গোখেল রোড
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পাশের রাস্তায় ত্রিফলা স্তম্ভের ছোট্ট দরজাটি খোলা। তা থেকে বেরিয়ে রয়েছে একগুচ্ছ তার। রাস্তার উল্টো দিকে রেসকোর্সের গায়েও ফিডার বক্সের দরজা হাট খোলা।
এসএসকেএমের আশপাশেও ফিডার বক্সের হাল একই রকম। কোনওটির দরজা খোলা, কোনওটির আবার দরজাই উধাও। বেশির ভাগ ফিডার বক্স থেকেই বিপজ্জনক ভাবে বেরিয়ে রয়েছে বৈদ্যুত্যিক তার।
ওই হাসপাতালের পাশে গোখেল রোডেই বৃহস্পতিবার ফিডার বক্সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় বছর ছ’য়েকের এক শিশুর। অভিযোগ, ওই ফিডার বক্সটি খোলা ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটি তার মায়ের সঙ্গে ফুটপাথে থাকত। ঘটনার পরে মৃত শিশুটিকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ জানায়, চিকিৎসকেরা ময়না-তদন্তের কথা বলার পরেই মৃত শিশুটিকে নিয়ে তাঁর মা উধাও হয়ে যান।
এই ঘটনার পরে এ দিন ওই এলাকার আশপাশে ঘুরে দেখা গেল, বেশির ভাগ ফিডার বক্সেরই এক হাল। পার্ক সার্কাস, মৌলালি, শিয়ালদহ এলাকাতেও বাতিস্তম্ভ-ফিডার বক্স রয়েছে অত্যন্ত বিপজ্জনক ভাবে।
শহর জুড়ে এই হাজারো বিদ্যুৎ স্তম্ভ-ফিডার বক্সের কোনওটি পুরসভার, কোনওটি পূর্ত দফতর আবার কোনওটি সিইএসসি-র। অভিযোগ, এ সব বাতিস্তম্ভ-ফিডার বক্সের বেহাল দশা নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠলেও সুরাহার ব্যবস্থা করা হয় না। তাই বিপদ মাথায় নিয়েই ফুটপাথ দিয়ে হাঁটেন শহরবাসী।
প্রায় ছ’মাস ধরে আট বছরের মেয়ের চিকিৎসার জন্য নিয়মিত এসএসকেএমে আসছেন হাওড়ার রামরাজাতলার বাসিন্দা কোয়েল সাহা। তিনি বলেন, “তারগুলো বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে। কিন্তু এর পাশ দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।” পার্ক সার্কাস, এন্টালি অঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, তাঁদের এলাকায় বিপজ্জনক বাতিস্তম্ভ-ফিডার বক্স নিয়ে বারবার অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু পূর্ত দফতর বা সিইএসসি তাতে গুরুত্ব দেয় না বলেই অভিযোগ।
মৌলালি
কিন্তু শহর জুড়ে ফিডার বক্সের এই হাল কেন?
পুরসভা এর পিছনে ষড়যন্ত্র দেখতে পেয়েছে। মেয়র পারিষদ (আলো) মনজর ইকবাল বলেন, “সামনে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে তৃণমূলের বিরোধীরা এই কাজ করছে।” মনজরের যুক্তি, চুরি বা খারাপ হওয়ার ঘটনা এক-দু’বার হতে পারে। বারবার হতে পারে না।
সিইএসসি জানিয়েছে, প্রতিটি বাতিস্তম্ভ ও ফিডার বক্স সুরক্ষিত রাখার জন্য কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংস্থার এক কর্তা বলেন, “অনেক সময়েই দুষ্কৃতীরা ফিডার বক্সের ক্ষতি করে। আমরা খবর পেয়েই সারানোর ব্যবস্থা করি।”
বাসিন্দাদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকের সঙ্গে যোগসাজসে এই ফিডার বক্সের দরজা খোলা রাখা হয়। পরে সেখান থেকে বিদ্যুৎ চুরি করা হয় বলেও অভিযোগ। পূর্ত দফতরও জানিয়েছে, মাদকাসক্ত দুষ্কৃতীরাই ফিডার বক্সের ক্ষতি করে। এই ক্ষতি আটকাতে ‘ইন্টারলকিং’ ব্যবস্থা রয়েছে। বাইরে থেকেও তালা দেওয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও চোরের উপদ্রব ঠেকানো যাচ্ছে না বলে পূর্ত দফতরের দাবি। দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “দরজা কিংবা তামার তার চুরি করতেই ফিডার বক্সের ক্ষতি করা হয়।”
কিন্তু এই চুরির ঘটনা কি পুলিশকে জানানো হয়েছে? চুরি আটকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
এ সমস্ত প্রশ্নের অবশ্য কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy