কলকাতা শহরে এখনও আন্তর্জাতিক মানের আর্ট মিউজিয়াম নেই। দেশের অন্য বড় শহরের মতো আর্ট শো-ও হয় না। সে কথা শিল্পী ও শিল্পরসিক মহলে দীর্ঘ দিন ধরেই আলোচিত। এ নিয়ে আক্ষেপও রয়েছে। সেই খেদই এ বার চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরীর গলায়। ঘটনাচক্রে যিনি রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ।
বুধবার বিকেলে সিমা আর্ট গ্যালারিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে যোগেনবাবু বলেন, “শিল্পচর্চায় আমরা এক সময়ে অনেক এগিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু এখনও এ শহরে আন্তর্জাতিক আর্ট মিউজিয়াম নেই, কেরল বা দিল্লির মতো শো নেই। আমরা ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছি।’’ অনেকের অভিমত, শিল্পকলায় উদ্যোগের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের নেতিবাচক মনোভাবের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন বিশিষ্ট এই চিত্রকর। ওই বৈঠকেই প্রবীণ শিল্পী লালুপ্রসাদ সাউ বলেন, “কলকাতায় এখন মিউজিয়াম, শিল্পের সমঝদার, ক্রেতা সব কিছুই বাড়াতে হবে।”
কেরলে দ্বিবার্ষিক আর্ট শো ‘কোচি বাইঅ্যানাল’-এ দর্শকের সংখ্যা গত বছরই ৪ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে শিল্পী বোস কৃষ্ণমাচারির মন্তব্য, “আর্ট মিউজিয়ামের অভাবে কলকাতা আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার সান্নিধ্য থেকে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে।” একই প্রশ্নে লেখক অমিত চৌধুরীর সংযোজন, “কেন এখানে ভাল মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট হয়নি, সেই প্রশ্নটার পাশাপাশি এই শহরে আর্টের উপস্থাপন থেকে সংরক্ষণ, সব কিছু নিয়েই আমাদের ভাবার সময় এসেছে।”
আশার কথা, এই পরিস্থিতিতেও আলোর ছোঁয়া আনতে মার্চ মাসে প্রথম আর্ট অ্যাওয়ার্ড শো-এর আয়োজন করছে সিমা গাল্যারি। আগামী ১৩ মার্চ থেকে সেই শো-এ অংশ নেওয়া ১৫৯ জন তরুণ শিল্পী ভারতীয় চিত্রকলাতেও নিয়ে আসতে পারেন ‘লুক ইস্ট’ পলিসি। তাঁদের সৌজন্যেই কলকাতা ফের নজর টানতে পারে তামাম শিল্পরসিকদের।
২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী তরুণ শিল্পীরা পাঠিয়েছিলেন চিত্রকলা, গ্রাফিক আর্ট, ভাস্কর্যের নমুনা। ভারতের ১৫টি রাজ্য থেকে আসা প্রায় দু’হাজার নমুনা থেকে বিচারকেরা দুই পর্বে বাছাই করে নিয়েছেন ১৫৯টি কাজ। শুধু দিল্লি-কলকাতার মতো মেট্রো শহর নয়, নমুনা এসেছে গাজিয়াবাদ, রাঁচি এমনকী শ্রীনগর, পহলগামের মতো ছোট শহর থেকেও। নমুনা পাঠিয়েছেন মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচলের শিল্পীরাও। দুনিয়ায় মহিলা চিত্রশিল্পীর সংখ্যা ক্রমে কমছে, অথচ এখানে চূড়ান্ত বাছাই ১৫৯ জনের মধ্যে ২৯ জনই মহিলা। লিঙ্গভেদের মতো ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্যও! কোনও দুঃস্থ শিল্পীর হয়তো ছবি ফ্রেম করার পর্যাপ্ত টাকাও নেই, আর্ট গ্যালারিতে এসে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে হাত লাগিয়ে বাঁধিয়ে গিয়েছেন ছবি। “এঁদের দেখেই বুঝেছিলাম, কলকাতায় এমন শো কত জরুরি ছিল,” বলছিলেন সিমার ডিরেক্টর রাখী সরকার।
শো-এর হাত ধরে বদলে যেতে চলেছে শহরের শিল্প-পরিসরও। বাছাই ১৫৯টি কাজ সিমা, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের আর্ট গ্যালারির পাশাপাশি থাকবে সাউথ সিটির শপিং মলে, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের হেরিটেজ বাড়িতে। কোচি বাইঅ্যানালে-তে অবশ্য এমন ২০টি ঠিকানা রয়েছে। কলকাতায় প্রথম বার-ই সে রকম হল না ঠিকই, তবে একটি জায়গায় সিমা অ্যাওয়ার্ড শো এগিয়ে থাকছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথম শিল্পীর জন্য ৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার। এবং ভবিষ্যতে সিমা গ্যালারিতেই তিনি করতে পারবেন তাঁর কাজের প্রদর্শনী। “এই সুযোগটা দেশের অন্য অ্যাওয়ার্ড শো-গুলিতে নেই,” জানান বিশ্বভারতীর কলাভবনের অধ্যাপক পঙ্কজ পানওয়ার। নবীন শিল্পী থেকে নৈরাজ্যের শহর সকলের জন্যই এ বার ভুবনডাঙার শিল্প-আকাশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy