Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
রেড রোড তদন্ত

তিন জনের তিন বয়ান ঘিরে ধন্দে পুলিশ

রেড রোড-কাণ্ডের ঠিক এক সপ্তাহ পরে অভিযুক্ত তিন যুবক সাম্বিয়া, শানু ও জনিকে আলাদা আলাদা ভাবে রেড রোড এবং তার আশপাশে ঘুরিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করলেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। কিন্তু তাতেও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলেন না তাঁরা। গোয়েন্দাদের দাবি, তিন জনের বয়ানে প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:১০
Share: Save:

রেড রোড-কাণ্ডের ঠিক এক সপ্তাহ পরে অভিযুক্ত তিন যুবক সাম্বিয়া, শানু ও জনিকে আলাদা আলাদা ভাবে রেড রোড এবং তার আশপাশে ঘুরিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করলেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। কিন্তু তাতেও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলেন না তাঁরা। গোয়েন্দাদের দাবি, তিন জনের বয়ানে প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে। কে মিথ্যে আর কে সত্যি কথা বলছেন, তা বুঝতে না-পারা পর্যন্ত লালবাজার কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না।

রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়া চলার সময়ে ১৩ জানুয়ারি ভোরে বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসা একটি অডি গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলে বায়ুসেনার কর্পোরাল অভিমন্যু গৌড়কে। সেই ঘটনার মূল অভিযুক্ত সাম্বিয়া। তাঁরই দুই বন্ধু শাহনওয়াজ খান ওরফে শানু ও জনিকেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিন জনেই বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

রেড রোডের ঘটনা নিয়ে প্রথম থেকেই কলকাতা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বক্তব্যে ফারাক ছিল। কলকাতা পুলিশের বক্তব্য, গাড়িতে সাম্বিয়ার সঙ্গে ছিলেন জনি ও শানুও। সেনা বলছে, গাড়িতে ছিলেন এক জন। আবার সানু ও জনি দু’জনেই জানিয়েছেন, পিছনে অন্য একটি গাড়িতে ছিলেন। সাম্বিয়া একাই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। সাম্বিয়া তাঁর অডি গাড়ি নিয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে গেলেও তাঁরা তাঁদের স্কোডার মুখ ঘুরিয়ে অন্য পথে চলে যান। পুলিশের দাবি, অডি গাড়িটি চালানোর কথা স্বীকার করেছেন সাম্বিয়াও। তা হলে পুলিশের সংশয় কোথায়?

লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের তথ্য বলছেন গাডি়তে সাম্বিয়ার সঙ্গে সানি ও জনিও ছিলেন। কোন তথ্যটা ঠিক তা বুঝতেই তিন জনকে আলাদা করে ঘটনাস্থল ও তার আশপাশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।’’ মঙ্গলবার রাতে প্রথমে শানুকে নিয়ে যাওয়া হয় দইঘাটে। ১২ জানুয়ারি রাতে ওই এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় তিন জনের দেখা হয়েছিল বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন। শানুকে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় বিদ্যাসাগর সেতুর একটি অংশে। ওই অংশ দিয়ে খিদিরপুর এবং রেড রোডে পৌঁছনো যায়। বুধবার ভোরে সাম্বিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় ওই এলাকায়। জানতে চাওয়া হয় সে দিন কোথা থেকে তিনি গাড়ি চালিয়ে কোন দিকে গিয়েছিলেন। পরে সকালে জনিকেও আলাদা করে নিয়ে যাওয়া হয় স্ট্র্যান্ড রোডের ওই রেস্তোরাঁয়। জানতে চাওয়া হয় ঘটনার দিন কোন পথে তাঁরা খিদিরপুরে গিয়েছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, স্কোডা গাড়ি চেপে কোন রাস্তা দিয়ে তাঁরা গিয়েছিলেন এ ব্যাপারে শানু এবং জনি দু’রকম জবাব দিয়েছেন। কে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন, তা নিয়েও মতভেদ রয়েছে দু’জনের। সাম্বিয়া আবার আর এক রকম কথা বলছেন। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান দেবাশিস বড়াল বলেন, ‘‘শানু ও জনি যে রাস্তা ধরে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল, ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে গিয়ে তা মিলছে না।’’ তদন্তকারীরা বলছেন, ধোঁয়াশা কাটাতে ফের তিন জনকে রেড রোডে নিয়ে যাওয়া হবে। মুখোমুখি বসিয়েও জেরা করা হবে।

লালবাজারের একটি সূত্র বলছে, শানু ও জনি কী ভাবে কলকাতা ছেড়ে পালিয়েছিলেন সে ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। ১৩ জানুয়ারি সকাল থেকেই শানু ও জনি একবালপুরে ছিলেন। একটু বেলার দিকে সাম্বিয়া সেখানে আসেন এবং কলকাতা ছেড়ে পালানোর কথা জানান। এর পরে তিন জনে মিলে একটি গাড়ি করে সাঁতরাগাছি যান। সেখান থেকে ট্রেন ধরে প্রথমে কোলাঘাট, এবং পরে ট্রেন পাল্টে খড়্গপুর যান। সেখান থেকে ফের ট্রেন ধরে রাঁচি পৌঁছন। রাঁচিতে জনির এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন তাঁরা। জনি থেকে গেলেও অন্যত্র চলে যান শানু ও সাম্বিয়া। সোমবার রাত পর্যন্ত জনি ওই বন্ধুর বাড়িতেই ছিলেন।

সূত্রের খবর, ১৩ জানুয়ারি দুর্ঘটনার পরেই সোহরাবের বড় ছেলে আম্বিয়া মেছুয়ার ফল মান্ডির অফিসে ছুটে এসেছিলেন। ঘনিষ্ট এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘ছোট ছেলে সাম্বিয়ার কীর্তির কথা শুনেও বিচলিত হননি ঠান্ডা মাথার সোহরাব। তিনি লালবাজারের ঘনিষ্ঠ কয়েক জন পুলিশ কর্তাকে ফোন করেন। অফিসে এসে হাজির হন সোহরাবের ভাই শাহনওয়াজও। তার পর দুই ভাই শাসক দলের নেতাদের ফোন করা শুরু করেন।’’

অফিসের টিভিতে তখন সেনা জওয়ানের মৃত্যুর খবর সম্প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। পুলিশের উপর সেনার চাপ রয়েছে। ঘটনার অভিযুক্তদের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানো হবে বলে সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছিল। ফল মান্ডির এক ব্যবসায়ীর কথায়, সাম্বিয়ার অডি গাড়ির ছবিও টিভিতে দেখানো শুরু হয়। একে একে অফিসে হাজির হতে থাকেন সোহরাব ঘনিষ্ঠরা। নিজের চেয়ারে কিছুটা হতাশ হয়েই বসেছিলেন সোহরাব। কিছু ক্ষণ পরে আম্বিয়া ও শাহনওয়াজকে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যান। পরে পার্কসার্কাসে পৌঁছে কয়েক জন বিশ্বস্ত কর্মচারীকে ফোন করে ডাকেন। তার পর থেকে সোহরাবের হদিস নেই। সোহরাবের ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীর কথায়, আম্বিয়াকে নিয়ে কলকাতার কাছেই কোথাও রয়েছেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

redroadcase sambia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE