরার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুই বধূ এবং এক কিশোরীর দেহ। দুই মহিলার হাতের শিরা কাটা ছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, এক জনের গলাতেও ছিল আঘাতের চিহ্ন। এ ছাড়া কিশোরীর মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরিয়ে গিয়েছিল। আত্মহত্যা না খুন, প্রশ্ন রয়েছে। তিন জনকে খুন করে দুই ভাই পালানোর চেষ্টা করছিলেন কি না, পুলিশ দেখছে। আপাতত ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য তাঁরা অপেক্ষা করছেন।

সংক্ষেপে
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টের পরে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে একটি স্তম্ভে ধাক্কা দিয়েছিল তাঁদের গাড়ি। প্রণয় এবং প্রসূন দাবি করেছিলেন, আত্মহত্যা করার জন্যই ওই পদক্ষেপ করেছিলেন তাঁরা। প্রণয়ের বয়ানও খতিয়ে দেখতে চায় পুলিশ।
  • সোমবার রাতে প্রসূনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর দাদা প্রণয় দে এবং প্রণয়ের কিশোর পুত্র প্রতীপ এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রতীপ জানিয়েছে, কাকা তাকেও খুন করার চেষ্টা করেছিলেন। মঙ্গলবার প্রসূনকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। ৬ মার্চ পর্যন্ত তাঁকে পুলিশি হেফাজতে থাকতে বলা হয়েছে।
Tangra unnatural death Kolkata Police

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}