সেয়ানে-সেয়ানে কোলাকুলির মতো বেয়ানে-বেয়ানে গলাগলি বিরল নয়। এমনকী চুলোচুলিও হয়ে থাকে। তা বলে কামড়াকামড়ি! শুনতে যত বিস্ময়করই লাগুক, মঙ্গলবার এমনটাই দেখা গেল শিয়ালদহ আদালতের চত্বরে।
দৃশ্যটা কেমন?
আদালত-চত্বরে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চেঁচাচ্ছেন এক মহিলা। আর সামনে দাঁড়ানো অন্য এক মহিলা কামড়ে ধরে রয়েছেন ওই মহিলার বাঁ হাতের কড়ে আঙুল! এবং অচিরেই সেই আঙুল দু’খান হয়ে মাটিতে!!
মঙ্গলবার দুপুরে শিয়ালদহ আদালত-চত্বরে এমন দৃশ্য দেখে চমকে ওঠেন আইনজীবীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েক জন আইনজীবী তড়িঘড়ি দুই মহিলাকে ছাড়িয়ে দেন। কিন্তু তত ক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ঘটে গিয়েছে এক মহিলার অঙ্গহানি! এক আইনজীবী বলেন, “সন্ধ্যাবতী শর্মা নামে ওই মহিলার আঙুল কামড়ে কেটেই নিরস্ত হননি অন্য মহিলা। কাটা আঙুলটা নিয়ে নেন নিজের মুখের মধ্যে। আক্রান্তের পরিত্রাহি চিৎকার আর হুটোপাটির মধ্যে বিপদ বুঝে এক সময় সেটি মেঝেতে ফেলে দেন আক্রমণকারী মহিলা। কাটা আঙুলটা মাটিতে পড়ে নড়ছিল!”
পুলিশ জানায়, ঘটনার পরেই সন্ধ্যাবতীকে নীলরতন সরকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতার করা হয়েছে সুমিত্রা নাউ নামে আক্রমণকারী মহিলাকে।
সন্ধ্যাবতী ও সুমিত্রা সম্পর্কে বেয়ান। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, কাশীপুরের বাসিন্দা সুমিত্রার ছেলে শৈলেশের সঙ্গে বেলঘরিয়ার বাসিন্দা সন্ধ্যাবতীর মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। তাঁদের বিচ্ছেদের মামলা চলছে। সেই জন্যই এ দিন দুই পরিবার আদালতে এসেছিল। অভিজ্ঞ আইনজীবীরা বলছেন, পারিবারিক গোলমালের জেরে বেয়ানে-বেয়ানে লড়াই তাঁদের কাছে মোটেই অপরিচিত নয়। কিন্তু এ ভাবে আদালত-চত্বরে আঙুল কামড়ে কেটে নেওয়ার ঘটনা বিরল।
এমনটা ঘটল কেন?
ঘটনাটির মূলেও আছে অন্য এক মারামারি। স্বামীকে স্ত্রীর চপেটাঘাত। আদালত সূত্রের খবর, শিয়ালদহ আদালতের প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে ওই বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা চলছে। দুলাল ভট্টাচার্য নামে প্রত্যক্ষদর্শী এক আইনজীবী বলেন, “এ দিন শুনানির পরে শৈলেশ এজলাসের বাইরে আসতেই তাঁর স্ত্রী চড় মারতে থাকেন। মেয়ে জামাইকে মারছে দেখে সন্ধ্যাবতীও শৈলেশের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্ত্রী আর শাশুড়ির হাতে ছেলেকে যারপরনাই নাস্তানাবুদ হতে দেখে সুমিত্রা কামড়ে ধরেন বেয়ান সন্ধ্যাবতীর কড়ে আঙুল।” বৌমাকে শায়েস্তা করতেই এই পথ নেন তিনি।
সন্ধ্যাবতীর মেয়ে রীতার অভিযোগ, তিনিই স্বামীর হাতে আক্রান্ত হন। ওই তরুণী বলেন, “আমার স্বামী আমাকে মারতে এসেছিল। মা আমাকে বাঁচাতে আসায় শাশুড়ি তাঁকে কামড়ে দেন। ওঁদের পুরো পরিবারটাই এমন অত্যাচারী!” তবে সুমিত্রা এর আগে কাউকে কামড়েছেন কি না, তা বলতে পারেননি রীতা। তাঁর অভিযোগ, “শাশুড়ি খুব মুখরা। পাড়ার সকলেই ওঁকে ভয় পায়।” সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে সন্ধ্যাবতীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ দিন আদালতে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছুটা জায়গা ভেজা। পুলিশকর্মী আর আইনজীবীরা জানালেন, ঘটনাটা ঘটেছিল ওখানেই। পরে জল দিয়ে ধুয়ে দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে জোর জল্পনা চলছে আদালতের বিভিন্ন ঘরে। অসীম কুমার নামে এক আইনজীবী বলেন, “মামলা নিয়ে আদালত-চত্বরের বাইরে গুলির লড়াই দেখেছি। কিন্তু মামলা লড়তে এসে এক মহিলা কামড়ে অন্য মহিলার আঙুল কেটে নিচ্ছেন, এমনটা আগে কখনও দেখিনি!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy