Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

মেয়েদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ এখনও উপেক্ষিত শহরে

কী অবস্থা শহরে মহিলাদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলির? এখনও কি সামাজিক বাধার জগদ্দলে থেমে আছে মহিলাদের ক্রিকেট জার্নি? এ শহরের হরমনপ্রীতদের যাত্রাপথটা কি ততটা মসৃণ নয় আজও?

সমর্থন: লর্ডসে ভারত যখন মাঠ কাঁপাচ্ছে, তখন শহরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছেন ঝুলনদের উত্তরসূরীরা। রবিবার, বিবেকানন্দ পার্কে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সমর্থন: লর্ডসে ভারত যখন মাঠ কাঁপাচ্ছে, তখন শহরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছেন ঝুলনদের উত্তরসূরীরা। রবিবার, বিবেকানন্দ পার্কে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৭ ০৮:৪০
Share: Save:

আজ তাঁরা শিরোনামে। ‘মিতালি’ বাহিনীর বিশ্বকাপ দেখে নতুন করে চোখ পড়েছে ব্রাত্য হয়ে থাকা মহিলা-ক্রিকেটের দিকে। ভারতীয় মহিলা দলের এত বড় সাফল্যের পরেই তা সম্ভব হয়েছে। আর সেই আলোয় চোখ পড়েছে মহিলা ক্রিকেটের সামগ্রিক প্রশিক্ষণের দিকেও।

কী অবস্থা শহরে মহিলাদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলির? এখনও কি সামাজিক বাধার জগদ্দলে থেমে আছে মহিলাদের ক্রিকেট জার্নি? এ শহরের হরমনপ্রীতদের যাত্রাপথটা কি ততটা মসৃণ নয় আজও?

বাস্তব চিত্র বলছে, এ শহরের পাড়ায় পাড়ায় ছেলেদের ক্রিকেট কোচিং সেন্টারগুলি রমরমিয়ে চললেও, মেয়েদের শেখার ব্যবস্থা এখনও বেশ পিছিয়ে। সংখ্যা আর পরিকাঠামো, দু’দিক থেকেই অনেক কম। বিবেকানন্দ পার্কে এ রকমই একটি মহিলা-ক্রিকেট কোচিং সেন্টার চালান কোচ দীপেন রুদ্র। তিনি দাবি করলেন, এটিই শহরের প্রথম মহিলাদের ক্রিকেট কোচিং সেন্টার। গুটিকয়েক ছাত্রী নিয়ে নয়ের দশকের গোড়ায় শুরু হলেও আজ ছাত্রীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১০০।

দীপেনবাবু জানালেন, ‘ক্রিকেট মানেই ছেলেদের খেলা,’ এমন ধারণা অনেকটাই ভেঙেছে। তাঁর কোচিং সেন্টারে প্রতি বছর বেড়ে যাওয়া অ্যাডমিশনের সংখ্যাই তার প্রমাণ। ‘‘তবে এই উৎসাহ অনেক বেশি হতো, যদি ক্রিকেট বোর্ডের সচেতনতা আর একটু বাড়ত এবং স্পনসরেরা পুরুষদের পাশাপাশি মহিলা ক্রিকেটের প্রতিও যত্নশীল হতেন।’’

মহিলা ক্রিকেটের কোচদের মুখে মুখে ঘোরা বহু সমস্যার মধ্যে এটা একটা। যত ক্ষণ না এক জন খেলোয়াড় জাতীয় স্তরে পৌঁছে নজর কাড়ছেন, তত ক্ষণ কোনও স্পনসরশিপ মেলে না। জাতীয় স্তরে পৌঁছনোর জন্য যে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, তার খামতির দিকে ততটা নজর দেওয়া হয় না। উদাসীন থাকেন স্পনসরেরাও। ভারতীয় মহিলাদের ক্রিকেট দলের এক কালের অধিনায়ক ও প্রাক্তন কোচ শ্রীরূপা বসু মুখোপাধ্যায়ও তুলে ধরলেন সেই সমস্যার দিকটিই। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েদের জন্য কোচিং ভাল হবে কোথা থেকে। তার জন্য তো স্পনসরশিপ দরকার। মেয়েদের খেলার জন্য যে সেই টাকাটা খরচ করা যায়, তার জন্য তো সচেতনতা দরকার। সেটা কোথায়?’’

দীপেনবাবুর পর্যবেক্ষণ, লড়াকু মানসিকতার মেয়েরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় টাকার অভাবে। উচ্চমানের প্রশিক্ষণ নিতে গেলে যে পোশাক, সরঞ্জাম এবং খাবার দরকার, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জোগাড় করে উঠতে পারে না তারা। আবার উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে যে সমস্ত মেয়েরা খেলতে আসে ছোটবেলায়, তারা একটু বড় হওয়ার পরেই নানা রকম পারিবারিক চাপ আসে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বলা হয়, চেহারায় লালিত্য কমে যাবে। বলা হয়, রোদে-জলে গায়ের রং পুড়ে যাবে। ‘‘আসলে
উৎসাহ বা উদ্দীপনা বাড়লেও, ক্রিকেট যে আদতে একটি ‘পুরুষালি’ খেলা, সে ধারণা তখনই ভাঙবে, যখন ‘মহিলা ক্রিকেট’ শব্দবন্ধটাই আর ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে না,’’ বললেন দীপেনবাবু।

বস্তুত, ক্রিকেট প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এই মহিলা-পুরুষ ভাগাভাগিটা যতটা না খেলার প্রয়োজনে, তার চেয়ে অনেক বেশি সামাজিক ছুতমার্গের কারণে। এ কথা বলছেন কোচেরাই। দীপেনবাবুর আক্ষেপ, ‘‘খেলার মাঠেও আমাদের চিন্তাভাবনা এখনও প্রাপ্তবয়স্ক হল না। ছেলেদের সঙ্গে মেয়েদের ফারাকটা রয়েই গেল। অথচ আমি নিজে কোচ হয়ে বলছি, মেয়েদের প্রশিক্ষণের জন্য কোনও আলাদা ব্যবস্থা আমি অন্তত করিনি। ঠিক যেমন, সেমিফাইনালে হরমনপ্রীতের ঝোড়ো ইনিংস কপিল-সচিন-সহবাগ-বিরাটদের পরিচিত দাপট থেকে এতটুকুও পিছিয়ে ছিল না।’’

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানসিকতা বদলাচ্ছে, এটা ঠিক। তবে ঘরে ঘরে মেয়েদের হাতে কবে খেলনাবাটির বদলে ক্রিকেট ব্যাট তুলে দেওয়া হবে, তার উত্তর দেবে সময়ই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE