পুরসভার এই জলের গাড়িই ভরসা চন্দ্রনাথ রায় রোডের বাসিন্দাদের। নিজস্ব চিত্র
এক জনের বয়স বাহাত্তর। অন্য জন সত্তরের কোটায়। এখনও শীত, গ্রীষ্ম বারো মাস স্বামী-স্ত্রীকে ভোরে উঠতে হয়। পাছে জলের গাড়ি চলে যায়! গাড়ি ধরতে না পারলে যে দিনভরের ভোগান্তি। জলের জন্য ফের পরের দিন গাড়ি আসার অপেক্ষা করতে হবে। নয়তো জল কিনে খেতে হবে। বুড়ো-বুড়ির সংসারে জল কিনে খাওয়া বাহুল্য। তাই গরম যত বাড়ছে জলের চিন্তায় গলা ততই শুকিয়ে আসছে দম্পতির।
একা তাঁদের নয়, বাইপাস লাগোয়া চন্দ্রনাথ রায় রোডের ঘরে ঘরে দীর্ঘদিন এমনই জলের সঙ্কট বলে অভিযোগ। ভোরের দিকে এক বার আসে কলকাতা পুরসভার জলের গাড়ি। সারাদিনের মতো সেই গাড়ির জলই সম্বল। রান্না-খাওয়া, দিন যাপনের জন্য তাই ভোর থেকে জলের পাত্র হাতে লাইন দিতে হয় স্থানীয়দের। ভোরে উঠে গাড়ি দাঁড়ানোর নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে জলের পাত্র পেতে আসেন কেউ কেউ। স্থানীয় দিলীপ মাঠ সংলগ্ন এক বৃদ্ধ বাসিন্দা বললেন, ‘‘ছেলে চাকরির সূত্রে বাইরে থাকে। স্ত্রী আবার এখন হাঁটতে পারেন না। তাই ভোরে উঠে আমিই জল আনতে যাই। এক বার গাড়ি চলে গেলে আর দেখতে হবে না।’’ এলাকায় অবশ্য পুরনো কয়েকটি টিউবওয়েলও রয়েছে। তবে তার জল ব্যবহারের অযোগ্য বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়দের বড় অংশ।
এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। ২০১৫ সালের পুর নির্বাচনে ওই এলাকার জল সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিল প্রায় সবক’টি রাজনৈতিক দলই। সে বার ওই পুরকেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হন তৃণমূল নেতা জাভেদ খানের পুত্র ফৈয়াজ আহমেদ খান। তবে চার বছরের মাথায় আরও একটি নির্বাচনের সামনে দাঁড়িয়ে স্থানীয়েরা অভিযোগ করছেন, আশ্বাস তো পূরণ হয়নি! সম্বিৎ ভদ্র নামে এক স্থানীয়ের কথায়, ‘‘আবার ভোট চাইতে আসছেন! পুর ভোটের সময়ে দেওয়া আশ্বাসই পূরণ করেননি। এখনও আমরা জলকষ্টে মরছি।’’ স্থানীয় স্কুলের শিক্ষিকা অনিতা চৌধুরী আবার বলছেন, ‘‘যাঁদের ক্ষমতা আছে, তাঁরা জল কিনে খাচ্ছেন। কিন্তু, সকলের তো আর সেই ক্ষমতা নেই! জল কিনেই যদি খেতে হয়, তবে ভোট দেব কেন?’’
স্থানীয় পুর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, কাজ প্রায় শেষের পথে। ওই এলাকার বাসিন্দারা দ্রুত দু’বেলা নিয়ম করে খাওয়ার জল পাবেন। এক পুর আধিকারিক জানাচ্ছেন, চন্দ্রনাথ রায় রোডে মাটির নীচে প্রায় ২০ লক্ষ গ্যালনের জলাধার তৈরির কাজ গত নভেম্বরেই শেষ হয়েছে। ধাপা থেকে ওই জলাধারে সরাসরি জল আসবে। তার পরে পাইপের মাধ্যমে তা এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘যখন কাজ প্রায় শেষ করে এনেছি, তখনই মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। তখন রাস্তা খোঁড়া গেল না। এর পরেই ভোট চলে এল। তাই সব হয়ে গিয়েও জল সরবরাহ চালু করা গেল না।’’
স্থানীয় কাউন্সিলর ফৈয়াজ বলছেন, ‘‘জি জে খান রোডে আমরা বুস্টার পাম্পিং স্টেশন করে এলাকার জলের সমস্যা প্রায় মিটিয়ে
দিয়েছি। এখানেও কাজ প্রায় শেষ। ভোটের জন্য কাজ থেমে আছে। একটু তো সময় লাগবেই।’’ স্থানীয়দের অভিযোগ যাচ্ছে না। তাঁদের প্রশ্ন, চার বছর সময় পেয়েও জল সমস্যা মেটানো গেল না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy