এমনিতেই রাজ্যে গণ-পরিবহণের দশা বেহাল। তার মধ্যে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার ট্যাক্সি ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে শহরে। পরের দিন, অর্থাৎ শুক্রবার এক দিনের জন্য সার্বিক পরিবহণ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। বুধবার রাজ্যের বিরোধী শ্রমিক সংগঠন সিটু, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি ও বিএমএস-সহ আটটি সংগঠন এ কথা জানিয়েছে। ফলে পুজোর আগে সাধারণ মানুষের আর এক দফা নাকাল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিবহণমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করবে সরকার।
গত ৭ অগস্ট থেকে আন্দোলন করছেন ট্যাক্সিচালকেরা। ‘পুলিশি জুলুম’ এবং অন্য কিছু দাবিতে ওই আন্দোলন। যাত্রী-প্রত্যাখ্যানের অভিযোগে ২২ জন ট্যাক্সিচালককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে তাঁরা জামিনে ছাড়া পেলেও তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি ওঠে আন্দোলনে। পরে ওই আন্দোলনে যোগ দেয় অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলিও। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে তাঁদের লাগাতার ধর্মঘটের উপরেই যোগ হয়েছে সিটু ও অন্যান্য বিরোধী সংগঠনের ডাকা পরিবহণ ধর্মঘট।
বুধবার সিটুর তরফে অনাদি সাহু বলেন, ৭ তারিখের আন্দোলনের কারণে যে সব চালক ট্যাক্সি চালাননি, তাঁদের পারমিট কেন বাতিল হবে না— এই মর্মে অনেক চালককে চিঠি দিয়েছে রাজ্য সরকার। শান্তিপূর্ণ ভাবে ধর্মঘটের ক্ষেত্রে কেন সরকার পারমিট বাতিলের চিঠি দেবে, এই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “আমরা সরকারকে বলছি আলোচনায় বসুন। তিন দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে আমরা কোর্টে যাব।”
ট্যাক্সিচালকদের লাগাতার ধর্মঘটের সমর্থনে কাল, শুক্রবার রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি পরিবহণে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এআইটিইউসি-র নেতা নওলকিশোর সিংহ জানান, ৭০ হাজার তেলের ট্যাঙ্কারও এই ধর্মঘটে সামিল হচ্ছে। তাঁর আরও দাবি, রাজ্য যতই দমনপীড়ন চালাক, তাঁরা ভীত নন।
যদিও পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ট্যাক্সিচালকদের আন্দোলনের প্রশ্নে আপাতত সরকার অনড়ই থাকবে। ধর্মঘট নিয়ে বুধবারও আলোচনায় বসা বা তেমন কোনও নমনীয় মনোভাব দেখায়নি সরকার। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এ দিন বলেন, “বন্ধ যাঁরা ডেকেছে, সাম্প্রতিক নির্বাচনে তাঁদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। চালকদের বলেছি, ধর্মঘট করবেন না।” ইতিমধ্যে বন্ধের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে মামলা করেছেন এক আইনজীবী। এ প্রসঙ্গে পরিবহণমন্ত্রীর বক্তব্য, “হাইকোর্টের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছি। তবে ধর্মঘটে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সরকার যথাযথ চেষ্টা করব।”
আজ, বৃহস্পতিবারের ট্যাক্সি ধর্মঘটে সিটু-সমর্থিত অন্যান সব ক’টি বিরোধী সংগঠন থাকলেও সামিল হচ্ছে না রাজ্যের তৃণমূল সমর্থিত বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন। তাঁদের সদস্যেরাও এ বারের ধর্মঘটে আদৌ পথে ট্যাক্সি নামাবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, আগের ধমর্র্ঘটের সময়ে এই অ্যাসোসিয়েশনের কিছু সদস্য রাস্তায় ট্যাক্সি নামিয়ে আন্দোলনকারীদের হাতে নিগৃহীত হন। কিছু ট্যাক্সি ভাঙচুরও করা হয়।
পুজোর মুখে পরিবহণ ধর্মঘট করা ছাড়া বিকল্প কোনও পথ কি খোলা ছিল না? জবাবে আইএনটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি রমেন পাণ্ডে এবং সিটু নেতা সুভাষ মুখোপাধ্যায় একযোগে বলেন, “রাজ্য সরকার এই ধর্মঘট আমাদের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে। সরকার যদি যাত্রী-স্বার্থের কথা ভাবত, তা হলে আগেই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যেত।” ইউনিয়নগুলির বক্তব্য, সরকারি পরিবহণে বোনাস হচ্ছে না। এনবিএসটিসিতে (উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা) ৮৯০ জনের চাকরি গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ধর্মঘট ছাড়া উপায় ছিল না তাঁদের।
সাধারণ মানুষ কি এই ধর্মঘটকে সমর্থন করবেন? রমেনবাবু বলেন, “আশা করি, মানবিক কারণে মানুষ এই ধর্মঘট সমর্থন করবেন।” এ দিনই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “সরকার ইচ্ছে করলে আলোচনার মাধ্যমে ধর্মঘট থেকে পরিবহণ কর্মীদের বিরত করতে পারত। কিন্তু সরকার উদ্যোগী হয়নি।” এই ধর্মঘটে ওয়েস্ট বেঙ্গল রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কাস ইউনিয়নও সামিল হচ্ছে বলে রমেনবাবু জানিয়েছেন।
চালকেরা কি লাগাতার ধর্মঘট চালাতে পারবেন? এই প্রশ্ন নিয়ে এ দিন আলোচনা হয় বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে। কারণ, সরকার ও শাসক দল এই ধর্মঘট ভাঙার চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। রমেন পাণ্ডে, অনাদি সাহু দু’জনেরই দাবি ট্যাক্সি চালকদের যে ভাবে পেটে টান পড়ে, তাতে তাঁরা লাগাতার ধর্মঘট চালানোর পক্ষেই রায় দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy