চৌচির: এ ভাবেই ভাঙচুর চালানো হয় একটি বাড়িতে। শনিবার, উল্টোডাঙায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ
বাড়ি ঘিরে ধরে রণমূর্তিতে অন্তত ১৫০ জন লোক! সদর্পে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলেন কয়েক জন। মুখে ‘দেখে নেওয়া’র, ‘শেষ করে দেওয়া’র হুমকি! একতলার বারান্দা থেকে এর পরে একে একে রাস্তায় ছুড়ে ফেলা শুরু হল কম্পিউটার, সোফা, টেলিভিশন সেট। রাস্তায় দাঁড়ানো পুলিশ তখন নীরব দর্শকের ভূমিকায়!
ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সেই ঝামেলার প্রভাবই দুপুর দেড়টা নাগাদ গিয়ে পড়ল উল্টোডাঙা মেন রোডে। প্রায় ৪৫ মিনিট অবরুদ্ধ হয়ে রইল উত্তর কলকাতার ওই ব্যস্ততম রাস্তা। গাড়ির লম্বা লাইন তখন খন্না মোড় হয়ে হাতিবাগান পর্যন্ত চলে গিয়েছে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝে এর পরে তৎপর হল উল্টোডাঙা ও মানিকতলা থানা এবং লালবাজার থেকে যাওয়া বিশাল পুলিশবাহিনী। মিনিট কয়েকের মধ্যেই রাস্তা সাফ করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডিসি (ইএসডি) দেবস্মিতা দাস জানান, ইতিমধ্যেই দু’জনকে ধরা হয়েছে। বাকিদের চিহ্নিত করা হবে। কোনও ভাবেই গুন্ডাগিরি বরদাস্ত করা হবে না।
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার রাতে। আরিফ রোড এবং জওহরলাল দত্ত লেনের সংযোগস্থলে একটি গলিতে ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করেই গণ্ডগোল বাধে। পুলিশ জানায়, সন্দীপ দাস, বিল্টু, রনি ও অমিত নামে কয়েক জন যুবক ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, বাবলু সিংহ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা গিয়ে বলেন, খেলা বন্ধ করতে হবে। তাঁর বাড়ির পাশে খেলা চলায় সমস্যা হচ্ছে। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ এ নিয়েই দু’পক্ষের বচসা শুরু হয়। অভিযোগ, সেই সময়ে বাবলু ও তাঁর সঙ্গী পাপ্পু সাঁতরা নামে এক যুবক সন্দীপদের মারধর করেন। এর পরে সন্দীপেরা স্থানীয় কয়েক জনকে ডেকে আনেন। সন্দীপদের হয়ে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁরা নিজেদের স্থানীয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিন্দ্য রাউতের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেছেন। বাবলুরাও রতন দাস ওরফে হাবা নামের এক ব্যক্তিকে ডেকে আনেন। পুলিশ জানায়, এই হাবার বিরুদ্ধে আগেও একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছিল তাদের কাছে। বাম আমলের কুখ্যাত দুষ্কৃতী হিসেবেই এলাকায় তাঁর পরিচিতি।
আতঙ্ক: হামলায় আহত ওই বাড়ির এক বাসিন্দা। নিজস্ব চিত্র
এর পরে দু’পক্ষের মারামারিতে ওই রাতে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। উল্টোডাঙা থানা থেকে পুলিশ গিয়ে রাতের মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বাবলু ও পাপ্পুকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, তাঁরা মত্ত অবস্থায় এলাকায় গন্ডগোল বাধিয়েছিলেন। বাবলুর আত্মীয় প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘বাবলুর দাদা দিলীপ ও তাঁর স্ত্রী মালাকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। মালাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। যাঁরা মারলেন, তাঁদের না ধরে পুলিশ বাবলুকে ধরেছে।’’ বাবলু ও পাপ্পুকে এ দিন আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। হাবার খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
শনিবার সকালে এলাকার জনা দেড়শো বাসিন্দা ফের দিলীপদের বাড়িতে চড়াও হন। দিলীপদের ডেকরেটিংয়ের ব্যবসা রয়েছে। তাঁদের বাড়িটি বিয়েতে ভাড়া দেওয়া হয়। এ দিন সেই বাড়িতে ঢুকেই ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ দিন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রেতা-সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডে ওই এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে গেলে তাঁকে ঘিরে ধরেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। সাধনবাবু এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘যাঁদের নাম উঠছে, তাঁরা তৃণমূলের কেউ নয়। তবে হাবা বলে ছেলেটা বহু দিন ধরেই গন্ডগোল পাকাচ্ছে। পুলিশকে বলেছি কড়া ব্যবস্থা নিতে।’’ কাউন্সিলর অনিন্দ্যবাবুও দাবি করেন, ‘‘এর সঙ্গে আমরা যাঁরা রাজনীতি করি, তাঁদের কোনও যোগ নেই। পাড়ার ঝামেলা। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy