দুই পরিকল্পিত উপনগরী- সল্টলেক ও নিউ টাউন। কিন্তু অভিযোগ, দু’টিরই ন্যূনতম পরিষেবার ক্ষেত্রে গলদ রয়েছে পরিকল্পনা স্তরেই।
সল্টলেক পুর এলাকার জনসংখ্যা ৬ লক্ষের কিছু বেশি। সল্টলেকের দৈনিক বর্জ্যের পরিমাণ ১৫০ টনের কিছু বেশি। নিউ টাউনে ইতিমধ্যেই ২৮ হাজার বাসিন্দা। নিউ টাউন তৈরি হচ্ছে ১০ লক্ষ মানুষের বসবাসের জন্য। সেখানে এখন দৈনিক ১৫.৭৭ মেট্রিক টন বর্জ্য তৈরি হয়। রোজ এই দুই পুর নিগমের বর্জ্য যেখানে ফেলা হচ্ছে, সেই মোল্লার ভেড়ির ধারণ ক্ষমতা অনেক দিন আগেই সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়েছে। সেখানে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলে কিছুরও অস্তিত্ব নেই। এর ফলে যে মাত্রাতিরিক্ত হারে দূষণ ছড়াচ্ছে, তা স্বীকার করেছেন মেয়র পারিষদ থেকে পরিবেশবিদ সকলেই। আর নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, ‘‘পরিকল্পনার অভাব।’’
সল্টলেকের নবগঠিত পুর নিগমের মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবাশিস জানা বলেন, ‘‘হ্যাঁ, মারাত্মক দূষণ ছড়াচ্ছে। এ ভাবেই চলে আসছে। কী করব?’’ নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কোনও পদাধিকারী নাম অথবা বক্তব্য প্রকাশে ইচ্ছুক নন, কারণ ‘‘চেয়ারম্যান দেবাশিস সেনের নিষেধ আছে।’’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্তৃপক্ষের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক জন বলেন, ‘‘আমাদের কিছু করার নেই। সল্টলেকের সঙ্গে আমাদের জঞ্জালও মোল্লার ভেড়িতেই ফেলতে হয়।’’
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের বক্তব্য, ‘‘কোনও সভ্য দেশে এমনটা হতে পারে? অথচ দু’টি উপনগরীই নাকি রীতিমতো পরিকল্পনা করে তৈরি।’’
বাম সরকার নিউ টাউন পরিকল্পনার সময়ে ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নিরি)-কে দিয়ে একটি সমীক্ষা করিয়েছিল। ভবিষ্যতে শহরে বর্জ্যের পরিমাণ কী হতে পারে, কী ভাবে তার প্রক্রিয়াকরণ হতে পারে ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেয় নিরি। একই বিষয় নিয়ে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্থ-কে দিয়ে আরও একটি সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করানো হয়। দু’টি রিপোর্টেই বলা হয়, নিউ টাউনে ১০ লক্ষ মানুষের বসবাসের সুযোগ রয়েছে। রিপোর্টে দেখানো হয়, এ রকম আধুনিক শহরে এক জন মানুষের থেকে প্রতিদিন ৫০০ গ্রাম বর্জ্য তৈরি হয়। অর্থাত্, প্রতিদিন শুধু ৪৯২.১০ টন মানুষের বর্জ্য সরাতে হবে। ইনস্টিটিউট অব হাইজিন-এর অরুণাভ মজুমদার বলেন, “শুধু বর্জ্য ফেলে এলে চলে না। তা প্রক্রিয়াকরণে আধুনিক প্লান্ট দরকার।” তাই নিউ টাউনের তিনটি অ্যাকশন এরিয়ার বাইরে বিয়ন্তা মৌজায় ১২৩.৫৫ একর জমি চিহ্নিত হয়। কিন্তু শহরের জমি অধিগ্রহণ ও কেনার সঙ্গে বর্জ্য ফেলার জায়গা কেনেনি হিডকো।
কলকাতা থেকে নিউ টাউনে ঢোকার আগে ডান দিকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে মোল্লার ভেড়ি এখন সল্টলেকের বাসিন্দাদের বর্জ্যেই উপচে পড়ছে। তার উপরে নিউটাউনের ২৮ হাজার বাসিন্দার বর্জ্যের বোঝা। তবে বিপদ বুঝে সল্টলেকের প্রতি ওয়ার্ডে জঞ্জাল বিনাশকারী যন্ত্র বসানোর জন্য মেয়র পারিষদ দেবাশিসবাবু সোমবারই চিঠি লিখেছেন নগরোন্নয়ন মন্ত্রীকে। তিনি বলেন, ‘‘জঞ্জালের বিষয়টা উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিতে চাইছি। প্রতি ওয়ার্ডে এই যন্ত্র যদি বসাতে পারি, তা হলে আর কোনও ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ লাগবে না আমাদের।’’
নবগঠিত নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ) কর্তৃপক্ষ জানান, পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। চিফ ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ রায় বললেন, “মোল্লার ভেড়িতে সল্টলেক পুরসভার জঞ্জাল পড়ে। নিউটাউনের বর্জ্যও সেখানেই ফেলা হয়। নতুন কোনও জায়গায় বর্জ্য পরিশোধনের প্লান্টের কোনও প্রকল্পের কথা জানি না। পরিকল্পনা হলে সেই মতো কাজ হবে।” এনকেডিএ-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন অবশ্য কিছু বলতে রাজি হননি।
নিউ টাউন তৈরির সময়ে অ্যাকশন এরিয়ার বাইরে বিয়ন্তা মৌজার জমির দাম ছিল কাঠা প্রতি ৩-৪ হাজার টাকা। বর্তমানে তা কাঠা প্রতি ১৪-১৫ লক্ষ। নিউ টাউনে মোট ৮৭৭৭ একর জমি নেওয়ার কথা হিডকোর। এ পর্যন্ত অধিগ্রহণ হয়েছে ৬৮৩৪.৯৮ একর। এর সঙ্গে রয়েছে মোটামুটি ২৫০ একর কেনা জমি। ২০০১ সালে নতুন শহরের জন্য হিডকো অ্যাকশন এরিয়ার জমি কিনেছিল কাঠা প্রতি ৮-৯ হাজার টাকায়। সেই জমি বর্তমানে হিডকো বিক্রি করছে প্রতি কাঠা ন্যূনতম ৩.৫০ লক্ষে। এই অবস্থায় নতুন করে বর্জ্য ফেলার জমি কিনতে গেলে যে বিপুল দাম গুণতে হবে, তা নিয়েই চিন্তিত এনকেডিএ এবং হিডকো উভয় সংস্থাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy