বাজেয়াপ্ত ম্যাজিক মাশরুম। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
একেবারে নতুন মাদক — ‘ম্যাজিক মাশরুম’। এক ধরনের মাশরুম, যা কিছুটা বিষাক্তও বটে।
নেট জানাচ্ছে, ভারত, দক্ষিণ আমেরিকা, মেক্সিকো, মায়ানমার ও ইন্দোনেশিয়াতে এর চাষ হয়। এক সময়ে মুনি-ঋষিরা নাকি চিবিয়ে খেতেন। কিন্তু তিতকুটে স্বাদ হওয়ায় এখন চা বা অন্য খাবারের সঙ্গে অথবা চকলেট মিশিয়ে খাওয়া হয়। খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে শুরু হয় হ্যালুসিনেশন। চোখের সামনে ভেসে ওঠে স্বপ্নিল সব ছবি। সঙ্গে খুব হাসি পায়। শরীর বা মস্তিষ্কে যে কোনও সময়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটাতে সক্ষম। মৃত্যুও ঘটতে পারে।
এই প্রথম কলকাতায় পাওয়া গেল মাদক মাশরুম। মাত্র ২.৪৯ গ্রাম।
২০১৫-য় তামিলনাড়ুর কোদাইকানালে প্রথম মিলেছিল ম্যাজিক মাশরুম। ভারতে এ নিয়ে দ্বিতীয় বার। নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) অফিসারেরা শনিবার আলিপুরে হানা দিয়ে বিবেক ও রিষভ শর্মা নামে দুই ভাইকে গ্রেফতার করেন। তাঁদের জেরা করে এলগিন রোড থেকে ধরা হয়েছে দীপ চক্রবর্তী নামে আর এক যুবককে। এনসিবি-র পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, ধৃতদের তিন জনের কাছ থেকেই ম্যাজিক মাশরুম পাওয়া গিয়েছে। পাওয়া গিয়েছে নেশার মাদক এমডিএমএ ট্যাবলেট, ক্রিস্টাল এবং এলএসডি ব্লটও। রবিবারেই তাঁদের আলিপুর আদালতে তোলা হয়েছে।
আলিপুর আদালতেরই বিচারক গত শনিবার ১৫ বছরের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের বাসিন্দা ৩৮ বছরের জামিল খানকে। ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর এন্টালি বাজারের বাইরে থেকে এনসিবি জামিলকে সওয়া তিন কিলোগ্রাম চরস-সহ ধরে। দেড় লক্ষ টাকা জরিমানাও ধার্য হয়েছে জামিলের, অনাদায়ে আরও দু’বছরের সাজা হবে। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘যাঁরা এখন মাদক কেনাবেচা করছেন, এক অর্থে নিজেদের ভবিষ্যত নিয়েই খেলছেন তাঁরা। এক বার মাদক-সহ ধরা পড়ার পরে এই ধরনের সাজা হতে পারে, এটা ভাবছেন না।’’
শনিবার কলকাতায় ধরা পড়া তিন যুবকের বয়সই ২৪ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে। দিলীপবাবু জানান, দীপের মা কলকাতায় নামী একটি রেস্তোরাঁ চালান। বিবেক ও রিষভ দু’জনেই মণিপাল থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্টে স্নাতক। রিষভের এমবিএ পড়তে মুম্বই যাওয়ারও কথা ছিল। এই তিন জনে নিজেরাও নেশা করেন বলে এনসিবি জানিয়েছে। গত ডিসেম্বরে তিন মাদক পাচারকারী ধরা পড়ার পরে টিভি চ্যানেলকে দেওয়া দিলীপবাবুর ইন্টারভিউ-এর ক্লিপিংও তাদের মোবাইল থেকে পাওয়া গিয়েছে।
অভিযোগ, তা দেখার পরেও তাঁরা নিয়মিত শহরের কলেজপড়ুয়াদের মাদক সরবরাহ করে যাচ্ছিলেন।
রবিবার দিলীপবাবু বলেন, ‘‘এত কিছুর পরেও যদি এঁরা সতর্ক না হয়, তবে কীসে হবে আমি বুঝতে পারছি না। সম্ভ্রান্ত, সচ্ছ্বল পরিবারের কমবয়সী সব ছেলে। বাড়িতে বসে বিটকয়েন ব্যবহার করে ডার্কনেটে অর্ডার দিয়ে নেদারল্যান্ডস থেকে এই মাদক আনিয়েছেন। গত দেড় বছর ধরে এ ভাবে বিদেশ থেকে মাদক এনে শহরে ছড়িয়ে দিচ্ছে। নিজেদের মধ্যে যে যোগাযোগ সেটা কোনও ভাবে যাতে রেকর্ডেড না হয়, তার জন্য স্ন্যাপচ্যাটে কথা বলতেন ওঁরা।’’
ডিসেম্বরেই এনসিবি-র হাতে ধরা পড়েছিলেন সল্টলেকের নিলয় ঘোষ ও জেরম ওয়াটসন। দু’দিন আগে পার্ক স্ট্রিটের এক নাইট ক্লাবের ডিজে নিখিল লাখওয়ানি। সূত্রের খবর, বিবেক, রিষভ, দীপের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নিলয়-জেরম-নিখিলদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy