দোকানে কাজ থেকে ছুটি মিলতেই মালিকের স্কুটার নিয়ে লক্ষ্মীপুজোর বাজার করতে বেরিয়ে পড়েছিল সতেরো বছরের কিশোর। বাজারে ঢোকার মুখে রাস্তার ডান দিক থেকে বাঁ দিকে আচমকা ঘুরতেই ধাক্কা লাগল দ্রুত গতিতে আসা তেলের ট্যাঙ্কারের সঙ্গে। পুলিশ জানায়, স্কুটার থেকে ছিটকে পড়ে ওই ট্যাঙ্কারের চাকায় পিষ্ট হয় আকাশ হরি নামে ওই কিশোর। বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ দিকে, ঘটনাস্থলে উত্তেজিত জনতা গাড়িটি ভাঙচুর করে চালককেও বেধড়ক মারধর শুরু করেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মৃদু লাঠি চার্জও করতে হয় পুলিশকে।
শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে বরাহনগর থানার অদূরে বিটি রোডের উপরে। এই ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতার জটলার ছবি নিজের ঘরের সিসিটিভিতে দেখে আইসি রাম মণ্ডল বুঝতে পেরেছিলেন, কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর পরেই আইসি-র নেতৃত্বে বরাহনগর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী তৎক্ষনাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তেলের ট্যাঙ্কারের চালককে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তবে ততক্ষণে ট্যাঙ্কারটির কাচ ভাঙচুর করা হয়ে গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বরাহনগরের যোগেন্দ্র বসাক রোডের বাসিন্দা আকাশ বিটি রোডের ধারের একটি মাংসের দোকানের কর্মচারী। এ দিন দুপুরে কাজের পরে মালিকের স্কুটার নিয়ে নেতাজি কলোনি বাজারে যাচ্ছিলেন লক্ষ্মীপুজোর বাজার করতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই কিশোর বাজারের আগে সিগন্যালে দাঁড়িয়েছিল। সিগন্যাল সবুজ হতেই সে আচমকা ডানলপমুখী বিটি রোডের ডান দিক থেকে বাঁ দিকে মোড় নিতে গেলে পিছনে থাকা তেলের ট্যাঙ্কারটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তাতেই ছিটকে পড়ে চাকায় জড়িয়ে যায় আকাশের দেহ। বেশ কিছুটা ওই ভাবে যাওয়ার পরে স্থানীয়দের চেঁচামেচিতে ট্যাঙ্কারটি থেমে গেলে উত্তেজিত জনতা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। শুরু হয় গাড়ি ভাঙচুর ও ট্যাঙ্কারের চালককে মারধর। পুলিশ গিয়ে প্রথমে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও উত্তেজিত জনতাকে থামানো যায়নি। তড়িঘড়ি রাস্তায় পরে থাকা দেহ তুলে থানা থেকে ভ্যান চালিয়ে নিয়ে যান এএসআই তাপস ঘোষ। স্থানীয় সূত্রে খবর, কার্যত অবরুদ্ধ বিটি রোড ফাঁকা করতে অল্প লাঠি চালায় পুলিশ। যদিও পুলিশকর্তারা লাঠি চার্জের কথা স্বীকার করেননি।
সেই সময়ে ওই বাজারে লক্ষ্মীপুজোর কেনাকাটা করছিলেন বরাহনগরের কাউন্সিলর দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যেতে দেখে তিনি অন্য কাউন্সিলরদের খবর দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোন পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জজ্ঞাল) দিলীপনারায়ণ বসু, কাউন্সিলর বাসব ঘোষ। পুলিশের সঙ্গে তাঁরাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। হাসপাতাল থেকে ময়না-তদন্তের জন্য দেহ আনার পরে যাতে কোনও গণ্ডগোল না ছড়ায়, তার জন্য বরাহনগর থানাতেই থেকে যান ওই তিন কাউন্সিলর। আকাশের দাদা প্রকাশ বলেন, ‘‘সকালে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে বলে গিয়েছিল, পুজোর বাজার করে আনবে। ভাইটাই আর ফিরল না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy