সৌমেন মালিক। নিজস্ব চিত্র
হাতে ধরা কাচের বোতল। সেটির উপরে চকলেট বোমা রেখে ফাটাতে যায় বছর তেরোর সৌমেন মালিক। বোমাটি ফাটার সঙ্গে ফাটে বোতলের কাচও। কাচের টুকরো ঢুকে যায় সৌমেনের ডান চোখে। আড়াআড়ি কেটে যায় তার চোখের মণি। কেটে যায় কর্নিয়াও।
অস্ত্রোপচার করে কোনও রকমে সেই চোখ বাঁচানো গিয়েছে। তবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মাস দু’তিনেকের মধ্যে ওই চোখে ছানি পড়তে পারে। তখন আবার অস্ত্রোপচার করতে হবে। তবে, ওই চোখে কখনওই আর স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরবে না।
নিষিদ্ধ শব্দবাজি পোড়ানোর ফলে শব্দ ও বায়ুদূষণ নিয়ে চিন্তিত সকলেই। কিন্তু শব্দবাজি হাতে বেপরোয়া হয়ে উঠলে তার পরিণতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ এই ঘটনা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতা থানা এলাকার বনহোগলা গ্রামের বাসিন্দা, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৌমেন। বাবা চাষের কাজ করেন। আর্থিক সংস্থান সামান্য। সল্টলেকের এক চোখের হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়েছে সৌমেনের। গত শনিবার বাড়ি ফিরেছে সে।
সৌমেনের মা সুপ্রিয়া মালিক জানান, ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার, কালীপুজোর দু’দিন পরে। সৌমেন ছিল জয়নগরের নিমপীঠে, মামারবাড়িতে। সকাল সাতটা নাগাদ কয়েকটি চকোলেট বোমা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোয় সে। সৌমেন বলে, ‘‘রাস্তার পাশে খালি বোতল পড়েছিল। মনে হয়েছিল বোতলে বোমা রেখে ফাটালে আওয়াজ বেশি হবে। হাতে বোতল ধরে, উপরে বোমা রেখে ফাটিয়ে দিই।’’
চোখে কাচ ঢুকে যাওয়ার পরে হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে সে। তা-ও হাত উপচে রক্ত পড়ছিল। ওই অবস্থায় সৌমেনকে তার মামা দেখতে পান। স্থানীয় নিমপীঠ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বলা হয়, সেখানে কিছু করা যাবে না। কলকাতায় নিয়ে যেতে হবে। এক পরিচিতের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় সল্টলেকের ওই হাসপাতালের অপথ্যালমোলজিস্ট অভিজিৎ দাসের সঙ্গে। সৌমেনকে সল্টলেকে নিয়ে আসা হলে ওই দিনই অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক জন সরকার।
চিকিৎসক সরকার বলেন, ‘‘দেরি হলে চোখটা নষ্ট হয়ে যেতে পারত। সংক্রমণও হতে পারত। কাচ ঢুকে কর্নিয়া কেটে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচার করে তা জোড়া লাগানো হয়েছে। পরে ছানি পড়বে। সেটা কাটতে হবে। এখন ওই চোখে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি ফিরছে। তবে, তা একেবারে স্বাভাবিক হবে না।’’
অভিজিৎ দাস বলেন, ‘‘মাত্র ১৩ বছরের ছেলেকে বাকি জীবন এই সমস্যা বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে। বাচ্চাদের হাতে এই ধরনের বাজি তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy