সন্ধ্যায় রাজারহাটের বেড়াবেড়িতে একটি রেস্তোরাঁয় কাবাব খাওয়া হবে। মকবুলকে এমনই প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু আবদুল। যেতে রাজি না হলেও মকবুলকে একপ্রকার জোর করেই রাজি করান আবদুল। কিন্তু বেড়াবেড়ি পর্যন্ত যেতে হয়নি। নবাবপুরের কাছে মোটরবাইক চালিয়ে যাওয়ার সময়ে গুলিবিদ্ধ হন মকবুল।
রাজারহাটের ব্লক তৃণমূল নেতা মকবুল আলির খুনের ঘটনায় তাঁর বন্ধু আবদুল সালাম ওরফে বাচ্চুকে গ্রেফতার করে এমনটাই জেনেছে তদন্তকারী দল। পুলিশের দাবি, মকবুল খুনের ঘটনায় আবদুলই অন্যতম অভিযুক্ত। গুলি চালানোর ঘটনার সময়ে আবদুল মকবুলের মোটরসাইকেলের পিছনেই বসে ছিলেন। ঘটনার সময়ে আবদুলকে জেরা করে জানা গিয়েছে, সিন্ডিকেটের মধ্যে বিবাদের জেরেই এই ঘটনা। রাজারহাটের সিন্ডিকেটের জেরে খুনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে এ বার ভর সন্ধ্যায় রাস্তায় মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে গুলি করে খুনের ঘটনা ফের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আবদুল পুলিশকে জানান ঘটনার দিন মকবুলের পথ আটকে দুই মোটরসাইকেল চালক দূর থেকে গুলি করে পালায়। দুষ্কৃতীরা চলে গেলে তিনিও আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকেন। প্রথমে আবদুলকে সন্দেহ না হলেও পরে জেরা করতে গিয়ে পুলিশ তাঁর কথায় বেশ কিছু অসঙ্গতি টের পায়। পুলিশের দাবি, আবদুলের মোবাইলের কল-লিস্ট পরীক্ষা করে ঘটনার সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়টি পরিষ্কার হয়।
তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, যে ভাবে মকবুলকে গুলি করা হয়েছে, চলন্ত মোটরসাইকেলে দূর থেকে তা করা কার্যত অসম্ভব। তাই দুষ্কৃতীরা মোটরসাইকেলে এসে গুলি করেছে, নাকি মকবুলের মোটরবাইকের পিছনে বসে আবদুলই সে কাজ করেছেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। পুলিশ জানায়, এ নিয়ে আবদুলকে জেরা করা হয়েছে।
আবদুলকে জেরা করে সিন্ডিকেটের বিবাদটাই সামনে চলে আসছে বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ জানিয়েছে, মকবুল নিউ টাউনের একটি অন্যতম বড় সিন্ডিকেটের সঙ্গে নির্মীয়মান সংস্থায় ইট-বালি সরবরাহের কাজ করলেও সম্প্রতি নিজস্ব দল তৈরি করে সিন্ডিকেটের কাজ করছিলেন। রাজারহাট থানার মহম্মদপুরে একটি নির্মানকারী সংস্থায় ইট-বালি ফেলা নিয়ে তাঁর পুরনো সিন্ডিকেটের সঙ্গে গণ্ডগোল হয়। তাঁকে ওখানে ইট-বালি সরবরাহ করতে বারন করেন রাজারহাটের ওই বড় সিন্ডিকেটের সদস্যেরা। সেই গণ্ডগোল সাময়িক ভাবে মিটলেও পরে ফের তা শুরু হয়। কয়েকবার মকবুলকে হুমকিও দেওয়া হয়। কিন্তু মকবুল তাঁদের কথা শোনেননি। তার জেরেই এই খুন কিনা, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
কিন্তু আবদুল কী ভাবে জড়িত? পুলিশ জানিয়েছে আবদুল নিউ টাউনের ওই বড় সিন্ডিকিটের সদস্য। তাঁর সঙ্গে মকবুলের সম্পর্ক অতীতে ভাল হলেও সম্প্রতি সিন্ডিকেটের বিষয় নিয়েই সম্পর্ক খারাপ হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার আবদুল মকবুলের সঙ্গে দেখা করে বিবাদ মিটিয়ে নিতে বলেন ও রেস্তোরাঁয় যাওয়ার প্রস্তাব দেন। পথেই গুলিবিদ্ধ হন মকবুল। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “আবদুলকে বারাসত আদালত ৬ দিনের পুলিশি হেফাজত দিয়েছে। তাঁকে ফের জেরা করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy