Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

পড়ুয়া-মনে সৃষ্টিশীলতার বীজ বুনছে সামার ক্যাম্প

শুধু সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য নয়, স্পেশ্যাল চাইল্ড বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্যও আয়োজন হচ্ছে ক্যাম্পের।

সৃজনশীল: বিআইটিএমের সামার ক্যাম্পে কচিকাঁচারা। নিজস্ব চিত্র

সৃজনশীল: বিআইটিএমের সামার ক্যাম্পে কচিকাঁচারা। নিজস্ব চিত্র

স্যমন্তক ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০২:৩৬
Share: Save:

বছর পনেরো আগেও গরমের ছুটি মানে ছিল টিভিতে ‘ছুটি ছুটি’। এখন ‘সামার ক্যাম্প’। এমনই বলছেন কলকাতার অসংখ্য স্কুলপড়ুয়ার অভিভাবকেরা।

এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন প্রান্তে গজিয়ে ওঠে ছোট-বড় ক্যাম্প। সেখানে যোগ দেয় পাঁচ থেকে পনেরো— সব বয়সের ছাত্রছাত্রীরা। ছবি আঁকা-গান-বাজনা থেকে রোবোটিক্স কিংবা প্রকৃতি পাঠ— কিছুই বাদ থাকছে না এ ধরনের ক্যাম্পগুলিতে। আয়োজকদের দাবি, গত কয়েক বছরে এমন ক্যাম্পে যোগদানের পরিমাণ চোখে পড়ার মতো বেড়েছে।

শুধু সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য নয়, স্পেশ্যাল চাইল্ড বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্যও আয়োজন হচ্ছে ক্যাম্পের। দমদম অঞ্চলের তেমনই এক সামার ক্যাম্পের শিক্ষিকা সোনালি মাজির কথায়, ‘‘স্পেশ্যাল চাইল্ডদের ক্ষেত্রে সামার ক্যাম্পের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেছেন অভিভাবকেরা।’’

কী হয় সেই ক্যাম্পে? সোনালি বলছেন, ‘‘শিশুরা সামাজিকতার পাঠ পায়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হীনম্মন্যতা। এ ধরনের ক্যাম্পে একই রকমের অনেক বাচ্চা যোগ দেওয়ায় শিশুদের মানসিকতা বদলায়।’’

দীর্ঘদিন ধরে সামার ক্যাম্পের আয়োজন করে আসছে নেহরু চিলড্রেন্স মিউজিয়াম। আয়োজক শিখা মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বছরভর শিশুরা একটা রুটিনের মধ্যে দিয়ে চলে। সামার ক্যাম্প তাদের মনের খোরাক জোগায়।’’ শিখার কথায়, ‘‘বহু শিশুই ভাল গান গায় কিংবা ছবি আঁকে। কিন্তু বুঝে উঠতে পারে না, নিজেদের শৈল্পিক দিকটি কী ভাবে সকলের সামনে তুলে ধরতে হয়। সামার ক্যাম্পে গুণিজনেদের সহায়তায় তারই বিকাশ ঘটে।’’ নেহরু চিলড্রেন্স মিউজিয়ামে নিয়মিত নাটকের ক্লাস নেন সোহিনী সেনগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি বছর সামার ক্যাম্পের দিকে তাকিয়ে থাকি। কারণ, বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটালে শুধু শেখানোই হয় না, অনেক কিছু শেখাও যায়।’’

বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম, সায়েন্স সিটিতেও নিয়মিত সামার ক্যাম্পের আয়োজন হয়। বিআইটিএমের কর্তা গৌতম শীল যেমন বলছেন, আগে ক্যাম্পের বিজ্ঞাপন দিলে জায়গা ভর্তি হতে এক মাস লাগত। এখন এক সপ্তাহের মধ্যেই ভরে যায়। শুধু শহরের ছেলেরা নয়, জেলা এমনকি বিদেশ থেকেও শিশুরা যোগ দিচ্ছে হাতেকলমে বিজ্ঞানের নানা প্রকল্পে। গৌতমবাবুর বক্তব্য, ‘‘অভিভাবকদের মধ্যেও এমন ক্যাম্পগুলি নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়েছে।’’ তার অন্যতম কারণ, বাড়িতে শিশুদের সময় দিতে পারছেন না মা-বাবারা। তবে গৌতমবাবু বিষয়টিকে নেতিবাচক অর্থে ভাবতে চাইছেন না। ‘‘বাবা-মায়েদের সময় কমেছে। কিন্তু সামার ক্যাম্প একটি ভাল বিকল্প।’’

প্রায় একই কথা বলছেন সায়েন্স সিটি কর্তৃপক্ষ। এক কর্তা শুভব্রত চৌধুরী বলেন, ‘‘বছর দশ-পনেরো আগেও অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করতে চাইতেন। এখন সকলে বুঝতে পারছেন, তার বাইরেও একটা জগৎ আছে। এটা মাল্টি টাস্কিংয়ের যুগ। সামার ক্যাম্প বিভিন্ন স্কিল তৈরিতে সাহায্য করে।’’

কারা যোগ দিচ্ছে ক্যাম্পে? সকলেরই বক্তব্য, মধ্যবিত্তের সংখ্যা বেশি। তবে আশার কথা, নিম্নবিত্ত পরিবারেও উৎসাহ তৈরি হচ্ছে। ক্যাম্পগুলির খরচ যেহেতু খুব বেশি নয়, তাদের যোগ দিতে অসুবিধা হচ্ছে না। ফলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটা আদানপ্রদানও ঘটছে।

আদানপ্রদানের দর্শনটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন আর এক সংস্থার আধিকারিক রানা রায়। প্রতি বছর শীতে স্কুলের ছাত্রদের পাহাড়ে ক্যাম্প করাতে নিয়ে যান তাঁরা। ইদানীং সামার ক্যাম্পও শুরু করেছেন। এতই তার চাহিদা। রানার বক্তব্য, দু’টি বিষয়ে তাঁরা গুরুত্ব দেন। বাচ্চাদের মধ্যে পারস্পরিক মেলামেশা এবং প্রকৃতি ও গ্রামের মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠা। গত কয়েক বছরে এই বিষয়গুলি নিয়ে অভিভাবকদের উৎসাহ দেখে তাঁরাও উৎসাহিত হচ্ছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

summer camp Students creativity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE