ট্যাংরাকাণ্ডে দে পরিবারের কিশোর সদস্য প্রতীপ দে-র গোপন জবানবন্দি নেওয়ার নির্দেশ দিল শিয়ালদহ আদালত। ট্যাংরার ঘটনায় কিশোরের বয়ান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে সে শিয়ালদহের এনআরএস হাসপাতালে রয়েছে। শুক্রবার সেখান থেকে আদালতে এনে তাঁর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হতে পারে।
এনআরএসে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রতীপের বাবা প্রণয় দে-ও। তাঁর ভাই প্রসূন দে-কে আগেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বর্তমানে তিনি জেলে। প্রণয় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলে তাঁকেও গ্রেফতার করা হতে পারে। কিশোর কার কাছে থাকবে, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর আগে শিয়ালদহ আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়ে গিয়েছেন প্রসূন। নাবালকের গোপন জবানবন্দি নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছিল পুলিশ। তাঁর শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা কেমন আছে জানতে চেয়ে হাসপাতালের রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় আদালত। তার পর প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হল।
আরও পড়ুন:
একই পরিবারের তিন সদস্যের দেহ উদ্ধার করা হয় ট্যাংরার দে বাড়ি থেকে। খুন হন প্রণয়ের স্ত্রী সুদেষ্ণা, প্রসূনের স্ত্রী রোমি এবং প্রসূনের ১৪ বছরের কন্যা প্রিয়ম্বদা। তিন জনের মৃত্যুর পর গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন দে পরিবারের দুই ভাই। গাড়িতে কিশোরও ছিল। তাঁদের গাড়ি বাইপাসের ধারে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। গুরুতর জখম হন তিন জন। জেরার মুখে প্রসূন দাবি করেছেন, তিনিই নিজের স্ত্রী, বৌদি এবং ভাইঝিকে খুন করেছেন। পরিবারের সকলে মিলে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আত্মহত্যার উদ্দেশ্যেই তাঁরা গাড়ি নিয়ে বাইপাসের ধারের স্তম্ভে ধাক্কা মারেন বলে দাবি। পুলিশ এই সমস্ত বয়ান খতিয়ে দেখছে।
দে পরিবারের জীবিত সদস্যদের বয়ান অনুযায়ী, তাঁরা একসঙ্গে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। তার জন্য ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস খেয়েছিলেন সকলে। খাদ্যে বিষক্রিয়ার জেরে প্রিয়ম্বদার মৃত্যু হয়। দুই বধূ আত্মহত্যা করতে না-পারলে প্রসূন তাঁদের হাতের শিরা এবং গলা কেটে দেন। কিশোর প্রতীপকেও খুনের চেষ্টা করা হয়েছিল। তার হাতে কাটা দাগ রয়েছে। কিশোর জানিয়েছে, কাকা প্রসূন তার মুখে বালিশ চেপে ধরেছিলেন। হাতও কেটে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাঁচার চেষ্টা করে ওই কিশোর। সে দমবন্ধ করে রেখে মারা যাওয়ার ভান করেছিল। প্রসূন তাঁকে মৃত মনে করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান। পরে কিশোর উঠে পড়ে।
হাসপাতালে একাধিক বার প্রসূনের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, তিনটি খুনই তিনি করেছেন। কিন্তু এর সঙ্গে দাদা প্রণয়ের যোগ রয়েছে বলে তদন্তকারীদের অনুমান। খুনের ষড়যন্ত্রেও তাঁর হাত ছিল। ফলে তাঁকেও হেফাজতে নেওয়া হতে পারে। তাঁর এবং প্রসূনের বয়ানের সঙ্গে কিশোরের বয়ান মিলিয়ে দেখবেন তদন্তকারীরা।
- ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টের পরে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে একটি স্তম্ভে ধাক্কা দিয়েছিল তাঁদের গাড়ি। প্রণয় এবং প্রসূন দাবি করেছিলেন, আত্মহত্যা করার জন্যই ওই পদক্ষেপ করেছিলেন তাঁরা। প্রণয়ের বয়ানও খতিয়ে দেখতে চায় পুলিশ।
- সোমবার রাতে প্রসূনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর দাদা প্রণয় দে এবং প্রণয়ের কিশোর পুত্র প্রতীপ এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রতীপ জানিয়েছে, কাকা তাকেও খুন করার চেষ্টা করেছিলেন। মঙ্গলবার প্রসূনকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। ৬ মার্চ পর্যন্ত তাঁকে পুলিশি হেফাজতে থাকতে বলা হয়েছে।
-
ট্যাংরার দে পরিবারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বড়ভাই প্রণয়কে গ্রেফতার করল পুলিশ
-
নতুন স্কুল, নতুন ক্লাস, নতুন জীবনযুদ্ধে কিশোর! ট্যাংরার পরিবারে বিপর্যয়ের তিন মাস পর প্রতীপের জীবন-নামচা
-
কাকে কখন খুন? সব ঠিক বলছেন কি? প্রসূনকে ট্যাংরার বাড়িতে নিয়ে গেল পুলিশ, হল ঘটনার পুনর্নির্মাণ
-
কন্যা প্রিয়ম্বদার পা চেপে ধরেছিলেন মা রোমি, মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেন তিনিই! দাবি প্রসূনের
-
আইনজীবী রাখতে চাইছেন না ট্যাংরাকাণ্ডের প্রসূন! বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠাল আদালত