রূপালি দাস
প্রতিবেশীদের দাবি, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে মেয়েটির সারা শরীর ভেসে যাচ্ছিল রক্তে। মুখটাও কালো হয়ে গিয়েছিল। অন্য দিকে পুলিশের কাছে শ্বশুরবাড়ি থেকে বলা হয়েছে, বিছানায় শুয়ে জল খেতে গিয়ে গলায় আটকে দমবন্ধ হয়েই সংজ্ঞা হারায় কিশোরী বৌমা।
বধূমৃত্যুর এই ঘটনাটি ঘটেছে ফুলবাগানের শ্রীকৃষ্ণ দাঁ লেনে। এই ঘটনাতেও অভিযোগ উঠেছে শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: জিজ্ঞাসা করা হবে ক্লারার ক্যাবচালককে
পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ শ্বশুরবাড়িতে অচৈতন্য হয়ে পড়ে রূপালি দাস (১৬)। নীলরতন সরকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। এই ঘটনায় রূপালির স্বামী মণীশ, শ্বশুর প্রদীপ ও শাশুড়ি শিপ্রাকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশের অবশ্য দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে শিপ্রা ও মণীশ জানিয়েছেন, বিছানায় শুয়ে জল খেতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে প়ড়ে ওই কিশোরী। পুলিশ শনিবার জানায়, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলেই মৃত্যুর ঠিক কারণ জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক দিনে পরপর বেশ কয়েকটি বধূমৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। আত্মহত্যাই হোক বা মৃত্যুর কারণ নিয়ে থাকুক ধোঁয়াশা, সব ক্ষেত্রেই অভিযোগের অঙুল উঠেছে শ্বশুরবাড়ির দিকে। উঠে এসেছে অত্যাচারের অভিযোগ।
এ ক্ষেত্রেও রূপালির বাবা কিশোরচন্দ্র সাউ এবং পড়শিদের অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে বিয়ের পর থেকে স্বামীর সঙ্গে নানা বিষয়ে মনোমালিন্য হচ্ছিল ওই কিশোরীর। শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদও মণীশের সঙ্গে রূপালির বিবাদ হয়। তার পরে সে বাপের বাড়ি গিয়ে বাবাকে জানায়, মণীশ তাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছেন। রাত ১১টা নাগাদ শিপ্রা বৌমাকে বুঝিয়েসুজিয়ে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসেন।
পড়শিরা জানিয়েছেন, এর কিছু পরেই রূপালির মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা ও কান দিয়ে রক্ত বেরোতে দেখে শিপ্রাই পাড়ার লোকজনকে ডাকেন। তত ক্ষণে ওই কিশোরীর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।
পড়শিরা এ দিন দাবি করেন, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে মেয়েটির চেহারা দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়, তার উপরে শারীরিক অত্যাচার করা হয়েছে। কিশোরবাবুও অভিযোগ করেন, ‘‘বিয়ের পর থেকেই মেয়ের উপরে মণীশ অত্যাচার করতেন। স্বামী বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলায় মেয়ে আমার কাছে এসে শুয়েছিল। শাশুড়ি নিয়ে চলে গেলেন। কিছু ক্ষণ পরে শুনি, মেয়ে আর বেঁচে নেই।’’ রূপালির বাবা জানান, তিনি মণীশ ও তাঁর মায়ের নামে ফুলবাগান থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, ‘‘থানার পুলিশ মেয়ের মৃত্যুর ঠিক তদন্ত করছে না। উল্টে ঘটনাটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।’’ রূপালির শ্বশুর, শাশুড়ি ও স্বামীকে থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানালেন পাড়ার যুবকেরা।
রূপালির শ্বশুরবাড়ি ও বাবার বাড়ির মধ্যে দূরত্ব কুড়ি মিটার। এ দিন শ্রীকৃষ্ণ দাঁ লেনে গিয়ে দেখা গেল, ওই কিশোরীর শ্বশুরবাড়িতে তালা ঝুলছে। রূপালির অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পড়শিরা। পাড়ার লোকজন জানান, সপ্রতিভ ওই কিশোরীর সঙ্গে সকলের সুসম্পর্ক ছিল। স্থানীয় স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ত সে। সামনের বছর মাধ্যমিকে বসার কথা ছিল। কিশোরবাবু জানান, ছোট মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে কালীঘাটে গিয়ে বিয়ে করেছিল। বিয়েতে তাঁর মত ছিল না। তাঁদের গ্রামের বাড়ি ওড়িশার পারাদীপে। সেখানে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখানে গেঞ্জি কারখানায় সামান্য বেতনে কাজ করেন তিনি। স্ত্রীকে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ দাঁ লেনের বস্তিতে থাকেন। তাঁর মা অসুস্থ হওয়ায় স্ত্রীকে কয়েক মাস আগে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। স্থানীয় যুবকেরা জানান, মণীশ একটি অনলাইন কেনাবেচা সংস্থায় কাজ করেন। তাঁর বাবা পেশায় বাসচালক, মা গৃহবধূ।
এ দিন রূপালির বাবার অভিযোগ সম্পর্কে ফুলবাগান থানার ওসি পীযূষ কুণ্ডুর বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘ব্যস্ত আছি। পরে আসবেন।’’ কত ক্ষণ পরে তিনি অভিযোগের জবাব দিতে পারবেন? ওসি-র উত্তর, ‘‘কৈফিয়ত দিতে পারব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy