ফের বির্তকে বন্দর এলাকার তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না। এ বার তাঁর বিরুদ্ধে বন্দর এলাকার এক পার্কিং ঠিকাদারকে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সূত্রপাত্র পার্কিংয়ের জমিকে ঘিরে। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে বন্দর এলাকার ধোবিতলার একটি পার্কিংয়ের জমি মুন্না এবং তাঁর দলবল জোর করে দখল করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। ওই পার্কিংয়ের জমির ঠিকাদার মহম্মদ মুজিমের ছেলে মহম্মদ সাজিদ বাধা দিলে তাঁকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ভয় দেখিয়ে খুনের হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। এর পরেই মুন্না-সহ তাঁর দুই সঙ্গীর বিরুদ্ধে পশ্চিম বন্দর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সাজিদ। এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন মুন্না।
২০১৩ সালে গার্ডেনরিচে হরিমোহন ঘোষে কলেজের নির্বাচনের দিন পুলিশ অফিসার খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মুন্না। সিআইডি-র গোয়েন্দাদের হাতে তাঁকে গ্রেফতারও হতে হয়। বর্তমানে জামিনে রয়েছেন ওই তৃণমূল নেতা। পশ্চিম বন্দর এলাকার যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি মুন্নার অঞ্চল বলে পরিচিত নয়। পুলিশ সূত্রের খবর, বন্দর এলাকায় নিজের প্রভাব বৃদ্ধির জন্যই বিভিন্ন কারখানা-সহ নানা জায়গায় নিজের লোক ঢোকানোর চেষ্টা করছেন মুন্না।
পুলিশ সূত্রের জানা গিয়েছে, মুন্না এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে ওই ঠিকাদার পশ্চিম বন্দর থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও সোমবার রাত পর্যন্ত কোনও মামলা রুজু করেনি পুলিশ। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (বন্দর) সুদীপ সরকার জানিয়েছেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে গোলমাল এড়াতে ওই পার্কিংয়ের জমির সমানে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। তবে হুমকি দেওয়া সত্ত্বেও কেন ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হল না, সে বিষয়ে চুপ লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, বন্দর এলাকার ধোবিতলার ওই পার্কিংয়ের জমির মালিক কলকাতা বন্দর। সেটি দেখভালের দায়িত্ব পান মহম্মদ মুজিম নামে এক ব্যক্তি। চলতি মাসের এক তারিখে তিনি মারা যান। এর পরেই গোলমালের সূত্রপাত। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে সাজিদ জানিয়েছেন, ২ জুন ধোবিতলার ওই পার্কিংয়ের জায়গায় আসে মুন্নার সঙ্গীরা।
পুলিশের কাছে সাজিদের অভিযোগ, ওই সঙ্গীরা তাঁকে ওই পার্কিং লট ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলতে থাকে। এমনকী, তাঁকে মারধরের হুমকিও দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মুন্নার বাহিনী ওই ঠিকাদারের কাছে নিজেদের লোককে ঢোকাতে বলে। কিন্তু তা মানতে চাননি ওই ঠিকাদার। এর পরের দিন নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফের হুমকি দেন মুন্না।
পুলিশের কাছে দায়ের করা লিখিত অভিযোগে সাজিদের দাবি, সদলবল তাঁর কাছে গিয়ে মুন্না হুমকি দেন, ‘আমরা হরিমোহন ঘোষ কলেজে পুলিশকে খুন করিয়ে দিয়েছিলাম। তুই কে রে! তোকে তো টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে দেব। কেউ ঘূণাক্ষরে জানতেও পারবে না।’ মুন্নার ওই হুমকির কথা সাজিদ পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।
সোমবার ফোনে মুন্নার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে কারও কোন ঝামেলা হয়নি। এ রকম কোনও অভিযোগ করা হয়ে থাকলে তা মিথ্যে।’’ তিনি যাঁর ঘনিষ্ঠ, সেই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
গার্ডেনরিচের বাসিন্দা মহম্মদ সাজিদের দাবি, কলকাতা বন্দরের কাছ থেকে পার্কিংয়ের এই জমি লিজ নিয়েছিলেন তাঁর বাবা। বছর দু’য়েক এই লিজ পুনর্নবীকরণ করা হয়নি। সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁর অভিযোগ, মুজিমের মৃত্যুর পরদিনই মুন্নার দলবল এসে, জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য সাজিদকে হুমকি দেয়। পশ্চিম বন্দর থানায় সেই অভিযোগ দায়েরও করেন তিনি। সাজিদের দাবি, থানায় যাওয়ার পরদিনই সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে তাঁর কাছে ফের হাজির হন মুন্না নিজে। অভিযোগ, তাতেও কাজ না হওয়ায় ৩ জুন চরম হুমকি দেন তাঁরা।
পুলিশ জানায়, ওই জমি নিয়ে খোঁজখবর নিতে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে ওই এলাকায় যাতে কেউ না ঢোকে, তার জন্য ব্যবস্থাও নিয়েছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy