Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

পুলিশ এখানে শুধুই দর্শক, প্রশ্ন ভূমিকা নিয়ে

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি ভাঙার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার কেওড়াতলা চত্বরে বিজেপির কর্মসূচি বুধবারই ঘোষণা করা ছিল।

অবাধ:ধুন্ধুমার যাদবপুরে। নিজস্ব চিত্র

অবাধ:ধুন্ধুমার যাদবপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৮
Share: Save:

দু’টিই ঘোষিত কর্মসূচি। দু’টি ক্ষেত্রেই ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন ছিল। কিন্তু দু’বারই পুলিশের সামনে উদ্যোক্তাদের উপরে হামলা চালাল বাইরে থেকে আসা কিছু লোক। ফলে দিনের শেষে আইনরক্ষকদের ভূমিকাই প্রশ্নের মুখে।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি ভাঙার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার কেওড়াতলা চত্বরে বিজেপির কর্মসূচি বুধবারই ঘোষণা করা ছিল। বিশৃঙ্খলা আঁচ করে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ লাগোয়া বেশ কিছু দোকানপাট বন্ধ করে পুলিশ। শববাহী গাড়ি় চেপে বিক্ষোভকারীরা ঢুকে পড়তে পারে ভেবে ওই সব গাড়িও পরীক্ষা করে। ছিল জলকামানও। অথচ বহিরাগতরা যে হামলা করতে পারে, আসল সেই খবরটাই ছিল না পুলিশের কাছে। অন্তত তেমনটাই তাদের দাবি।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন, কেন পুলিশ অশান্তির কথা আগাম জানত না? কেনই বা সেই অশান্তি ঠেকাতে পারল না তারা? বুধবার যে শ্মশান চত্বরে মূর্তির উপরে হামলা হতে পারে, সেই খবরও পুলিশের কাছে ছিল না। শ্মশান চত্বরে পুলিশ পিকেট থাকা সত্ত্বেও ঘটনাটা ঠেকানো যায়নি।

বিজেপির কর্মসূচি চলাকালীন মারপিট কেওড়াতলা শ্মশান এলাকাতে

এ দিন সকাল থেকেই শ্মশানের মুখ আটকে বসেছিলেন বেশ কিছু যুবক। ছিল পুলিশও। বেলা এগারোটা থেকে বিজেপি সমর্থকেরা আসতে শুরু করেন ঘুরপথে। কয়েকজন জড়ো হলেই পাহারা দেওয়া যুবকেরা তাঁদের ঘিরে ফেলছিলেন। চলছিল অবাধ কিল-ঘুষি-চড়। দুপুর পর্যন্ত কয়েক দফায় পুলিশের সামনেই মারধর চলে। পুলিশ হামলা ঠেকায়নি বলে বিজেপির অভিযোগ। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি শুদ্ধ করতে যাচ্ছিলাম। অথচ আমাদের কর্মীরাই আক্রান্ত হলেন।’’ তাঁর দাবি, হামলাকারীরা তৃণমূলের।

আরও পড়ুন: জেড প্লাস ঘেরাটোপে বন্দি লেনিন

স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর ও কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘সাধারণ মানুষই প্রতিবাদ করেছেন। আমাদের কোনও লোক ছিল না।’’ স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক ও মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘কারা এ কাজ করেছে জানি না।’’
এর পর বেলা দেড়টা নাগাদ লেক মলের সামনে থেকে শুরু হয় বিজেপির মিছিল। রাসবিহারী মোড়ে মিছিল আটকায় পুলিশ। সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের একটি অংশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কলসিতে জল-দুধ নিয়ে এসে শাঁখ ও উলুধ্বনি করছিলেন মহিলারা। মিছিল ঘিরে যানজট হলেও নতুন করে অশান্তি আর হয়নি।

আরও পড়ুন: মূর্তি-রাজনীতি ঘিরে যাদবপুরে ধুন্ধুমার, ধৃত ২
সন্ধ্যায় একই ভাবে যাদবপুরে একটি হিন্দুত্ববাদী সংস্থার জমায়েতের উপরে হামলা হয়। এ ক্ষেত্রে হামলার অভিযোগ এসএফআই-এর বিরুদ্ধে। যাদবপুরের সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘একদল লোক লেনিনের মূর্তি ভাঙতে যাচ্ছিল। সাধারণ মানুষ তার প্রতিবাদ করেছে।’’ কিন্তু পুলিশ সেই হামলা ঠেকাতে কী করছিল, সেই প্রশ্নটা উঠেছে এখানেও। কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কর্তা সমীর গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘কেন যথেষ্ট বাহিনী দিয়ে ব্যারিকেড করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেল না? বাইরে থেকে লোক এসে মারার সুযোগ পেল কী করে?’’ লালবাজারের মুখে কুলুপ।
তবে মতাদর্শের ফারাক থাকলেও কেন কারও মূর্তির অবমাননা হবে, তা নিয়ে এ দিন ক্ষোভ ব্যক্ত করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যারা এই কাজ করেছে, তারা বাংলার কলঙ্ক।’’ শ্যামাপ্রসাদের মূর্তিতে কালি দেওয়ার অভিযোগে ধৃত পাঁচ যুবক মাওবাদী বলে দাবি করেন তিনি।

— নিজস্ব চিত্র।

অন্য বিষয়গুলি:

Violent TMC Clashes BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE