ট্যাংরাকাণ্ডে ছোট ভাই প্রসূন দে-কে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল শিয়ালদহ আদালত। মঙ্গলবার প্রসূনকে আদালতে হাজির করায় পুলিশ। তবে তাঁর তরফে কোনও আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। রাজ্যের আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা লিগাল এড সার্ভিস-এর তরফে জানানো হয়, প্রসূন কোনও আইনজীবী রাখতে চান না। বিচারক প্রসূনকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি আইনজীবী রাখতে চান কি না। উত্তরে দু’দিকে ঘাড় নেড়ে অসম্মতির কথা বোঝান প্রসূন।
আদালতে পুলিশ জানায়, ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন। পুলিশের আর্জি অনুমোদন করেন বিচারক। প্রসূনকে দু’দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। প্রসঙ্গত, সোমবারই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন প্রসূন। তার পরেই তিনটি খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। অভিযুক্ত নিজের মুখেই স্বীকার করেছিলেন স্ত্রী, মেয়ে এবং বৌদিকে খুনের কথা।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি গাড়ি দুর্ঘটনার খবর দিতে কলকাতার ট্যাংরার অতুল শূর রোডে একটি বাড়িতে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু বাড়িতে পাওয়া যায় তিনটি দেহ। তাঁদের মধ্যে দু’জন মহিলা এবং এক জন কিশোরী। মৃতদের নাম সুদেষ্ণা দে, রোমি দে এবং প্রিয়ম্বদা দে। পরে জানা যায়, রোমির স্বামী প্রসূন বৌদি সুদেষ্ণা, স্ত্রী রোমি এবং মেয়ে প্রিয়ম্বদাকে খুন করেছেন। গাড়ি দুর্ঘটনার পর গুরুতর আহত হয়ে এনআরএস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সোমবারই ছাড়া পান ট্যাংরার দে পরিবারের ছোট ছেলে। এখনও ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁর দাদা প্রণয় দে এবং ভাইপো প্রতীপ।
ট্যাংরার ঘটনায় আগেই খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রসূনের শ্বশুর। তাতে গ্রেফতার হন জামাতা। পুলিশ সূত্রে খবর, ৪৩ বছরের প্রসূন তাঁর বয়ানে দাবি করেছিলেন, দে পরিবারের দুই বধূ সুদেষ্ণা দে এবং রোমির হাত কেটেছিলেন তিনিই। সোমবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে তাঁকে ট্যাংরা থানার পুলিশ গ্রেফতার করে।
আরও পড়ুন:
যে দিন বাড়ির তিন সদস্যের মৃত্যু হয়, সেই সময় দুই ভাই, প্রণয় এবং প্রসূন কে কোথায় ছিলেন, কী করছিলেন, সে সব তথ্যের খোঁজে পুলিশ। হাসপাতালেই প্রসূন, প্রণয়, প্রতীপের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছিল। তাতে খুনের কথা স্বীকার করে নেন প্রসূন। এ বার তাঁকে হেফাজতে নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইবেন তদন্তকারীরা।
- ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টের পরে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে একটি স্তম্ভে ধাক্কা দিয়েছিল তাঁদের গাড়ি। প্রণয় এবং প্রসূন দাবি করেছিলেন, আত্মহত্যা করার জন্যই ওই পদক্ষেপ করেছিলেন তাঁরা। প্রণয়ের বয়ানও খতিয়ে দেখতে চায় পুলিশ।
- সোমবার রাতে প্রসূনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর দাদা প্রণয় দে এবং প্রণয়ের কিশোর পুত্র প্রতীপ এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রতীপ জানিয়েছে, কাকা তাকেও খুন করার চেষ্টা করেছিলেন। মঙ্গলবার প্রসূনকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। ৬ মার্চ পর্যন্ত তাঁকে পুলিশি হেফাজতে থাকতে বলা হয়েছে।
-
ট্যাংরাকাণ্ডের চার মাস পরে নতুন স্কুলে প্রতীপ, মাতৃহারা কিশোরের ভবিষ্যৎ আশ্রয় অবশ্য এখনও অনিশ্চয়তায়
-
ট্যাংরার দে পরিবারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বড়ভাই প্রণয়কে গ্রেফতার করল পুলিশ
-
নতুন স্কুল, নতুন ক্লাস, নতুন জীবনযুদ্ধে কিশোর! ট্যাংরার পরিবারে বিপর্যয়ের তিন মাস পর প্রতীপের জীবন-নামচা
-
ট্যাংরাকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে কিশোর প্রতীপের বয়ান! গোপন জবানবন্দি নিতে নির্দেশ কোর্টের
-
কাকে কখন খুন? সব ঠিক বলছেন কি? প্রসূনকে ট্যাংরার বাড়িতে নিয়ে গেল পুলিশ, হল ঘটনার পুনর্নির্মাণ